7.5 C
Toronto
শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪

রোদ বালিকা

রোদ বালিকা

প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে কত গেছি অন্যের ঘরে। এখন মাঝে মাঝে নিজের কাছে যাই। থাকি নিজের সাথে। কোথাও গেলে নিজেকে ছেড়ে যেতে হয়। ফিরে এলে সেই নিজের কাছেই ফিরে আসি। অনুভূতিটা ভীষণ অন্যরকম, মনে হয় দেহের ওপর দিয়ে রেলগাড়ি চলে যাবার মতো একটি নদী বয়ে যায়। না প্রতিদিন না, ইদানীং এমনটা হচ্ছে। একটা নমুনা দিচ্ছি।

- Advertisement -

অনেকক্ষণ পায়চারি করে শুতে এসেছি। হাতের বইটি টেবিলে ওপর রেখে বাতি নিভিয়ে অপেক্ষা করছি। এ আমার নতুন শিক্ষা, অন্তর যাত্রা। নীরবতার ফেরিওয়ালা বলতে পারেন আমাকে। এক সময় প্রচণ্ড ইচ্ছে করত বকুল তলায় বসে সন্ধ্যা অবধি তার দিকে তাকিয়ে থাকতে। কিন্তু কোথায় কে চলে গেলাম, কে কাকে পৌঁছে দিল ভৌগোলিক কোন পাহাড়ে সেসব ভেবে এখন আর কী হবে। এখন শুধু নিজের মধ্যে তাকে ধারণ করার চেষ্টা করছি। আমি থাকবো। আমার মধ্যে সে। দুই এ মিলে এক। সঙ্গত কারণেই নীরবতাকে বেছে নেওয়া। নীরবতার মধ্যে ডুবে যাওয়া হলো অন্তর বড় করার ব্যায়াম। আসুন একটু এগিয়ে যাই। এখন যা কিছু শুনবেন তাকে সিনেমা বলতে পারেন। নাটকও বলা যায়। কিন্তু এক কথায় আমি বলি রোদ বালিকা। রোদ বালিকা নিজেই একটি শিল্প মাধ্যম।

প্রথম দৃশ্য এমন হতে পারে যে কারোর শরীরের গন্ধ ভেসে আসবে খুব কাছ থেকে। মনে করুন সে এসে বালিশের কোনায় মাথা রেখে চুপচাপ শুয়ে আছে। আমার অভিব্যক্তি এমন যে কাউকে আমি দেখতে পাচ্ছি না তবে বিশ্বাস করি বালিশের ওপর কারোর চাপ পড়েছে। আকাশে চাঁদ থাকুক কিংবা কিঞ্চিৎ অমাবস্যা তাতে কিছু যায় আসে না। কিছু এলোমেলো চুল এদিকওদিক গড়াতে গড়াতে এক পর্যায় চোখের পাতায় ঠাঁই নেবে। সে চোখ দুটো আমার। এই যে দুজন মানুষ পাশাপাশি শুয়ে থাকার দৃশ্য এখানে ঘন কালো চুল সবচেয়ে বেশি স্বাধীনচেতা। যা কিছু করবে সব শব্দ বিহীন।

দ্বিতীয় দৃশ্যে মনে হবে পাশাপাশি শুয়ে থাকা দুজন মানুষ আলাদা আলাদা খুব সুখী। এমন দৃশ্যে সামান্য সংলাপ বড় প্রয়োজন। যে শুয়ে আছে পাশের বালিশে তাকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হচ্ছে। ইচ্ছেটা বিশেষ কিছু না। হতে পারে ফুল সংক্রান্ত আবোল তাবোল। অথবা সকাল আগে না বিকেল তা নিয়ে সামান্য খুনসুটি। কিন্তু না, এমন ভুল করা যাবে না। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছি হাজার প্রশ্ন করা হলেও কোন উত্তর আসবে না। মাঝখান থেকে গল্পের সমাপ্তি। দেখা গেল ও চলে যাবে অথবা কখনো আসেনি সে অন্য বালিশে।

আজ আকাশে চিকণ বাতাস। কখনো গায়ে লাগে, কখনো পাশ কেটে যায়। চমৎকার একটা উপন্যাস শেষ করে ঢুকে গেছি ব্লাকহোলে। পথিমধ্যে রোদ বালিকা ফুল ঝরা শব্দ নিয়ে হাজির। আজও তার শরীরে রোদের গন্ধ। রোদ পোড়া গন্ধ আমার অনেক প্রিয়। কথাটা সেও জানে। বরং আমার কোন জিনিস ওর কাছে বেশি প্রিয় আজও তা জানা হলো না। হয়তো অপেক্ষা করে করে আমি ক্লান্ত বোধ করি না সেটা তার ভাল লাগে। কিংবা আমার মধ্যে সে দেখতে পেয়েছে একটি নিরাকার সেতু। সদা অল্প কথা বলে তাই তেমন করে কিছুই জানা হয়নি। শুধু জানি দুজন মানুষের কারোর কোন কষ্ট নেই। ভালোবাসা কোথা থেকে জন্ম নেয়, কতটুকু প্রশ্রয়ে তা আকাশচুম্বী হয় এসব আমরা জেনেছি অনেক দেরিতে। নীরব পৃথিবীতে।

কেউ বিশ্বাস করবে না জানি। তবু বলছি এবং এটাই আজকের শেষ দৃশ্য। গল্পের ক্লাইম্যাক্সে না গিয়ে একেবারে শেষ দৃশ্যে নিয়ে আসার জন্য দুঃখিত। ফিরে যাই পাশাপাশি শুয়ে থাকার দৃশ্যে। কিছু বললে ঘোর কেটে যাবে সেই ভয়ে আমি মুখ বুজে ছিলাম। সব কথা নিজের সাথেই বলছি। থাক, আমাকে বাদ দেন। ভালোবাসার দৃশ্য কল্প শেষ করতে হয় শূন্যতা দিয়ে। আমার ওপর থেকে চোখ সরিয়ে ওর মুখের ওপর জুম করুন। ঠোঁটের মাঝে কী চমৎকার স্পষ্ট হাসি, তাইনা। বোঝা যাচ্ছে অতিমাত্রায় সূক্ষ্ম কোন প্রশ্ন করার প্রস্তুতি। মানুষের কণ্ঠে থাকে এক অদ্ভুত জাদু। পৃথিবীতে কারোর কণ্ঠস্বর অন্যজনের মতো নয়। অন্ধ ব্যক্তিও কণ্ঠ শুনে বলে দিতে পারে কার সাথে সে কথা বলছে। যেমন আমি বুঝতে পারলাম রোদ বালিকা বলছে, ‘আজ ছাদে এলেন না কেন?’

পার্থিব জীবনে আমার কোন বাড়ি নেই। বাড়ি থাকলে তো ছাদ হবে। বাড়ি যখন নেই তখন কোন সিঁড়িও নেই। সিঁড়ি থাকলে রোদ বালিকার হাত ধরে বলতে পারতাম যতদিন পৃথিবীতে রোদ থাকবে, তোমার কথা খুব মনে পড়বে। আমি হলাম সমান্তরাল মানুষ। আমার আছে শুধু একজোড়া বালিশ। একটি নিজের দখলে। এপাশ ওপাশ করার স্টেডিয়াম বলা যায় সেটাকে। অন্যটিতে শূন্যতার ঝুল। অপেক্ষার বিজ্ঞপ্তি।

ভালো কথা, আমাকে যখন কেউ প্রশ্ন করে ‘আপনার বয়স কতো হলো, কতো আলোকবর্ষ’? আমি কোন উত্তর দেই না। কেননা প্রশ্নটাই ভুল। প্রশ্ন হওয়া উচিৎ ছিল ‘আপনার নীরবতা এখনো স্কুল পাশ করছে না কেন?’
স্কারবোরো, কানাডা

 

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles