8.8 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

সীমিত পরিসরে আমাদের ঈদ

সীমিত পরিসরে আমাদের ঈদ
ছবিকাজী সারওয়ার

প্রবাসী হবার আগ পর্যন্ত ঈদের দিন সকালে ঘুম ভাঙতো আব্বার হাঁকডাকে। তাড়া দিতেন গোসল করে রেডি হতে। তারপর রেডি হয়ে সুগন্ধি আতর লাগিয়ে জায়নামাজ হাতে নিয়ে আব্বার সাথে ঈদের মাঠে যেতাম নামাজ পড়তে। গোয়ালন্দের বড় কারী সাহেব (কারী আব্দুল লতিফ) নামাজ পড়াতেন। তিনি ছিলেন বড় মসজিদের ইমাম। মাওলানা আব্দুল হক আব্বাসীর পিতা। নামাজ শেষে বাসায় এসে প্রথমে আব্বাকে পরে মা কে পা’য়ে হাত দিয়ে সালাম করে শুরু হতো ঈদের দিন।

বহু বছর পার হয়ে গেছে। আব্বা চলে গেছেন। মা’য়ের পা ছুঁয়েও আর সালাম করা হয় না। অবশ্য ছুটিতে যখনই বাড়ীতে যাই তখনই বিশেষ করে ফিরে আসার সময় এখনো পা ছুঁয়ে সালাম করি।

- Advertisement -

দিন পরিবর্তন হয়েছে। নানা জটিলতার মধ্যে দিয়ে দিন পার করছি। অন্যের সমস্যা, অন্যের জটিলতা, অন্যের আবদার, অন্যের সেবা করতে গিয়ে নিজের মানসিক শান্তি প্রায় জিরোতে এসে নেমেছে। যাহোক সেইসব দিন আর নেই!

গতকাল ঈদের দিন তৃতীয় বারের মত বাসার মধ্যে ঈদের নামাজ পড়লাম। ছেলে মেয়ে, স্ত্রী এবং একজন প্রতিবেশীকে নিয়ে সংক্ষেপে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজে ইমামতি করলাম। জানি না নামাজ সঠিক হয়েছে কিনা, আল্লাহ কবুল করবেন কিনা!

ঈদের দিনেও কাজ ছিল। বাসা থেকে অফিস করি কাজেই ছুটি নেয়া হয় নি। আজ শুক্রবার থেকে দু সপ্তাহের ভ্যাকেশন। অনেক বছর পর এই প্রথমবারের মত ছুটি নিয়ে বাসায় পার করতে হবে। এই দু সপ্তাহ গত বছরের পাওনা ছুটি। বিগত ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশে যাব বলে জমা করে রেখেছিলাম। করোনা পরিস্হিতি একটু ভাল হলেই দেশে যাব! ভাল হতে হতে এমন খারাপ হলো যে এখন আর প্লেনেই উঠা যাচ্ছে না। অগত্যা ছুটিটা বিলুপ্ত হবার আগেই বাধ্যতামূলকভাবে নিয়ে নিতে হলো।

ঈদের দিন অফিসের কাজে বিরতি পেলাম টেকনিকাল কারণে। ছেলে মেয়ে কেউ আমাদের সাথে বের হবে না। অগত্যা আমরা দুজন বের হলাম। ভাবলাম কিছু পরিচিত বন্ধুদের বাসার সামনে গিয়ে গাড়ীর মধ্য থেকেই ঈদ মোবারক বলে চলে আসবো।

গত বছর এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চলে গেছেন প্রিয় সালাম ভাই। ভাবলাম ভাবী ও তার বাচ্চাদের সাথে দেখা হয় না এক বছরের বেশী সময়। গেলাম উনার বাসার সামনে। দরজায় এলেন ভাবী, সিনথিয়া ও শাওন সিনথিয়ার বাচ্চারা। দুরে দাঁড়িয়ে কুশল বিনিময় করছি। এমন সময় রাস্তার অপর পাশে এসে পুলিশের গাড়ী এসে দাঁড়ালো। প্রথম দিকে বুঝতে পারি নি। পরে বুঝলাম যখন তারা লাল নীল বাতির সিগনাল দিয়ে বুঝালো যে আমরা যেন করোনাকালীন লকডাউনের আইন অমান্য না করি। অন্যথায় ১০০০ ডলার জরিমানা গুনতে হবে। তাড়াতাড়ি বিদায় নিয়ে চলে এলাম। আরো কয়েকটি বাসার সামনে নিরাপদ দুরুত্বে গাড়ীর মধ্যে থেকেই ঈদ মোবারক জানিয়ে এসেছি। আমাদের বাসার চত্বরেও কেউ কেউ এসেছেন। তবে কেউই গাড়ী থেকে নেমে বাসার ভেতরে আসেন নি। দশ বার ফিট দুর থেকেই কথা বলে চলে গেছেন।

আজ ঈদের দ্বিতীয় দিন। ভ্যাকেশনের প্রথম দিন। বাইরে চমৎকার আবহাওয়া। একটা লং ড্রাইভে দুরে কোথাও নির্জনে পার্কে একাকি সময় কাটাব কিনা ভাবছি। সংগে বই, ফেসবুক তো থাকছেই। বাসায় ছেলে মেয়ের আম্মার বাগানে সবজির চাড়া লাগানোর তাড়া রয়েছে। রয়েছে বাংলাদেশের নানা জটিলতা সমাধান করবার আপ্রাণ লং ডিসট্যান্স প্রচেষ্টা। আশা করি আপনাদের সকলের ঈদ ভালই কাটছে। আবারও ঈদ মোবারক।

টরন্টো, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles