এই লোকটার কী অপরাধ?
হুজুর এই লোক সূর্যকে ভক্তি করে, তাকে আলোর উৎস মনে করে। সূর্যের সামনে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
এটা কি অপরাধ?
হুজুর, আলবাত অপরাধ।
শোন মন্ত্রী, এই দেশটা সবেমাত্র দখল করেছি। প্রথম প্রথম প্রজাদের বিরুদ্ধে যাওয়া ঠিক হবে না। আমি কিন্তু দীর্ঘদিন এখানে থাকতে চাই।
হুজুর যা বলছি জেনেশুনেই বলছি। আপনার ভালোর জন্যই বলছি। সহজ সরল পথে লোকজন চলতে চায় না। বাঁকাকে আরও বাঁকা করে দিলে সুবিধা হয়।
আচ্ছা তাহলে সূর্যকে নিষিদ্ধ করে দাও।
এর কী অপরাধ?
হুজুর এই লোক চন্দ্রকে ভালোবাসে।
চন্দ্রকে নিষিদ্ধ করে দাও
এর অপরাধ?
হুজুর এ গাছের সাথে কথা বলে, গাছের নিকট ফল ফুল প্রার্থনা করে।
আজ থেকে গাছও নিষিদ্ধ।
আর এই বেটা?
হুজুর এ সমুদ্রকে নিয়ে কবিতা লেখে।
কী সর্বনাশ! সমুদ্র! কবিতা! সব নিষিদ্ধ।
আজ এই পর্যন্ত। বাকী বিচার অন্যদিন হবে। এবার রাজপ্রাসাদে চল।
একি! এতো অন্ধকার কেন, আলো কোথায়? এতো গরম লাগছে কেন মন্ত্রী?
হুজুর শুনলাম, অপমানিত হয়ে সূর্য সরে গেছে। যাবার বেলায় বলে গেছে, যে দেশে তার কদর আছে এবং যে দেশ তাকে ভক্তি করবে এখন থেকে সেই দেশেই থাকবে। একই কথা বলে গেছে অন্য সবাই।
চন্দ্র দেখা দেবে না তাই লুকিয়ে আছে।
গাছেরা গেছে বনে।
সমুদ্রও শুঁকিয়ে গেছে।
এখন কী হবে?
হুজুর, এখন আমরা কিছুই দেখতে পাবো না। এখন থেকে আমরা শুধু নিজেদের দেখবো। আমাদের চোখের কাজ শেষ। আমারা মোটামুটি অন্ধ।
মানে কী?
এখন থেকে আলো পাবো না। বাতাস পাবো না। পানি পাবো না। শুধু কথা শুনবো। প্রশংসা না পেলে ওরা কেউ সার্ভিস দেবে না বলে গেছে। একজন নাকি বলে গেছে কষ্ট করে আমরা তোমাদের প্রয়োজন মেটাবো, নিজেদের উজাড় করে তোমাদের বাঁচিয়ে রাখবো আর তোমাদের প্রশংসায় আমাদের নাম থাকবে না। ভুলেও আমাদের নাম উচ্চারণ করবে না। কৃতজ্ঞতা বলে তোমাদের তো কিছু নেই। এখন তোমরাই গাছ হয়ে দেখাও। এখন থেকে নিজেদের মধ্য সমুদ্রের পানি খুঁজে নাও। শরীরের রক্ত চর্বি গলিয়ে আলো তৈরি করো। এসব যদি করতে না পারো তবে যারা আমাদের প্রশংসা করে তাদের অন্তত:পক্ষে ভর্ৎসনা করো না।
ওহে মন্ত্রী, তাহলে বশে রাখার মোহ ছড়াবে কীভাবে?
হুজুর এই দেশে একসময় পিপীলিকার নামেও বৈষম্য করা হতো। লাল আর কালো পিঁপড়েকে দুই জাত করে ফেলেছিল। পানি আর জল দুইভাগে বিভক্ত ছিল। এরা বিভেদ খুব পছন্দ করে। ইচ্ছে করলে আমরা সেই নীতিমালা বজায় রাখতে পারি।
কেমন করে তা করবে মন্ত্রী?
যেমন ধরুন, গরু ছাগল রসুন পেঁয়াজ এসব বিষয়ে কবিতা রচনা করতে উৎসাহ দেবো। গান গাইতে বলবো মরুময় কণ্ঠে। সুখের নাগাল সরিয়ে নেব সত্তর গজ। উনসত্তর গজের মধ্যে যা কিছু পাবে তাকে অবজ্ঞা করতে শিখিয়ে দেবো।
সাবাস মন্ত্রী, নাই কাজ তো কৈ ভাজ।
হুজুর ওটা কৈ না খৈ হবে।
মন্ত্রী, এখন থেকে কৈ আর খৈ এর বিভেদ উঠিয়ে দাও। যাহা কৈ তাহাই খৈ। ঠকের মুল্লুকে চিৎকার চেঁচামেচি এবং প্যাঁক প্যাঁক করতে পারলে বিভ্রম ছড়ান মোটেই অসম্ভব নয়। সত্যি দেশ শাসন যে এতো সহজ আগে জানতাম না।
নতুন নাটক ‘ঠকের মুল্লুক’ এর অংশ বিশেষ।