15.4 C
Toronto
রবিবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪

আমার সাংবাদিকতা

আমার সাংবাদিকতা
আমি কাজ করতাম একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় আমার কাছে জানতে চাইলেন ইমাম তুমি আসলে কী সাংবাদিকতায় থাকবা এটাকে পেশা হিসেবে নিতে চাও আমি বললাম জ্বী স্যার

কথা হচ্ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক স্যারের সাথে। ১৯৯৮ সাল। ঢাকায় তাঁর ভুতের গলির বাসায়। স্যার ছিলেন তখন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান। আমি কাজ করতাম একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায়। আমার কাছে জানতে চাইলেন, “ইমাম, তুমি আসলে কী সাংবাদিকতায় থাকবা, এটাকে পেশা হিসেবে নিতে চাও? আমি বললাম, জ্বী স্যার। আমি সাংবাদিকতায়ই থাকতে চাই, এটাকে পেশা হিসেবে নিতে চাই। ১৯৯৯ সালে যায় যায় দিনের সম্পাদক শফিক রেহমান তাঁর ইস্কাটনের বাসায় আমার হাতে একটা কাগজ দিয়ে বললেন, “ইমাম এটা তোমার প্রেসক্রিপশান। এটা মেনে চলো। ভালো সাংবাদিক হতে পারবা।” ২০০০ সালে সাংবাদিকতায় পোস্ট গ্রাজুয়েট করি। ড. আরেফিন স্যারসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অনেককেই আমি শিক্ষক হিসেবে পাই।

শিক্ষক ছাড়াও অনেক নামকরা সাংবাদিকের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। কবি শামসুর রাহমানকে পত্রিকা অফিসে আনতে যেতাম তাঁর শ্যমলীর বাসায়। কবির কোন গাড়ী ছিল না তখন। কবিকে চোখে ড্রপ দিতাম। আর পুরো পথ জুড়ে গল্প করতাম। সাংবাদিকতার গল্প। আরও কত জনের সাথেই না গল্প হয়েছে এরকম। প্রয়াত এবিএম মুসা, শাহরিয়ার কবির এঁদের কাছে সাংবাদিকতাটা শিখেছি হাতে কলমে ।

- Advertisement -

না আমি পারিনি। সাংবাদিকতা পেশাকে নেশায় পরিনত হওয়ার আগেই ছাড়তে হয়েছে। থাকার চেষ্টা যে করিনি তা নয়। ব্যর্থ হয়েছি। কেন পারিনি সেসব গল্প আরেকদিন করবো। আজকের লেখার উদ্দেশ্যটা ভিন্ন। পেশায় না থাকলেও লেখার নেশা ছাড়তে পারিনি। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১০ সাল কানাডায় আসার আগ পর্যন্ত ১২ বছর টিআইবি’র ত্রৈমাসিক নিউজলেটারটা সম্পাদনা করতাম। নিয়মিত লেখালেখি করেছি ডেইলী স্টার, প্রথম আলো, অবজারবার, ইত্তেফাকসহ অনেক পত্রিকায়। কানাডা এসেও লেখালেখি অব্যহত রাখার চেষ্টা করছি। কম বেশি সব পত্রিকায় চেষ্টা করি লিখতে। টরন্টো থেকে প্রকাশিত দেশের আলোর সম্পাদক সাইদুন ফয়সাল ভাইতো প্রতিমাসে লেখার জন্য সাধ্য অনুযায়ী টাকা দিতো। নিজের লেখা পত্রিকায় ছাপলে আনন্দের সীমা থাকে না। লেখা প্রকাশ হলে আমি আবার পড়ি। কখনও বারবার পড়ে আনন্দ পাই।

আবার সাংবাদিকতায় ফিরে আসি। আমার বাংলাদেশী পাসপোর্টটাতে পেশা হিসেবে লেখা “সাংবাদিক”। কানাডায় পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হতে আবেদন করেছিলাম সাংবাদিক হিসেবেই। এই পেশাজীবীরা আমার কাছে বড় সন্মানীয়। আমি এই কাতারে থাকতে চাই।
সম্প্রতি আমাকে কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করলো টরন্টোর একজন মেধাবী সাংবাদিক। তিনিও সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী। অত্যন্ত পরিশ্রমী। সিবিএন এর সম্পাদক মাহবুবুল হক ওসমানী। সিবিএন এর উপদেষ্টাদের একজন হিসেবে আমার নাম ছাপা হচ্ছে তাঁর সম্পাদিত পত্রিকায়। এটা আমার জন্য বড় পাওনা।

কানাডা থেকে একটা ভাল মানের বাংলা পত্রিকা প্রকাশ করা মোটেই সহজ কাজ নয়। বিশেষ করে প্রিন্ট ভার্সানতো অসম্ভবকে সম্ভব করার মতো। ঢাকায় আমি যে সাপ্তাহিকে ছিলাম তাতে কাজ করতাম ১৯ জন। সম্পাদনা, রিপোর্টিং এবং লেখালেখিতে আমরা ছিলাম ১২ জন। বাকিরা বাণিজ্যিক এবং প্রশাসনিক সহায়তায় ছিলেন। তবে এখানে পত্রিকা বের করতে হয় একজনকে। নাম থাকে অনেকের।

সিবিএন এর তৃতীয় সংখ্যা বের হবে মঙ্গলবার। বলতে গেলে এই পত্রিকার সব লেখাগুলো মৌলিক। পত্রিকাটি সাংবাদিকতার নীতিমালা মেনে চলছে। পাঠকের চাহিদা পুরনেই সচেষ্ট। এই পত্রিকাটাকে সহায়তা করলে আমাদের কমিউনিটি উপকৃত হবে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। শুধু বিজ্ঞাপন দিয়ে সহায়তা করা তা নয়, লেখালেখি বা উপদেশ পরামর্শ দিয়েও সহায়তা করা যায়।

ওসমানী তাঁর সিবিএন-এ আমাকে উপদেষ্টা বানিয়েছে। তাঁর কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নাই। কতটুকু উপদেশ দিতে পারবো জানিনা, তবে রিপোর্টার বানালে সাংবাদিকতা পেশায় থাকতে পারতাম এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। অন্তত আরেফিন স্যারকেতো বলতে পারবো, “আমি সাংবাদিকতা পেশায় আছি স্যার।”

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles