2.9 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

স্ট্যান্ডার্ড রুল কি রকম?

স্ট্যান্ডার্ড রুল কি রকম?
আমরা আসলে কি অর্জন করতে চাইছি

যতদিন পর্যন্ত আমরা একটা স্ট্যান্ডার্ড রুল বা একই নিয়মের অধীনে সকল নাগরিক আসতে না পারবো ততদিন হানাহানি, অশান্তি, পাপাচার কমবে না। স্ট্যান্ডার্ড রুল কি রকম?

যেমন একই পাপ যেই করুক তাকে সমানভাবে দেখা। পরকীয়া, চুরি, দুর্নীতি, অবৈধ যৌনাচার একজন রাজনৈতিক নেতা করলেও যে অপরাধ হয়, একজন মাওলানা বা পীর সাহেব করলেও একই অপরাধ হয়। আওয়ামী লীগের কর্মী যদি কারো সাথে অবৈধ পরকীয়া করে ধরা পরে, হেফাজত বা বিএনপির কর্মী যদি ধরা পরে স্ব স্ব দলের নেতা কর্মীদেরকে একই দৃষ্টিতে নিন্দা করতে হবে এবং একই আইনের অধীনে একই রকম শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অথচ আমরা দেখি জাতীয় পার্টির কোন কর্মী অপরাধ করলে যে ভাষায় বিএনপি নিন্দা করে, যে শাস্তি বিএনপির আমলে দেয়া হয়, একই অপরাধ বিএনপির লোক করলে আর বিএনপি সরকারে থাকলে সেটাকে অপরাধ হিসেবেই গণ্য করা হয় না। একই ঘটনা আমরা দেখছি আওয়ামী লীগের বিষয়ে। হিন্দু বা মুসলিম পরিচয়ে যখন অপরাধ সংগঠিত হয় তখনো একই অবস্হা পরিলক্ষিত হয়। আজ হেফাজতের নেতা যখন অন্যায় করেন, সে অন্যায়কে অন্যায় হিসেবে না দেখে, নিন্দা না করে, বিচার না করে তা আড়াল করার প্রচেষ্টাও আমরা দেখতে পাই।

- Advertisement -

কাম, ক্রোধ একজন দাড়িওয়ালা বা ক্লিন সেভ করা উভয়ের দেহেই থাকতে পারে। থাকতে পারে একজন শিক্ষক বা ছাত্রের মধ্যেও। একজন শিক্ষক হয়েছে বলে সেগুলো অটোমেটিক্যালি দেহ থেকে ঝরে যায় না। জনগণ অবাক হতেই পারে। বলতে পারে, আহা একজন মাওলানা হয়ে এমন কাজ করতে পারলো! একজন শিক্ষক হয়ে এমন অপকর্ম করতে পারে ভাবাই যায় না! পাবলিকের মনে এগুলো আসতেই পারে। কিন্তু সরকার ও সরকারী আইনে এভাবে দেখার বা প্রচার করার অবকাশ নেই। সরকারের কাছে অপরাধী যেই হোক, সমান।

বিবাহে কাবিন বা রেজিস্ট্রি করা দেশের আইনে বাধ্যতামূলক। কিন্তু দেশে অনেকেই শরীয়াহ আইনের কথা বলছেন যেখানে কাবিন করা বাধ্যতামূলক নয়। তাহলে প্রশ্ন হলো দেশ কোন আইনে চলে? শরীয়াহ আইনে নাকি প্রচলিত আইনে? শরীয়াহ আইন কি স্বীকৃত আইন? যদি স্বীকৃত হয় তাহলে দুই আইনের মধ্যে কনফ্লিক্ট কেন? সমন্বয় নেই কেন? কারো জন্য শরীয়াহ আইন আর কারো জন্য প্রচলিত আইনতো চলতে পারে না। দেশে কত লক্ষ লোকের বিবাহ শুধুমাত্র শরীয়াহ আইনে হয়েছে যা সরকারী খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয় নাই তা কি কেউ খতিয়ে দেখেছেন কখনো? এসব নারীরা যখন বিবাহ বিচ্ছেদে পরেছে তারা কি যথাযথ ক্ষতিপুরণ পেয়েছে?

এসব বিষয় এড্রেস করার জন্য সরকারের হাতে যথেষ্ট সময় ছিল এবং এখনো আছে। আছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়। দেশের লক্ষ লক্ষ এতিম ছেলে মেয়েরা মাদ্রাসায় পড়ে। তারা সেখানেই মানুষ হয়। তাদেরকে অবহেলা করে, তাদের জীবন গঠনকে পাশ কাটিয়ে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার পরিনতি কারো জন্যেই মংগল হবে না।

কিন্তু প্রশ্ন হলো কারা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে?

নিয়মিত বিরোধী দল কেন হারিয়ে যাচ্ছে? হেফাজত বার বার বলছে তারা রাজনীতি করতে চায় না। তবুও তাদেরকেই বার বার রাজপথে কেন দেখা যাচ্ছে? টুপি দাড়ি থাকলেই একটা মৌলবাদী চেহারা দেবার যে প্রয়াস দীর্ঘদিন যাবত পরিলক্ষিত হচ্ছে, সেই চেহারাকে বার বার রাজপথে ঠেলে দিয়ে আমরা আসলে কি অর্জন করতে চাইছি?

দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদ, সুশাসন কায়েম, উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা দুর করা, সুষম বন্টন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, বৈষম্য হ্রাসের রাজনীতি যাদের করার কথা তাদের অস্তিত্ব বিলীন করে দিয়ে রাজপথে হাজার হাজার দাড়ি টুপিওয়ালা আর ভিন্নধর্মীর উপসানালয়ে, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে হামলার দৃশ্যের চিত্রগুলো দেশের উপকারে হচ্ছে নাকি রসাতলে নিতে সুপরিকল্পিত চক্রান্ত তা আজ সকলেরই গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles