16.5 C
Toronto
বুধবার, মে ৮, ২০২৪

ঝরাপাতা দেখলে আমার গাছের জন্য মন খারাপ হয়

ঝরাপাতা দেখলে আমার গাছের জন্য মন খারাপ হয় - the Bengali Times
ছবিইভানগি তেরিগাছি

কিছুদিন অসুস্থ হয়ে চিকিৎসকের নির্দেশে মোটামুটি বিছানাতে বিশ্রামে থাকতে হয়েছিল। কম্পিউটারের সামনে বসতে পারছিলাম না, কিছু লেখালেখি কিংবা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় কাজের জন্যও। সেজন্য মনটা অনেক খারাপ ছিল। আমি এমনিতেই সামান্য কারণেই মন খারাপ করার মানুষ। হৃদয়ের মন খারাপের পাখিটা সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকে আমাকে মন খারাপ করিয়ে দেবার জন্য।

ঝরাপাতা দেখলে আমার গাছের জন্য মন খারাপ হয়। সাথীহারা পাখির ব্যাকুলতা দেখলে আমার মন অস্থির হয়ে ওঠে। কোনো শিশুর করুণ চেহারা দেখলে আমার বুকের ভেতর কষ্টের প্রবাহ বইতে থাকে। আর বড় রকমের কোনো খারাপ খবর শুনলে আমি হয়ে পড়ি শয্যাশায়ী। এ হলাম আমি।

- Advertisement -

আমার এই কম্পিউটারে বসতে না পারার ব্যথাটা আমার বিদেশিনী পুত্রবধূ হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছিল। আমার পুত্রবধূ ‘ইদেল’ নামের মেয়েটি ভারী মিষ্টি একটি মেয়ে। ইদেল আমার জন্য কিনে আনলো সুন্দর শৈল্পিক চিত্রে বাধানো একটি মোটাখাতা এবং তার সাথে মিলিয়ে একই চিত্রে অঙ্কিত একটি কলম। ইদেল আমাকে অনেক মমতামাখা কণ্ঠে বললো, মা যতদিন তুমি কম্পিউটারে যেতে পারবে না ততদিন এই কলম দিয়ে এই খাতাতে লিখবে তোমার মনের কথাগুলো। সেদিন ইদেলের সুচিন্তিত উপহার ও আমার অনুভূতি অনুভব করা দেখে মনটা খুশিতে ভরে উঠেছিল। আমি খাতাটা খুলে কিছু চিন্তাভাবনা না করেই প্রথম পাতাতে লিখে ফেললাম ‘জীবনের বর্ণমালা’।
লিখতে শুরু করলাম জীবনের বর্ণমালা। জীবনের কথা, জগতের কথা, মানুষের কথা, আমার নিজের কথা লিখতে থাকলাম একে একে। লিখতে লিখতে দেখলাম বেশ অনেকগুলো লেখা লিখে ফেলেছি। ইদেল রোজ এসে দেখতো আমি কতোগুলো পাতা শেষ করেছি লিখে। বাংলা ভাষা না জানা মেয়েটি আমার বাংলা লেখার প্রতি আগ্রহ দেখে আমি আবারো মুগ্ধ হলাম।

আমার জীবনের ভাবনায় কখনো ছিল না আমি লিখবো এবং আমার লেখা দিয়ে বই প্রকাশ করবো। সংসার করে, ঘরে বাইরে কাজ করে, ছেলেমেয়েদের দায়িত্ব, সামাজিকতা রক্ষা করে একটি মেয়ে নিজেকে লেখিকা হিসাবে গড়ে তোলা খুব সহজ কাজ না। যখন সংসারের কোনো কাজই অবহেলা করা যায় না তখন স্বাভাবিকভাবেই লেখার কাজটুকু অবহেলিত হয়ে পড়ে। তখন মনে হয় একটু লিখতে ইচ্ছা করে বলেই কোনোভাবে একটু লেখা। যার ফলে সংসারী মহিলাদের উপরে ওঠার সিঁড়িগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হতে থাকে। সমাজ নারীদের জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, ‘হে নারী হয় তুমি সংসারী ভাল রমণী হবে, না হলে জীবনের উন্নতির শীর্ষে উঠবে। দুটো কাজ তোমাকে করার অনুমতি দেয়া হলো না। ’ তাই দেখা যায় কোনো উচ্চাভিলাষি কিংবা সিঁড়ির উঁচু আসনে বসা নারীদের সংসার করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

জীবনের অনেক অভিজ্ঞতা সমাজের নানা অসঙ্গতা আমার মনে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। আমি লেখতে শুরু করি নানারকমের নিরীক্ষামূলক লেখা। বিভিন্ন পত্রিকা ম্যাগাজিনে ও অনলাইন পত্রিকাতে ছাপা হতে থাকলো আমার লেখা। ধীরে ধীরে লেখক হিসাবে সুপরিচিত হয়ে উঠলাম টরন্টোর বুকে। তখননো বই বের করার কোনো স্বপ্ন আমার মনে বাসা বাধেনি। আমার একজন লেখক বন্ধুর অনুপ্রেরণা উৎসাহে ভাবতে লাগলাম, মন্দ হয় না তো আমার কিছু লেখা দিয়ে একটা বই প্রকাশ করলে। সেই ভাবনা থেকেই আমার প্রথম বই প্রকাশিত হয়, ‘নির্বাকের বাক্যালাপ’ ২০১১ সালের বইমেলাতে ‘আগন্তুক’ প্রকাশনী থেকে। ২০১৩ সালের বইমেলাতে প্রকাশিত হয় আমার ছোট গল্পের বই, ‘আকাশের ওপারে আকাশ’ আগামী প্রকাশনী থেকে। চিঠির প্রতি আমার আকর্ষণ চিরদিনের। চিঠি পড়া, চিঠি লেখা আমার খুব আনন্দের ব্যাপার ছিল, যখন চিঠির প্রচলন ছিল। চিঠি লেখার প্রচলনটা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়াতে অনেক কষ্ট অনুভব করতাম। সে কষ্ট সে ভাবনা থেকে লিখলাম পত্র উপন্যাস ‘মেঘের ভেলায় ভেসে’। এই বইটি প্রকাশিত হয় ২০১৪তে বইমেলায় আগামী প্রকাশনী থেকে।

তারপর তিনবছর আমি আবার নীরব। টুকটাক লেখা লিখলেও বই প্রকাশের ভাবনা আমি আর ভাবিনি। সংসারের নানারকম দায়িত্বে আবারো আমি বাধা পড়ে গেলাম। পুত্রবধূ ইদেল আমার মনে সে উৎসাহ আবার জাগিয়ে তুললো লেখার খাতা এবং কলম উপহার দিয়ে। ছোট বড় কিছু লেখা ভ্রমণকাহিনী এবং কিছু কবিতা নিয়ে তৈরি করে ফেললাম আমার চতুর্থ বই ‘হৃদয়ের বর্ণমালা’।

ম্যাল্টন, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles