13.4 C
Toronto
শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪

জগাখিচুড়ি

জগাখিচুড়ি - the Bengali Times
ফাইল ছবি

সংগ্রামী ভাই ও বোনেরা, আজকের এই রেসিপি শুধুমাত্র তাদের জন্য; যারা রান্না শিখবে শিখবে করেও সাহসের অভাবে চুলায় হাঁড়ি বসাতে পারেননি। আবার যাদের সবেমাত্র গোঁফ উঠা শুরু হয়েছে, যারা সুযোগ পেলেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাজায় দুই হাত রেখে কাঁধ ডানে বামে ঘুরিয়ে নিজর দিকে চুমা ছুড়ে। কিংবা বিয়ে করে ধরা খাওয়া লাট সাহেব; বা যার শেষ বয়সে বৌ পালিয়েছে বাপের বাড়ি; তারা উপকার পাবেন।

উপকরণ
১. চাউল এক/দেড় পট
২. বিভিন্ন প্রকারের যেকোনো সবজি
৩. মসুরের ডাল আধা পট থেকে এক পট
৪. যেকোনো মশলা আধা চা চামচ থেকে শুরু করে এক চামচ করে [ভয় নাই, সম্পূর্ণ দায়ভার এই জাভেদের]
৫. তেল, লবন।

- Advertisement -

প্রণালী:
এই ঢলঢলে নরম খিচুড়ি হজমে সহায়ক, রান্না সহজ আর পুষ্টিতে ঠাসা।
আল্লাহ তায়ালা কিভাবে যেন বাংলাদেশের মানুষকে খাদ্যে মিলায়ে দিছে। মাটিতে সবজি ফলে অফুরন্ত, ঘরে শুধু একটু ডাল আর চাল থাকলেই হলো। রান্নাঘরের আনাচে কানাচে খুঁজলে এক হাড়ি সবজি পাওয়া যাবে।
শুধু খাবারের বেলায় না, মানুষের ব্যাপারেও সৃষ্টিকর্তা মিলায়ে দেয়। আমার এক পরিচিত আপার নাম বুলবুলি; তার বরের নাম বুলবুল। আমার খালাতো বোনের নাম নাসিমা। সে যেই লোককে বিয়ে করছে, তার নাম নাসিম। আমার এক আত্মীয় খুব কৃপণ, সে বিয়ে করেছে একেবারে হাড় কিপ্টা। আমার এক বন্ধু এতই ধুরন্ধর ভাই রে ভাই.. সে বৌ পাইছে চিটার। ওদিকে আমার এক কাজিন জনম বোকা, আর তার বৌ এক্কেরে বোকার হদ্দ..
যাই হোক, মূল পর্বে আসি।

সকালে ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে যাওয়ার আগে হাত ধুয়ে নিবেন; রাতে হাত কোথায় থাকে ঠিক নাই। নখ ছোট রাখবেন। এক হাঁড়ি [প্রায় আড়াই লিটার] পানি চুলায় গরমে দিয়ে তারপর বাথরুমে ঢুকবেন; সিস্টেম লস কমবে। ছোট কাজ সেরে বের হলে দেখবেন পানি হালকা গরম হইছে, বড় কাজ হলে দেখবেন পানি ফুটতেছে। সবার আগে আধা পট থেকে এক পট মসুরের ডাল ধুয়ে ওই পানিতে ছেড়ে দিন। তারপর এক থেকে দেড় পট চালও ধুয়ে ছেড়ে দিন।

এইবার যত প্রকারের সবজি আছে, সব ইকটু ইকটু করে কেটে দিন। সাইজ ছোট হলে ভালো, বড় হলে আরো ভালো। আর মাঝারি হলে পারফেক্ট! এইবার সব মশলা একটু একটু করে দিতে থাকেন। আরে ভাই, কনফিডেন্টলি দেন তো? বুকে সাহস আনেন!
এইবার লবন আর তেল দিয়ে ঘুঁটা। তেল না দিলেও হবে, ইচ্ছা। হাঁড়ি ঢেকে মিডিয়াম আঁচে দিন। প্রেশার কুকার হলে আরও ভালো। হাঁড়ির তলা যেন ধরে না যায়, সেজন্য আশি পার্সেন্ট সিদ্ধ হয়ে গেলে খুনতি দিয়ে তলা চেঁছে দিবেন পাঁচ মিনিট পর পর।

ব্যাস! পানি বেশি কমে আসলে এক মগ গরম করে ঢেলে দিবেন। এই খিচুড়ি হবে অনেকটা জাও এর মতন। আর যারা ভাত/খিচুড়ি ঝরঝরে না হলে খেতে পারেন না, থালা ছুড়ে মারেন; তারা দয়া করে এই পোস্ট কষ্ট করে আর না পড়ে হোটেলে কিনে খান।

সবচেয়ে রাগ লাগে কখন জানেন? যখন দেখি সুইটিগুলা আড্ডায় বলে, “এ মা জানিস, আমি কিচ্ছু রান্না পারি না; সেদিন ডিম পোচ করতে গিয়ে কুসুম ভেঙে ছিঃ ছিঃ!”।
যেভাবে খাবেন:
এ খিচুড়ি এমনিই খাওয়া যায়।

তবে ইচ্ছা হলে সাথে ডিম ভাজি করে নিবেন। না কি সেটাও বলে দিতে হবে? আচার থাকলে নেন, আর যদি পারেন কয়েক ফালি বেগুন চাকা করে কেটে হলুদ লবন মাখায়ে ভাজবেন। বেশিরভাগ মানুষ অল্প হিটে বেগুন ভাজতে গিয়ে নরম আর তেল চুপচুপা করে ফেলে। বেগুন চাকা সবসময় হাই হিটে তেল গরম হলে তারপর ছাড়বেন। মুচমুচে হবে আর তেলও কম টানবে। আর যদি অলস না হন, কয়েকটা আস্ত শুকনা মরিচ গরম তেলে আধা মিনিট ভেজে নিয়ে ঠান্ডা করলে দেখবেন মচমচে হয়ে গেছে। তখন সেটা আধা চা চামচ লবন ছিটিয়ে আঙ্গুল দিয়ে ডলে গুঁড়া করে পেঁয়াজ কুচি আর সর্ষে তেল দিয়ে চটকিয়ে মাখিয়ে নেন, দেখেন ঝালের মজা! লাক্সারি খাবার একেই বলে। ফল পাবেন পরেরদিন সকালে। যখন বাথরুম সেরে এসে দেখবেন চুলায় চড়ানো চায়ের পানি ঠান্ডাই আছে। জাভেদকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা পাবেন না!

FAQ [Frequently Asked Questions]
প্রশ্ন: কতক্ষন চুলায় রাখবো?
উত্তর- যতক্ষণ না ডাল আর চাল একদম গলা গলা হয়ে যাবে, ততক্ষন।
প্রশ্ন: মেহমানদের দেওয়া যাবে?
উত্তর- না দেওয়াই ভালো, ওদের মধ্যে লাট সাহেব থাকলে মুখ প্যাঁচার
মতো করবে।
প্রশ্ন: মসুরের ডাল যদি না থাকে?
উত্তর- যেকোনো ডাল দিয়ে হবে, তখন ফুটানো পানিতে আগে ডাল দিয়ে
সিদ্ধ করে নিবেন, কারণ অন্য ডাল সিদ্ধ হতে সময় বেশি লাগে।
প্রশ্ন: ডাল না দিয়ে হবে?
উত্তর- এ ভাই.. মশকরা করার জায়গা পান না?
প্রশ্ন: ভাইয়া, দেখতে কেমন কেমন যেন লাগে..
উত্তর: তুমি ছানা জিলাপি খাও না সোনা? দেখতে কিসের মতো?
প্রশ্ন: ভাইয়া, শক্ত খিচুড়ি করা যাবে না?
উত্তর: এজন্য শুরুতেই বলে নিছিলাম, এইটা পাতলা। নেক্সট..

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles