8.2 C
Toronto
মঙ্গলবার, মে ৭, ২০২৪

পরকীয়া আসলে কি? কীভাবে বুঝবেন সঙ্গী পরকীয়ায় আক্রান্ত

পরকীয়া আসলে কি? কীভাবে বুঝবেন সঙ্গী পরকীয়ায় আক্রান্ত
প্রতীকী ছবি

সাম্প্রতিককালে যেসব সামাজিক ব্যাধি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তারমধ্যে শীর্ষে রয়েছে পরকীয়া। আর এ বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ককে কেন্দ্র করে সমাজে খুন-খারাবির মতো ঘটনাও ঘটছে। বর্তমানে পরকীয়ার আধিক্যের কারণে সমাজে নানা বিশৃঙ্খলার দেখা দিচ্ছে। আর এই পরকীয়ার নিষ্ঠুর বলি হচ্ছে স্বামী বা স্ত্রী, পিতা-মাতা ও সন্তানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
পরকীয়া কি?

মূলত বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ককেই পরকীয়া বলা হয়ে থাকে। বিবাহিত কোন নারী বা পুরুষ নিজ স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কারও সাথে বিবাহোত্তর বা বিবাহবহির্ভূত প্রেম, যৌন সম্পর্ক ও যৌন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়াকেই পরকীয়া বলা হয়।
পরকীয়ায় জড়িত হওয়ার কারণ
১. বাল্য বিবাহ

- Advertisement -

অল্প বয়সে বিয়ে বা বাল্য বিবাহে পরকীয়ায় জড়ানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে। বাল্য বিবাহে অনুভব হয় যে তারা এই বয়সে জীবন উপভোগ করেনি। ফলে উপভোগের চাওয়া-পাওয়ায় বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত হতে থাকে।
২. দাম্পত্য জীবনে অসন্তুষ্ট

দাম্পত্য জীবনে অসন্তুষ্টি থেকেও পরকীয়ায় জড়ানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে। বৈবাহিক সম্পর্কে দুজনকেই একে অপরের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হয়। এই ভালোবাসাটা হারিয়ে গেলে অন্য জায়গায় ভালোবাসা খুঁজে ফেরেন তারা।
৩. পিতা-মাতা হওয়া

পিতৃত্ব বা মাতৃত্বের ফলে স্বামী এবং স্ত্রীর গতিশীল সম্পর্কে পুরো পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এ সময় সংসারে সন্তানই মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে যায়। সন্তানকে সময় দিতে গিয়ে স্বামীর প্রতি একটু বেখেয়াল হতেই পারে। এতে ওই স্বামী নিজেকে অবহেলিত ভেবে প্রাধান্য পেতে অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে যান।
৪. শারীরিক চাহিদায় অসন্তোষ

পরকীয়ার অন্যতম কারণ শারীরিক চাহিদা পূরণ না হওয়া। বিবাহের পরে নারী বা পুরুষের মধ্যে কেউ একজন শারীরিক মিলনে অক্ষমতা বা আগ্রহ না দেখালে বিপরীতজন এ সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। এর ফলে তারা অন্য কোনো সঙ্গীকে খুঁজে নেন।
৫. ক্যারিয়ারে অগ্রগতি

অনেক ক্ষেত্রে ক্যারিয়ারে অগ্রগতিও পরকীয়ার অন্যতম কারণ। অনেকেই ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে শারীরিক, মানসিক ঘনিষ্ঠতা বা ফ্লার্টিং-এর মাধ্যমে তাদের ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং পেশাদার লক্ষ্য অর্জন করতে চায়। এতে করে ক্যারিয়ারের উন্নতি করতে গিয়ে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত হন।
৬. সঙ্গীর সাথে মানসিক যোগাযোগ না থাকা

অনেক সময় সময়ের অভাবে সঙ্গীর সাথে মানসিক সম্পর্ক বা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে দেখা দুই পক্ষই অন্য কারও সাথে আবেগ, অনুভূতি শেয়ার করতে শুরু করে। এই মানসিক বন্ধন অনেক সময় শেষ পর্যন্ত বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
৭. সঙ্গীর সাথে মতবিরোধ

জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই জীবন সঙ্গীর সাথে মতের মিল নাও হতে পারে। কিন্তু যখন এই বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছায় তখন থেকেই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক শুরু হতে থাকে।
৮. আর্থিক কারণ

কখনো কখনো আর্থিক লোভের কারণে অনেকেও পরকীয়ায় জড়িয়ে পরে। আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের লোভে সঙ্গীর অজান্তেই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়ায় বেশিরভাগ মানুষ।
৯. প্রযুক্তিগত কারণ

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অবাধ ব্যবহার, প্রযুক্তির উন্নতি ও তা ব্যবহারের সহজলভ্যতার কারণে যোগাযোগের সুযোগ বেড়েছে। আবার এসব জায়গায় পরকীয়া দেখতে দেখতে মানুষ এটাকে স্বাভাবিক বলে ধরে নিতে শুরু করেছ। এ’দুটি কারণও পরকীয়ার জন্য দায়ী।
কীভাবে বুঝবেন সঙ্গী পরকীয়ায় জড়িত কিনা

সঙ্গী পরকীয়ায় আক্রান্ত কিনা তা অনেক সময় সঙ্গীর অস্বাভাবিক বা সন্দেহজনক আচরণ থেকেই বোঝা যায়। নিচে এমন কিছু আচরণ দেয়া হল

১. অতীতের তুলনায় বর্তমানে ফোনে সময় বেশি কাটানো। কারণে-অকারণে ফোন কারও সাথে দীর্ঘসময় একান্তে কথা বলা। এক সময় অন্তরঙ্গতা তৈরি হওয়া।

২. ফোন দিয়ে আড়ালে কাজ করা বা টাইপ করা। সঙ্গীকে পাসওয়ার্ড না দেয়া।

৩. যদি আপনার সঙ্গী আপনার ফোনের উত্তর না দেন বা সবসময় আপনাকে পরে কল করেন, অথবা আপনার ফোন এড়িয়ে চলেন তাহলে বুঝতে হবে যে কোন সমস্যা আছে।

৪. হঠাৎ করে যদি সঙ্গী আপনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে বা শারীরিক মিলনে অনাগ্রহ প্রদর্শন করে।

৫. সঙ্গীর থেকে অপরিচিত পারফিউমের ঘ্রাণ পাওয়া।

৬. হঠাৎ করে সঙ্গীর সাজসজ্জা বেড়ে যাওয়া। নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা করা। স্বাভাবিকের চেয়ে সুন্দর পোশাক বা ভিন্ন স্টাইলের পোশাক পরা যা আপনি কখনও দেখেননি।

৭. পরিবার বা কাছের মানুষকে সময় বেশি না দেয়া। বাইরে বাইরে বেশি সময় কাটানো।

৮. হুট করে যখন দেখবেন যে সঙ্গীর মিথ্যা বলার পরিমাণ বেড়ে গেছে।

৯. সঙ্গীকে কোন প্রশ্ন করলে যখন অস্থির বা নার্ভাস হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে সঙ্গী রেগে যেতে পারে।

১০. যখন সঙ্গী আপনাকে এড়িয়ে যেতে থাকে। অর্থাৎ আপনার সঙ্গী আপনার সাথে কোথাও যেতে বা কিছু করতে চায় না।

তবে মনে রাখবেন শুধুমাত্র পরকীয়া হলেই যে সঙ্গীর মাঝে এসব লক্ষণ দেখা দিবে তা কিন্তু নয়। অনেক সময় মানসিক চাপ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং মানসিক বা শারীরিক অসুস্থার কারণেও এই সমস্যাগুলি হতে পারে। তাই সব সময় ভালোমতো নিশ্চিত হয়ে নেয়া উচিত যে আসলেই সঙ্গীর কি হয়েছে।
ফ্লার্ট করা কি পরকীয়ার অন্তর্ভুক্ত?

ফ্লার্ট করা মানে হল, প্রণয়চাতুর্য, খেলাচ্ছলে প্রেমের ভান বা প্রেম প্রেম দুষ্টুমি। ফ্লার্টিং মূলত এক ব্যক্তির প্রতি অপর কোন ব্যক্তি অথবা দুজন ব্যক্তির মাঝে পারস্পরিকভাবে সংঘটিত একটি মানব আচরণ, যাতে যৌন ও প্রেমময় আগ্রহ প্রদর্শন করা হয়। আলাপ, দৈহিক ভাষা (যেমন চোখের ইশারা), অথবা সীমিত শারীরিক সংস্পর্শ এর অন্তর্গত।

ফ্লার্টকে সাধারণত পরকীয়ার মধ্যে ধরা না হলেও কোন বিবাহিত ব্যক্তি যদি আরেক বিবাহিতের প্রতি এমন আচরণ করে থাকে তখন তাকে পরকীয়ার অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

এ ছাড়া যখন আপনার সঙ্গী আপনার অনুমোদন ছাড়াই কারও সাথে ফ্লার্টিং করে থাকে বা আপনার সঙ্গীর কাজ ও সম্পর্ক আপনার বিরুদ্ধে যেতে পারে সেক্ষেত্রে ফ্লার্টিং কেও প্রতারণা হিসেবে গণ্য করা হয়।

কারণ ফ্লার্টিং থেকেই পরকীয়া বা বিবাহ বহির্ভূতের সম্পর্কের সূচনা হতে পারে।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles