11 C
Toronto
বুধবার, মে ১, ২০২৪

মধ্যপ্রাচ্য থেকে টরন্টো : আট

মধ্যপ্রাচ্য থেকে টরন্টো : আট

বাংলাদেশে আমরা পৌঁছে গেলাম ক্লান্ত, বিধস্থ, অবস্থায় , আমার বাচ্চাগুলো দেখে মনে হচ্ছিলো কেমন যেন গরীব মানুষের বাচ্চা । আমাদেরও তাই সহায় সম্বলহীন বাস্তুহারা মানুষ । আমাদের হাত একেবারেই শুন্য । আমাদের সব টাকা ছিল লন্ডনের B.c.c.i Banke. BCCI Bank তখন বন্ধ হয়ে গেছে। কুয়েতের ব্যাঙ্কের টাকার তো কোন খবর পাওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। বাংলাদেশের বাঙ্কেও আমাদের টাকা ছিলো । যা হোক সে জন্য তেমন সমস্যা হয় নি। আব্বা আমার হাতে বেশ বড় অঙ্কের টাকা হাতে দিয়ে বললেন চিন্তা করো না। আমিতো আছি। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরাই প্রথম চার পরিবার ছিলাম যারা কুয়েত থেকে নিজেদের উদ্যোগে নিজেদের খরচে বাংলাদেশে পৌঁছালাম ।রুপকথার গল্পে শুনেছিলাম রাজা ও ফকির হয়ে যায় নিমিষে । আমাদের অবস্থা ও একেই রকম মনে হচ্ছিলো ।

- Advertisement -

আমাদের অনেক পরে যারা এসেছিলো তারা এসেছিলেন রেড ক্রসের সহযোগীটায় । রেড ক্রসই তাদের যাতায়াতের ব্যয়ভার বহন করেছিলো । কুয়েতে অবস্থানরত সকল প্রবাসীদের ই রেড ক্রসের সহযোগীটায় যার যার দেশে পৌঁছানো হয়েছিলো ।
বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর রেডিও BBC থেকে আমার দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। কুয়েতে আমরা কি ভাবে ছিলাম কি ভাবে বের হয়ে আসলাম আমাদের বা অন্যান্য বাঙালীদের উপর কোন ধরনের নির্যাতন হয়েছে কিনা ইত্যাদি নানা ধরনের প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছিলো । কুয়েতে যারা তখন ছিলেন সবাই আমার সাক্ষাৎকার শুনে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

কুয়েত থেকে ফিরে আসার পর কখনো কুয়েতে ফিরে যাবার কথা আমরা ভাবিনি। মন স্থির করে নিয়েছিলাম আমাদের বাংলাদেশেই থেকে যেতে হবে। আমার স্বামী একটা ইন্জিনিয়ারইং ফার্ম এ চাকুরিও নিয়ে নিলো । আমিও হালকা পাতলা করে সংসার শুরু করার কথা ভাবতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমার ভাবনাইতো শেষ ভাবনা হতে পারে না। আমাদের ভাবনা ভাবার আরেকজওতো আছেন। ওর চাকুরির তিন সাপ্তাহ পুরো হয়নি তখনি আমাদের সাথে আসা বন্ধুদের মাঝে একজন ফোন করে জানালেন , তিনি সিঙ্গাপুর চলে এসেছেন ,আমার স্বামী ও যেনো সিঙ্গাপুর চলে আসে ওখানে ওর যোগ্যতা অনুযায়ী ভালো চাকুরি আছে। উনারও ভালো চাকুরী হয়েছে। আমার স্বামী অফিস থেকে সাত দিনের ছুটি নিয়ে সিঙ্গাপুর চলে যায় । যে মানুষটা ছাত্র বয়েস থেকে বিদেশে তার হঠাৎ করে এমন অবস্থাতে বাংলাদেশে এসে চাকুরি করাটা খুব সহজ ছিলো না।

সিঙ্গাপুর গিয়ে চার পাঁচ দিনের মাঝে একটি নামকরা ইন্জিনিয়ারং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওর চাকুরি হয়ে গেলো । উচ্চ বেতন ও উচ্চ পদের এবং ফ্রী বাসা। চাকুরীতে যোগ দেবার আগেই বাসার চাবি দিয়ে দেয়া হয়ে গিয়েছিলো । আমাকে ও ফোনে জানালো , তোমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে এসো । আব্বা আম্মার ইচ্ছা ছিলো আমরা আরো কিছুদিন থেকে যাই দেশে কারন এই দেড় মাস একটা অনিশ্চয়তা , বিষণ্ণতার মাঝে দিন কাটিয়েছি । কিন্তু আমার আর থাকতে ইচ্ছা করছিলো না। মনে হচ্ছিল আমার বাচ্চাদের জন্য আমার একটা সংসার শুরু করা দরকার। আমার ভাইকে নিয়ে আর আমার দুই বাচ্চাকে নিয়ে সিঙ্গাপুর পৌঁছে গেলাম। আসলে আব্বাই আমার ভাইকে আমার সাথে দিয়ে দিয়েছিলো , ছোট দুইটা বাচ্চাকে নিয়ে একা যাচ্ছি বলে। অথচ আমি বহু বার একা দেশে আসা যাওয়া করেছি কিন্তু আমার এই মানুসিক অবস্থাতে আব্বা আম্মা আমাকে একা ছাড়তে সাহস পেলেন না।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles