13.5 C
Toronto
রবিবার, মে ১৯, ২০২৪

হাঁটু জলে নামি কন্যা হাঁটু মাজন করে

হাঁটু জলে নামি কন্যা হাঁটু মাজন করে
মনে রাখা দরকার সমাজের পচন ঠেকাতে কুরুচীপূর্ণ রাজনীতি ও সংস্কৃতি চর্চায় সিলেক্টিভ প্রতিবাদ করে সিলেক্টিভ সমর্থন করে একই রকম খারাপ কাজে কাউকে সমর্থন কাউকে প্রতিবাদ করে আর যাই হোক সুরুচিপূর্ণ জাতি গড়ে তোলা যায় নাছবি ইতারা গিয়ারডাট

আগেই বলেছিলাম হিরো আলমকে বেশীরভাগ সচেতন মানুষ সমর্থন করেন একটা প্রতিবাদ হিসেবে যেমনটি ঘটেছিল ১৯৯০ সালে, সিলেট সদরের মত একটি অগ্রসরমান উপজেলায় অনেক কথিত শিক্ষিত ও তথাকথিত বনেদী রাজনৈতিক নেতাদেরকে একটা শিক্ষা দিতে সেদিন সিলেটের জনগণ নেগেটিভ সমর্থন দিয়ে ডাব মার্কায় বিপুল ভোটে বিজয়ী করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছিল ছক্কা ছয়ফুরকে।
সেটা ছিল শয়তানি রাজনীতির বিরুদ্ধে একটা প্রতীকি প্রতিবাদ। যার অনেক অন্তর্নিহিত অর্থ ছিল। এর একটা অর্থ ছিল, যে জনগণের নাম ভাঙিয়ে, সারাদিন জনগণ জনগণ জপে জনগণের সাথেই প্রতারণা করা হয়, ঠকানো হয়, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হয়, জনগণের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়, জনগণের সম্পদ লুট করা হয়, জনগণকে মুলত চাকর বাকর আর নিজেদেরকে রাজা রানী ভাবা হয় সেই জনগণ ইচ্ছে করলে, জোটবদ্ধ হলে পথের ধারে জন্মানো অবহেলিত বুনোফুলকেও মাথার মুকুট বানিয়ে ফেলতে পারে।

আর কথিত নষ্ট রাজনীতির ধারক বাহক ও তার পৃষ্ঠপোষক নষ্ট তপ্লিবাহক সাংস্কৃতিক নেতা কর্মী, পঁচা গলা দালাল লেখক, সাংবাদিক, পেশাজীবী এবং বুদ্ধিজীবীদেরকেও নিমিষেই ছুড়ে ফেলে দিতে পারে।
হিরো আলমের কোন গান আমি শুনিনি, কোন নাটক বা সিনেমার দৃশ্যও আমার চোখে পড়ে নি। তার কোন ভাঁড়ামি বা বিকৃত নৃত্য প্রদর্শনীও দেখা হয় নি কখনো। কিন্তু দেখেছি ‘লাখে লাখে মারে মরদো কাতারে কাতার, গণিয়া দেখিল মাত্র চল্লিশো হাজার’ এর পুঁথির সেই বাক্য গুলির মত বিরোধী রাজনীতির বিকলাঙ্গ আস্ফালনের মাঝে ঐ শুকনো, কালো বেটে, গ্রাম্য ভাষায় কথা বলা এক যুবকের শাসক ও শোষক গোষ্ঠীর চোখে চোখ রেখে এমন এক চ্যালেন্জ ছুড়ে দেয়া যা ক্ষুদ্র আকারে হলেও বিশ্বব্যাপি স্বজাতির মধ্যে আলোড়ন তুলতে পেরেছে, দালাল শ্রেনীর চাটুকারদের ভুঁয়া আত্মঅহমিকাকে নাড়িয়ে দিতে পেরেছে।

- Advertisement -

আপাতত এখানেই থামতে চেয়েছিলাম। তবে আবারও বলি, হিরো আলম হিরো নাকি জিরো, ডিশ ব্যবসায়ী নাকি ডিম বিক্রেতা, কত কুরুচিপূর্ণ গান গায় বা অভিনয় করে সেসব আমাদের বিবেচ্য নয়, রুচিও নয়, রুজিও নয়। সামান্য জীর্ণ শীর্ণ খর্বাকৃত একজন সাবেক ডিশ ব্যবসায়ী যখন একাই যুগ যুগ ধরে চলে আসা মিথ্যার বেসাতী করা ভন্ড রাজনীতিকে চ্যালেন্জ ছুঁড়ে দিয়ে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে, ওরে অবুঝ, ওরে আমার কাঁচা, তোরা কি জানিষ না, দেশের যত খারাপ জিনিষ নিয়ে আজ আলোচনা হয়, আক্ষেপ হয় তার সকল কিছুর মুলে এই নষ্ট রাজনীতি ও রাজনীতিবিদেরা, যাঁদের সকাল শুরু হয় মিথ্যা দিয়ে, রাতে ঘুমুতে যায় মিথ্যার বেসাতী দিয়ে সেই তারাই আবার মধ্য দুপুরে “দেশ আজ রসাতলে কেন গেল?” শিরোনামে সভা সেমিনারে ভাষণ দেয়, সেই ভাষণ আবার পত্রিকার হেডলাইন হয়, টিভির শীর্ষ নিউজ হয় আর ফেসবুকে শেয়ারের বন্যা বইয়ে দেয় যা হাস্যকর বলতেও দ্বিধাগ্রস্হ হয়ে যাই।

মামুনর রশীদ সাহেব রুচির প্রশ্ন তুলেছেন। ২০২৩ সালে একজন হিরো আলমের কার্যকলাপ দেখে তিনি নিজের জাত গোষ্ঠীতে একজন হিরো আলমের আবির্ভাব দেখে রুচির আত্মসম্মানে আঘাত পান, তাকে জিজ্ঞেস করি, আশির দশকে নাট্যকার এস এম সোলায়মানের ইংগিত নাটকটি কি আপনার চোখে পড়ে নি? অর্ধ উলঙ্গ নায়িকা অন্জু ঘোষের ঠ্যাঙ দুটো নদীর জলে ডুবিয়ে দুই হাত দিয়ে কাপড় উচিয়ে হাঁটু কচলানোর ইবনে মিজানের সেই কুরুচীপূর্ণ সিনেমার দৃশ্যের গানের কলি, “হাঁটু জলে নামি কন্যা হাঁটু মাজন করে” দৃশ্যটি কি তিনি তৎকালীন সময়ের সাংস্কৃতিক জগতের রুচীর অধঃপতনের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছিলেন? সেটা কি এস এম সোলায়মান চোখে আঙুল দিয়ে সেই তিন যুগ আগে দেখিয়ে দেন নি?

মনে রাখা দরকার, সমাজের পচন ঠেকাতে কুরুচীপূর্ণ রাজনীতি ও সংস্কৃতি চর্চায় সিলেক্টিভ প্রতিবাদ করে, সিলেক্টিভ সমর্থন করে, একই রকম খারাপ কাজে কাউকে সমর্থন, কাউকে প্রতিবাদ করে আর যাই হোক সুরুচিপূর্ণ জাতি গড়ে তোলা যায় না। নিজে অন্ধ বলে তো প্রলয় বন্ধ থাকে না। অবশ্য বালুতে মুখ গুজা উট হলে কারো বলার কিছুই নাই।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles