9.1 C
Toronto
বুধবার, মে ১, ২০২৪

প্রশ্ন করো সবকিছু নিয়ে

প্রশ্ন করো সবকিছু নিয়ে

তরুণ বয়সে আমার ঘরের মধ্যে কয়েকজনের রঙীন পোষ্টার টানানো ছিল। তার মধ্যে ভারতীয় নায়িকা রেখার এবং চলচ্চিত্রকার সত্যজিত রায়ের ঢাউস সাইজের দুটো ফটো বাঁধাই করা ফ্রেমের মধ্যে, ফুটবলার ম্যারাডোনা, সালাউদ্দিন এবং ক্রিকেটার ইমরান খানের রঙীন পোষ্টার অন্যতম। তখন বায়তুল মোকাররম ও নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাথে আজাদ প্রোডাক্টস নামে একটা কোম্পানি এগুলো বিপনন করতো হকারদের মাধ্যমে। নায়িকা রেখা আমাদের বয়সে অনেক সিনিয়র হলেও তার ছবি টাঙানোর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল মনে হয় ছবিটি দেখতে অনেক সুন্দর ছিল। অবশ্য পরে আমার বিশ্ববিদ্যালয় হলের রুমে ছিল নায়িকা জয়াপ্রদার ছবি। যাইহোক যাদেরকে পছন্দ করতাম তাদের ছবি টাঙিয়ে রাখতাম। তাইবলে কি আমার প্রিয় ম্যারাডোনা বা রেখা কিংবা সত্যজিত রায়ের কাজের কোন সমালোচনা করা যাবে না? বা করলে আমি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠবো?

- Advertisement -

মনের মধ্যে অনেকগুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। মুশকিল হলো যারা প্রশ্ন করাকে বিজ্ঞান মনস্কতা বলে প্রচার করেন তারাই আবার নিজেদের পছন্দের বিপরীতে প্রশ্ন করাকে পছন্দ করেন না বললে ভুল হবে বরং ঘৃণা করেন।

আলবার্ট আইনস্টাইন তাঁর একটা বিখ্যাত সংক্ষিপ্ত উক্তির জন্য পরিচিত, তা হলো, “প্রশ্ন করো সবকিছু নিয়ে, question everything “। তাঁর মতে, আমরা সবকিছুকে প্রশ্ন করার এবং কৌতূহলী হওয়ার একটি স্বাভাবিক ইচ্ছা নিয়ে জন্মগ্রহণ করি, কিন্তু বড় হওয়ার পথে আমাদের অনেকেই সেই ইচ্ছা হারিয়ে ফেলি।
এই হারানোর কারণ হলো মানুষের ঘৃণা এবং আক্রমন।

আপনি মহানবী (সাঃ) বা লক্ষাধিক নবী বা পয়গম্বর নিয়ে সমালোচনা করতে পারবেন, ছত্রিশ কোটি দেব দেবী নিয়ে সমালোচনা করতে পারবেন অথচ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা সত্যজিত রায়কে নিয়ে সমালোচনা করতে পারবেন না! করলে কেউ কেউ তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন কিন্তু কেন?

কারো কাজ নিয়ে সমালোচনা করলে বলা হয় আপনি কি তাঁর চেয়ে বেশী বুঝেন?
একসময় সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টোটলের জন্ম হয়েছিল তাই বলে কি এখন আরো দশজন সক্রেটিস প্লেটোর জন্ম হতে পারে না?

এক সময় সত্যজিত রায়ের জন্ম হয়েছিল তাই বলে কি এখন আরো ভাল চলচ্চিত্রকার জন্ম নিতে পারে না? কারো কাজ নিয়ে কেউ ভুল ধরলে সেই ভুলকে খন্ডানোর চেষ্টা করুন, প্রমাণ করুন সেটা ভুল নয়। অথচ কেউ ভুল ধরলে তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়।

আমি ছোট একটা প্রশ্ন করে শেষ করি। ইংরেজী নববর্ষ এলে আমরা কি পহেলা জানুয়ারী পালন করি নাকি ইংরেজী নববর্ষ পালন করি? আমরা কি হ্যাপি নিউ ইয়ার বলি নাকি হ্যাপি পহেলা জানুয়ারী বলি? ৩১শে ডিসেম্বর দিবাগত রাত বারটায় আমরা চিৎকার দিয়ে কী বলি?

তাহলে বাংলা নববর্ষে আমরা কেন পহেলা বৈশাখ পহেলা বৈশাখ নিয়ে মেতে উঠি? আমরা যতটা না বাংলা নববর্ষ নিয়ে মেতে উঠি তার চেয়ে বেশী মেতে উঠি পহেলা বৈশাখ নিয়ে। পুরো বছরটাকে উইশ না করে একটি দিন বা একটি মাসকে নিয়ে আমাদের এত মাতামাতির কারণ কী? জানুয়ারী জানুয়ারী নিয়ে করি না অথচ বৈশাখ বৈশাখ কেন করি? বাকী মাসগুলোরওতো নানান বৈশিষ্ট আছে, তারাও মানুষের কল্যাণে অনেক কিছু নিয়ে হাজির হয় এই ধরাধমে। এমন প্রশ্ন করাটা কি খুব বোকামী হয়ে গেল?

এছাড়া আমাদের বাঙালী সংস্কৃতির মধ্যে দুটো মোটা দাগে হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতি এবং মুসলিম ধর্মীয় সংস্কৃতির ধারা রয়েছে। ১লা বৈশাখে কি আমরা সকলের সব ধরনের সংস্কৃতিকে সম্মান করি নাকি বিশেষ কারো সংস্কৃতি ইনজেক্ট করার চেষ্টা করি। দুটো বৃহৎ সম্প্রদায়কে সম্প্রীতি ও সৌহার্দের সাথে বাস করতে হলে উভয়ের মতামত, সংস্কৃতি, আঁচার আচরণকে যদি সম্মান না করতে পারি তাহলে একটি অনুষ্ঠান সার্বজনীন হবে কিভাবে?

নবান্ন, হালখাতা, পান্তাভাত, ইলিশ মাছ খাওয়া, ধ্যুতি বা লুঙ্গি পড়ে যার যার ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী নুতন বছরে দোকানে দোকানে মিলাদ মাহফিল, জিলাপি বা মিষ্টান্ন বিতরণ কিংবা পূজা করা, বৈশাখী মেলা থেকে রঙ বেরঙের পুতুল কিংবা কটিকটি, গামছা শাড়ী কিনে ঘরে ফেরা কি আমাদের কমন সংস্কৃতি নয়?
আশা করি এসব প্রশ্ন মনে আসা কোন অপরাধ হবে না!

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles