13.6 C
Toronto
সোমবার, মে ৬, ২০২৪

আমরা ভুলে গেছি অনেক কিছু

আমরা ভুলে গেছি অনেক কিছু
আজ যে মাঠে শিশুরা খেলা করছে এই মাঠ এক সময় পাকিস্তানি মিলিটারিদের দখলে ছিল তখন ঢাকার বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে যুবক যুবতিদের ধরে এনে এই মাঠে বেদম প্রহার করতো

ভেবেছিলাম বাংলাদেশ থেকে ফিরে এসে কিছু ছবি কিছু কথা আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করে নেব। তেমন কিছুই হচ্ছে না। দু’মাস অনুপস্থিতির কারণে এখনো সময়ের ঝড় দেখছি চারিদিকে।
তবুও কিছু কথা থাকে অন্তরে। ইচ্ছে করে আপনাদের দেখাতে। তেমনি একটি অন্তর নিঙড়ানো কথা জানাচ্ছি আজ।

আবৃত্তি শিল্পী শ্রদ্ধেয় লায়লা আফরোজের বাসা যাবার সৌভাগ্য হয়েছিল। তাঁর ঘরে ঢুকে তো মাথা খারাপ অবস্থা। দেয়াল ভর্তি স্মৃতি ছবি আর শিল্পকলার ছোঁয়া। পুরস্কার প্রাপ্তির হাট বসেছে তাঁর ঘরে। একটা একটা দেখছি আর এপাশ ওপাশ করছি। হাঁটতে হাঁটে বারান্দা পর্যন্ত পৌঁছে গেলাম। লায়লা আপা বললেন ঐ যে বাচ্চাগুলো খেলছে ওটা কিন্তু ফিজিক্যালের মাঠ। দেখেন কি সুন্দর খোলামেলা জায়গা।

- Advertisement -

সাথে সাথেই আমার কানে ভেসে এলো গগন বিদারী চীৎকার। বাঁচাও। মা গো… জয় বাংলা.. হে আল্লাহ…
কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম জানি না। লায়লা আপা বললেন আকতার ভাই আসেন চা তৈরি হয়ে গেছে। নিজ হাতে তিনি টেবিলে চা নাস্তা সাজাচ্ছেন।

আমি শুনলাম পানি পানি… জল।

কিছুটা জল নিয়ে ফিরে গেলাম টেবিলে। বললাম আজ যে মাঠে শিশুরা খেলা করছে এই মাঠ এক সময় পাকিস্তানি মিলিটারিদের দখলে ছিল। তখন ঢাকার বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে যুবক যুবতিদের ধরে এনে এই মাঠে বেদম প্রহার করতো। এই জায়গাটাকে জানতাম ‘শা শি ক’ নামে। মানে, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র (কলেজ)। একাত্তর সালে এই প্রতিষ্ঠানটি ছিল পাকিস্তান মিলিটারিদের টর্চার কেন্দ্র। প্রতিদিন জীপ গাড়ি কিংবা ট্রাক ভরে ভরে চোখ বেঁধে আনা হতো বাংলায় কথা বলা বিভিন্ন বয়স ও পেশার মানুষদের।

ছাত্র শিক্ষক, ভাই বোন, বাবা মা এমনকি প্রেমিক যুগলকেও এনে বিবস্ত্র করে এক ঘরে রাখা হতো কখনো। স্বাধীনতার পর শুনেছি মেয়েদের শাড়ী খুলে রাখার মন গড়া যুক্তি। মেয়েরা শাড়ি পেঁচিয়ে যাতে আত্মহত্যা করতে না পারে সে কারণে শাড়ি পরতে দেয়া হতো না। সকালে টর্চারের পর হতো কিছুটা বিরতি। দুপুরে টর্চার করে বিরতি। সন্ধ্যায় টর্চার করে বিরতি। রাতে টর্চার করে বিরতি। এই ছিল প্রতিদিনের রুটিন। এই মাঠে যদি কাউকে কখনো এনে দাঁড় করানো হতো তখন কা কা শব্দ করে উড়ে যেত দলবদ্ধ কাক। লায়লা আপা নিজেও এসব জানেন এবং প্রতিদিন এক কাপ চা হাতে নিয়ে মাঠটার দিকে তাকিয়ে থাকেন।

সেদিনও শুনে এলাম কিছু কাকের চীৎকার। আমরা ভুলে গেছি অনেক কিছু। হয়তো ভুলে নাই নতুন প্রজন্মের কিছু কাক। ‘শাশিক’ এর মাঠ।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles