10.4 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪

প্রথম বইটির প্রতি প্রচন্ড মমত্ব অটুট রয়েছে আজো আমার

প্রথম বইটির প্রতি প্রচন্ড মমত্ব অটুট রয়েছে আজো আমার
সৈয়দ ইকবাল

৮ সেপ্টেম্বর দৈনিক সমকালের শুক্রবারের আয়োজন ‘কালের খেয়া’তে বেরিয়েছে কুশল আর মৃত্যুবুড়ো আমার প্রথম বই নিয়ে লেখাটি। ৪১ টি বই প্রকাশিত হওয়ার পরেও প্রথম বইটির প্রতি প্রচন্ড মমত্ব অটুট রয়েছে আজো আমার। শিশু একাডেমি থকে প্রকাশের পর তিনবার হাজারে-হাজার কপি সংস্করণ হয়ে বেরিয়ে সব শেষ হয়েছে সেই কবে! এ বছর স্বনামধন্য লেখক আনিসুল হক ও তার সুযোগ্যা স্ত্রী মেরিনার অনুরোধে বইটি ‘প্রথমা’কে দিয়ে দিলাম। যখন প্রথম সংস্করণ বেরিয়ে ছিলো ড,হায়াৎ মামুদ তখনকার একমাত্র সাপ্তাহিক ‘বিচিত্রা’য় দুই পৃষ্ঠা লিখে ছিলেন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে পৌঁছাতে বইটি পড়ে তাঁর বন্ধু সন্ধানী পত্রিকা সম্পাদক গাজী শাহাবুদ্দিনকে বলে ছিলেন ছেলেটির সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চাই। ফোনে যোগাযোগ হতে বলে ছিলেন-তোমার জন্যে আমার বালিগঞ্জের আবাসের দ্বার সদা অবারিত থাকবে।কবি আসাদ চৌধুরী আক্ষেপ করে বারবার বলেন – কুশল আর মৃত্যুবুড়োর মত বই কেন ইংরেজীতে এখনো অনুবাদ হয়নি! সমকাল কালের খেয়ায় এক পৃষ্ঠা কি লিখলো ইচ্ছা হলে পড়তে পারেন।পাঠের সুবিধার জন্যে সরাসরি ছাপার কম্পোজ এরপর দিলাম >>>>>>> দেশ স্বাধীন হওয়ার পর চট্টগ্রামে জমকালো সাহিত্য পত্রিকা বের হবে; সম্পাদক-কবিবন্ধু আমাকে সঙ্গে নিয়ে হন্যে হয়ে ঘুরছেন তখনকার তরুণ স্বনামধন্য এক লেখকের পেছনে, একটি গল্পের জন্য। লেখক আজ-কাল করে আট দিন ধরে ঘোরাচ্ছেন।

- Advertisement -

এক সন্ধ্যায় সাধুর মিষ্টির দোকানে লেখক-কবি আড্ডায় সম্পাদককে বললাম, ‘আমিই একটা গল্প লিখে দিই!’ সবার সে কী তাচ্ছিল্যের হাসি। হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে অপমানে কেঁদে রাস্তায় বসে পড়েছিলাম। কবিবন্ধু স্বপন দত্ত পিঠে হাত বুলিয়ে বলল, ‘এক রাত এক দিন আছে তোমার হাতে। গল্প লিখে আগামীকাল সন্ধ্যায় নিয়ে এসো আড্ডায়।’ জীবনে সেই প্রথম বাংলা গল্প-উপন্যাসে পড়া স্বপ্নের শহর কলকাতায় ছয় মাস ঘুরে এসেছি। অঞ্জলি নামে শর্মিলা ঠাকুরের প্রতিরূপ এক শ্যামলা মেয়ের সঙ্গে হাল্কা প্রেম-প্রেম সম্পর্কও হয়ে গিয়েছিল। লিখে ফেললাম জীবনের প্রথম প্রেমের গল্প, মেট্রোর লবিতে সাড়ে চারটায়। খবর জেনে স্বনামধন্য তরুণ লেখকটিও অহমে লাগায় সম্পাদককে গল্প পাঠিয়ে দিল। সম্পাদক পড়লেন মুশকিলে। কার গল্প ছাপতে দেবেন? সেই সময় চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন নাট্যকার মমতাজ উদদীন আহমদ। নাম-গোত্র ছাড়া দুটি গল্প তাঁকে দেওয়া হলো, পড়ে বলবেন কোনটি ছাপা হবে। তিন দিন পর ডেকে পাঠালেন সম্পাদককে।

যে গল্পের প্রশংসায় মমতাজ উদদীন আহমদ পঞ্চমুখ ছিলেন, সেটি ছিল, ‘মেট্রোর লবিতে সাড়ে চারটায়’। সেই আমার শুরু। আমার প্রথম বই– কুশল আর মৃত্যুবুড়ো। তখন কাজ করি ৩৫ তোপখানা রোড বিটপী অ্যাডভার্টাইজিং কোম্পানির আর্ট সেকশনে। আর্ট ডিরেক্টর ছিলেন শিল্পী আবদুল মুক্তাদীর। তিনি অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর খালাতো ভাই এবং নাট্যাভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদারের বড় বোনের স্বামী। তাঁর শাসনে আমি মানুষ হয়েছিলাম। ওনার ছোট ছেলের নাম কুশল। বাবার মোটরবাইকের পেছনে বসে প্রায়ই অফিসে আসত। কেমন যেন অপার্থিব মনে হতো তাকে। কোঁকড়ানো চুল, বড় বড় চোখ, কেমন যেন অপার্থিব মনে হতো। সাগরের তলার জগৎ, জলে ডুবন্ত গাছগাছালি, মাছ, অক্টোপাস, হাঙর, তিমি সম্পর্কে জানার ভীষণ আগ্রহ তার। আমার সঙ্গে বেশ খাতির। স্টুডিওর আলমারির তালা খুলে লাইফ ম্যাগাজিনের ‘আন্ডার দ্য সি’ সংস্করণগুলো বের করে ওকে দিতাম। কুশল ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাতা উল্টে ছবি দেখত, কিছু বলত না। এক ঈদের লম্বা ছুটিতে মুনীর চৌধুরীর স্বজনরা প্রায় সবাই কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে গেলেন।

কবীর চৌধুরীর পরিবার, রামেন্দুদা (রামেন্দু মজুমদার), ফেরদৌসী ভাবি (ফেরদৌসী মজুমদার), ত্রপা মজুমদার আরও অনেকে। দুই দিন পরে শিল্পী মুক্তাদীর ভাই ঢাকা থেকে গিয়ে সবার সঙ্গে যোগ দিলেন। পরের দিন রোদভরা ভোর বেলায় তারা সবাই বিচে বেড়াতে বেরিয়েছেন, ছোটরা জলের কাছাকাছি ঝিনুক কুড়াচ্ছে, হঠাৎ এক বিশাল ঢেউ উঁচু হয়ে এসে সবার চোখের সামনে শুধু কুশলকে নিয়ে চলে গেল। মুক্তাদীর ভাইসহ আরও অনেকে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ল কুশলকে বাঁচাতে। সম্ভব হলো না। রাশি রাশি উত্তাল জলে কোথায় যে কুশল হারিয়ে গেল, কেউ জানল না। দুপুর তিনটায় মাছ ধরা ট্রলারের জালে জীবন্ত মাছের সঙ্গে কুশলকে পাওয়া গেল মৃত অবস্থায়। মুক্তাদীর ভাই ঢাকা ফিরে কেমন অন্তর্মুখী হয়ে গেলেন।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles