8.4 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

ছবি তুলবার প্রাথমিক বিষয়

ছবি তুলবার প্রাথমিক বিষয় - the Bengali Times
ছবিজাভেদ ইকবাল

আমাকে একজন জিজ্ঞেস করেছিল ইনবক্স এ- “আপনি কি অমুক গ্ৰুপে ডলার দেন ছবি পোস্ট করার জন্য?”
আমি উনার কথায় রাগ করি নাই।

কিছু সহজ প্রচেষ্টা একটা ছবিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। কেউ হয়তো মনে করছেন নিজের তোলা ছবিটা খুব ভালো হয়েছে, কিন্তু তেমন সাড়া পাচ্ছেন না, গ্রুপে এপ্রুভ হচ্ছে না; অভিমান করে বসে আছেন। এর কারণ হলো, মানুষ নিজের তোলা ছবিকে আবেগ, অন্ধ ভালোবাসা, মনের মাধুরী মিশিয়ে দেখে। ফলে ছবির খুঁতগুলো ধরতে ব্যর্থ হয়। তাই অন্যের চোখ দিয়ে পক্ষপাতিত্বহীন দৃষ্টি দিয়ে ভেবে দেখুন ছবিটার বিশেষত্ব কী। শুধুই কি ঝকঝকে? না কোনো মিনিংফুল ছবি হয়েছে বা কোনো বার্তা দিচ্ছে? ঝকঝকে ছবি প্রায় সবাই তুলতে পারবে, কিন্তু একটা অর্থবহ ছবি তুলে পারা সহজ নয়। যেমন ধরুন; একটা কিশোরী রেইল লাইনের উপর ব্যালান্স করে হাঁটছে; এমন একটা ক্লিক দিলেন। আর আরেক ক্লিকে এক কিশোরী রেইল লাইনের সামনে দাঁড়ানো। ছবি দুটার মধ্যে কোনটা বেশি অর্থবহ?
সহজ কিছু টিপস:

- Advertisement -

১. হাত কাঁপাবেন না; ছবি ক্লিক দেবার সময় দম বন্ধ করে রাখতে পারেন
২. পোট্রেইট ছবি তুললে আপনি বা আরেকজন হবেন মেইন সাবজেক্ট। তাই আশপাশে হাবিজাবি অংশ থাকলে ছেঁটে ফেলুন
৩. দিগন্ত, নদীর তীর, ব্যাকগ্রাউন্ডকে ছবির মধ্যে সমান্তরাল (একশো আশি ডিগ্রি) রাখার চেষ্টা করুন। দিগন্ত বাঁকা থেকে গেলে ছবির মান একদম পড়ে যায়
৪. খুব বেশি এডিট করে রং-চং মাখাবেন না। মানুষ খুব সচেতন
৫. খুব বেশি জুম্ করে ছবি তুললে সেটার কোয়ালিটি (পিক্সেল) কমে যাবে
৬. ছবির মূল সাবজেক্ট ফ্রেমের একদম মাঝামাঝি না রেখে ডানে বা বামে কিছুটা সরিয়ে ফেলুন, মান বাড়বে
৭. কেউ যদি বামে তাকিয়ে থাকে, তাহলে বামে বেশি জায়গা রাখুন। তদ্রুপ ডানে তাকিয়ে থাকলে ডান দিকে স্পেস বাড়িয়ে ক্লিক দিন
৮. ল্যান্ডস্ক্যাপ/প্রকৃতির ছবিতে দিগন্ত, আকাশ, পানিকে ফ্রেমের মোট জায়গার দুই তৃতীয়াংশে বা এক তৃতীয়াংশে রাখার চেষ্টা করুন। উদাহরণস্বরূপ; একটা গ্লাসে পানি তিন ভাগের এক ভাগ ভর্তি করুন, নয়তো তিনভাগের দুইভাগ ভর্তি করে ছবি তুলুন। এখানে গ্লাসের পানিকে সমুদ্র, আর গ্লাসের ফাঁকা অংশকে আকাশ ভাবতে পারেন। এটা রুল অব থার্ডস [ Rule of Thirds] নামক ছবি তুলবার খুব কার্যকর পদ্ধতির একটা অংশ
৯. ফ্রেমিং করুন। প্রয়োজনে ছবিকে কাটছাট করে ভালো আকারে নিয়ে আসুন
১০. ডিভাইস নাড়াচাড়া করে, পজিশন চেঞ্জ করে আলো এডজাস্ট করে নিন।

ভালো ছবি তুলতে হলে কিছুটা সময় ব্যয় করতেই হবে। খুব ভাগ্যবান না হলে ঝড়ে বক পড়বে না। মাত্র পাঁচটা সেকেন্ড একটা ছবির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। কোন এঙ্গেলে ছবি নিলে ভালো লাগবে, সূর্য কোন দিকে আছে খেয়াল করুন। ধরুন, আপনি একটা চমৎকার পাহাড়কে পেছনে রেখে ছবি তুলবেন। তখন আপনাকে ছবির ফ্রেমের পাশে সরিয়ে রাখুন, পাহাড়কে আরেক সাইডে রাখুন। ছবির মান বাড়বে। আপনাকে পাহাড়ের মাঝ বরাবর রাখলে ছবির মান অনেক কমে যাবে।

মনে রাখবেন, সস্তা মোবাইল বা সস্তা ক্যামেরা দিয়ে মানসম্মত ছবি তুললে সেটার গ্রহণযোগ্যতা লেটেস্ট দামি মোবাইল/লক্ষ টাকার দামি ক্যামেরায় তোলা মানহীন ছবির চাইতে সহশ্রগুন বেশি। ছবি তুলে পোস্ট করার আগে জুম্ করে দেখে নিন সেটার ফোকাস আসলেই ভালো কি না। জুম্ না করলে খালি চোখে বোঝা মুশকিল ছবিটা আসলে কতটুকু পরিষ্কার/ফোকাস্ড।
একটা ভালো ছবির পেছনে ডিভাইসের ভূমিকা সামান্যই। তাই ডিভাইসের মডেল ভার্সন উল্লেখ করাটা আমার কাছে খুব একটা জরুরি বলে মনে হয় না। আর সবাইকে ভেবে, চিনতে ছবি তুলতেই হবে, ফটোগ্রাফার হতে হবে; সেটারও মানে নাই। মোবাইল, ক্যামেরা বা লেন্সের চাইতেও বহুগুন অ্যাডভান্স, শক্তিশালী আর নিখুঁত ডিভাইস হলো আমাদের চোখ, দৃষ্টিভঙ্গি, চেতনা। যেটা টাকায় কিনতে পারবেন না।

আর হ্যা, দয়া করে ছবি তোলার আগে কষ্ট করে একটা সুতির নরম পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ডিভাইসের লেন্সটা মুছে নিবেন।

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles