13.2 C
Toronto
রবিবার, মে ৫, ২০২৪

টরন্টো’র দাওয়াত ব্যবস্থাপনা

টরন্টো'র দাওয়াত ব্যবস্থাপনা

টরন্টো হলো বিশ্বের এক নাম্বার দাওয়াতের শহর।

- Advertisement -

মানুষের পাঁচ মৌলিক চাহিদাকে পেছন ফেলে বাঙালি সমাজে ষষ্ঠ নাম্বারে বেশ উঁচুতে আসন গেড়ে নিয়েছে ‘দাওয়াত’। কোভিডের সময় ভাইরাসের চাইতেও বাঙালীরা বেশি আক্রান্ত হয়েছিল দাওয়াতের অভাবে “ডিপ্রেশন” রোগে। প্রাণ যায় অবস্থা..। তারপর কোভিড চলে গেলে অবস্থা চলে যায় নাগালের বাইরে; মানুষ সুদে আসলে উসুল করতে থাকে।

এখানে কাউকে সাজগোজ করে যেতে দেখলে মানুষ জিজ্ঞেস করে- “দিদি গিয়েছিলেন না যাচ্ছেন?” বিবাহ, জন্মদিন, এনগেজমেন্ট, মুসলমানি, মৃত্যুবার্ষিকী, ঈদ বা ঈদ পরবর্তী দাওয়াত ছাড়াও বেবি শাওয়ার, ফার্স্ট/সেকেন্ড/থার্ড কোয়ার্টারলী জন্মদিন। প্রথম দেখা, প্রথম প্রপোজ, প্রেগন্যান্সি টেস্ট এর পজিটিভ রেজাল্ট (বাঁধানো ছবিসহ), ব্রেকাপ/ডিভোর্স এনিভার্সারিতেও চলে ধুম-ধাম আয়োজন। আরও আছে, যা মুরব্বি পাবলিকের সামনে প্রকাশ করাটা শরমের ব্যাপার..। আর প্রথম কানাডায় ল্যান্ড করা, প্রথম জব পাওয়া, প্রথম বাড়ি কেনা, প্রথম বাচ্চার হাঁটা শেখা, গোঁফ উঠা, টিন এজ-এ পা দেয়া, সুইট সিক্সটিন সিদ্ধি লাভ, এডাল্ট হওয়াতেও চলে উৎসব।

সময়ভেদে টরন্টোতে দাওয়াত পাঁচ প্রকার:
১. সকাল: ইলিশ পান্তা বা পরোটা-নীহারির দাওয়াত
২. দুপুর: ভারী, বিয়ে বাড়ির খানার মতো। কোনো নির্দিষ্ট কারণ নাই। অনেকদিন আসেন না, তাই দাওয়াত। অমুক দিয়েছিল তাই আমিও দিচ্ছি
৩. বিকাল: ভারী নাস্তার দাওয়াত। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে বার্বিকিউ, বার্গার। চলে পশ্চিমা ধাঁচে। এটা বড়লোকেরা করে থাকে
৪. সন্ধ্যা: সাধারণত জন্মদিনের পার্টি
৫. রাত: বেশীরভাগই এনিভার্সারি।

তবে প্রতিটা দাওয়াতে এটেন্ড করতে দরকার স্কীল। একদিনে পাঁচ দাওয়াত খেয়ে সকালে অফিস ধরতে পারার সহজ কিছু টিপস দেয়া হলো:

১. কসকো থেকে টনখানেক চকলেট, খেলনা, গয়না আর আমাজন থেকে কিছু ভালো শপিং ব্যাগ, ড়্যাপিং পেপার কিনে রাখুন
২. মাসের শুরুতে দাওয়াতের শাড়ি, কামিজ আর গয়নাগুলো ক্লোজেটে/ড্রয়ারে আলাদাভাবে সাজিয়ে রাখুন। দাওয়াত খেয়ে এসে ভালমতো ভাঁজ করে অন্যদিকে সরিয়ে রাখুন। পরের মাসে ব্যবহৃত শাড়ি/কামিজের স্তুপ উল্টিয়ে নিয়ে টপ থেকে আবার শুরু করবেন। জুতার ক্ষেত্রে তাই করবেন। মনে রাখবেন, মানুষ নিজে কী পরে সেটার ওপরই সে বেশি খেয়াল করে, অন্যেরটা কম
[** যারা একই দিনে পাঁচ দাওয়াতে বের হবেন, তারা সকাল সকাল একবারে বেরিয়ে পড়বেন কয়েকটা শাড়ি/কামিজ হাতে। ওয়ালমার্টের ট্রায়াল রুমে ঢুকে শাড়ি/কামিজ চেঞ্জ করে আসবেন। বাসায় আসার দরকার নাই। সপার ড্রাগ মার্টে স্যাম্পল লিপস্টিক মেখে ফেলবেন; সময় বাঁচবে, শেড রিপিট হবে না]
৩. লিপিস্টিক, শেডস, মাস্কারা, কনসিলার, ব্লাশ ইত্যাদি গুছিয়ে রাখুন। সাত দাওয়াতে সাত কালারের ব্লাশ মাখবেন। কারন পরের দাওয়াতে গিয়ে আগের দাওয়াতের অনেককে দেখতে পাবেন
৪. ক্যালেন্ডারে দাগিয়ে রাখুন ঠিকানাসহ দাওয়াতের ধরণ, সময়, দিন-তারিখ।
৫. যারা হিজাব পরেন, তারা শুধু স্কার্ফ চেঞ্জ করলেও চলবে।

কীভাবে খাবেন?
কিউট পুরুষ মানুষ; যারা লিপস্টিক দেন, তারাও মহিলাদের মতো একদিনে পাঁচ দাওয়াত খেতে গিয়ে নিচের টিপস ফলো করতে পারেন:
<> হাড্ডি ছাড়া গরু/খাসির শুধু শুকনা মাংস খাবেন
<> ভাত নেবেন অল্প, সবজি বেশি
<> শুধুমাত্র রাতের দাওয়াতে ডেজার্ট খাবেন
<> পানি, কোক খাবেন স্ট্র দিয়ে, লিপস্টিক মুছবে না
<> রেলগাড়ি স্টিম ইঞ্জিনে যেভাবে বেলচায় করে কয়লা ইঞ্জিনের ভেতরে ছুঁড়ে দেয়; চামুচ দিয়ে ঠিক ওভাবে মুখের ভেতর ভাত ছুঁড়লে লিপস্টিক, গ্লস ভালো থাকবে
<> যারা দাঁত ময়লা করতে চান না, তারা পানকৌড়ির মাছ গেলার মতো মাথা ৯০ ডিগ্রি আসমানে তুলে না চিবিয়েই খাবার গিলে ফেলবেন
<> ভুলেও টেনে চর্বি ছিঁড়তে যাবেন না; ফস্কে গেলে শক ওয়েভ দশ ফুট ব্যাসার্ধে অবস্থানরত লোকজনের সাড়ে সর্বনাশ করবে। মনে রাখবেন, অন্যরাও নেক্সট দাওয়াতে যাবার প্ল্যান করছে
<> হাফ টাইমে পেট খালি করার চেষ্টা করবেন। সফল হলে এরচাইতে আনন্দের আর কিছু নাই।

দাওয়াত খেয়ে দ্রুত বেরোনোর উপায়:
সকাল, দুপুর, বিকালের দাওয়াত থেকে বের হতে খুব একটা সমস্যা হবে না। যত দ্রুত বের হবেন, হোস্ট ততো খুশি হবে। কারণ হোস্টেরও দাওয়াত থাকে। রাতে দাওয়াত খাওয়া হয়ে গেলে দরকার নিজের বিছানায় খেতা মুরি দিয়ে ভাত ঘুম। তাই জলহস্তির মতো খেয়ে নির্বিঘ্নে বের হয়ে আসার টিপস:
[মনে রাখবেন, মিথ্যা বললে চরম গুনাহ]
১. ওয়াল মার্ট অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে, জরুরি বাজার আছে বলে চলে যান [রাত ১১ টার পর কিন্তু বন্ধ হয়ে যায়]
২. বাচ্চাদের স্কুল আছে বলে বের হয়ে আসেন [পরের দিন স্কুল বন্ধ কিনা শিওর হয়ে নেবেন]
৩. সকালে অফিসের কথা বলে বের হয়ে আসবেন।

এক ঢিলে দুই পাখি :
যারা সকালের নাস্তার দাওয়াত পাবেন, তারা আরেক্টু বেশি থাকার চেস্টা করবেন; চা সিঙ্গারা জুটে যেতে পারে। আর দুপুরের গেলে বিকালের নাস্তা খেয়ে আসবেন। তবে সাধু সাবধান! বেশি দেরি করে দুপুরের দাওয়াতে গেলে রাতের খাবার দূরে থাক, বিকালের নাস্তাও হারাবেন।

বিঃদ্রঃ কক্ষনো হোস্ট কে বলতে যাবেন না যে উনার বাসায় আসার পূর্বে দাওয়াত খেতে গিয়েছিলেন। পেট বেশি ভরা থাকলে বলবেন পার্সেল করে দিতে। আর অল্প পরিচিত মানুষকে “বাসায় আসবেন” বললেও খবরদার ঠিকানা দিবেন না!

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles