3.4 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

কানাডার লোকজন সানস্ক্রীন মেখে সারাদিন বীচে থাকে

কানাডার লোকজন সানস্ক্রীন মেখে সারাদিন বীচে থাকে
আমেরিকা কানাডার লোকজন সানস্ক্রীন মেখে সারাদিন বীচে রোদের মধ্যে বডি উল্টিয়ে পাল্টিয়ে শুঁটকী মাছ শুকানোর মত রোদ পোহায়

মুখে স্বীকার না করলেও মানুষ চামড়ার রং নিয়ে ঠিকই বাছবিচার করে। আমিও আসলে এরকম বর্ণবাদী। আমার মধ্যেও সাদা চামড়া, বাদামি চামড়া, কালো চামড়া নিয়ে ভালো লাগা বা না লাগা; পছন্দ-অপছন্দ রয়েছে। আমেরিকা কানাডার লোকজন সানস্ক্রীন মেখে সারাদিন বীচে রোদের মধ্যে বডি উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে শুঁটকী মাছ শুকানোর মত রোদ পোহায়; যেন তাদের চামড়া পুড়ে বাদামি হয়। আর আমরা বাঙালিরা বাদামি চামড়া পেয়েও নাখোশ!
হায় দুনিয়া..
.
আমার বর্ণবাদীতার ঊদাহরণ দিচ্ছি।
যেমন, ব্রয়েলারের সাদা-ধ্বলা চামড়া দুচোখে দেখতে পারি না। অবশ্য ভালমতো মুচমুচে কেএফসির মতো ফ্রাই করলে আলাদা..। আবার বতকের চর্বিযুক্ত কালচে চামড়ার প্রতি এত দুর্বলতা, অনুরাগ কেন? কেনইবা মোরগের বাদামি কচকচে চামড়া বলতে আমি অজ্ঞান?
.
আজ মনটা খুব আকুলি-বিকুলি করছে নারকেল দিয়ে হাঁস ভুনার জন্য। শিলপাটায় কাঁচা আদা-রসুন-জিরা-ধনিয়া-শুকনামরিচ বাটা দিয়ে কষানো হাঁস ভুনার হাঁড়ি থেকে বেছে মোটা আস্তরণযুক্ত চর্বি আর নারকেলের ফালি একসাথে মুখে পুরে চিবানো; লা জওয়াব! পেশন দাঁত দিয়ে চিবিয়ে নারকেলের সেদ্ধ শাঁস থেকে চিপে সুস্বাদু তেল আর রস বের করে মোটা ইরিধানের ঝরঝরে মাড় গালা মোটা ভাতের সাথে তড়িঘড়ি করে গেলা; অপূর্ব! ভাত যায় গ্যালন গ্যালন। মাঝে মাঝে গলায় জ্যাম বেধে যায়। তখন সারস পাখি যেভাবে বড় মাছ গিলে; ঠিক অভাবে কষ্ট করে ক্যাঁত করে গিলে ফেলবার মাঝে অনাবিল এক শান্তি..।
.
সবচাইতে বেশি দুর্বলতা চট্টগ্রামের পাহাড়ি মুরগির চামড়ার ওপর। এরা দুনিয়ার এক নাম্বারের স্বাদের পাখি। খায় ন্যাচারাল প্রোটিন; পোকা মাকড়, আর পাহাড়ে হাঁটাহাঁটি করার কারণে পেশী হয় পাকানো আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের মতো। সেদ্ধ হতে সময় লাগলেও সেইরকম ফ্লেভার! পেটের সিক্স প্যাক ইজিলি গোনা যায়। আম্মা আগে মোরগের চামড়া দিয়ে চট্টগ্রামের ফুতা বেগুন ভুনা করতো।
জিনিস!

যাই হোক, আজকে চামড়া দিয়ে শুরু করার মতলব হলো সামনে কোরবানির চামড়া নিয়ে কিছু কথা। অনেকে চামড়া এতিমখানায় দান করে দেন বা বিক্রি করে টাকা দান করেন। কিন্তু বর্তমানে যে বাজার দর; চামড়া বেচে যা পাওয়া যায়, তা খুব সামান্য টাকা। দাম না পেয়ে অনেক ব্যবসায়ী মনের দুঃখে চামড়া পুড়িয়ে ফেলে বা মাটি চাপা দিয়ে ফেলে। এর একটা আশু সমাধান খুব প্রয়োজন। বাংলাদেশ যে চামড়ার খনি, সেটা আমরা কয়জন জানি?

- Advertisement -

অনেকেই জানে না গরু/মহিষের চামড়া খাওয়া যায়। বেশ স্বাদের! পৃথিবীর অনেক দেশই এটা খায়। একটা মিডিয়াম সাইজের গরুর চামড়া যদি কমপক্ষে আট কেজিও হয়, সেটা যদি খাদ্য হিসাবে তিনশো টাকা করেও বেঁচে দেয়া যায়, তাহলে দাম হবে প্রায় চব্বিশ’শ।
তবে প্রথম প্রথম একটু ঝামেলা হবেই। চামড়া প্রসেস করা বেশ ঝামেলার। কয়েক ঘন্টা ধরে সেদ্ধ করা লাগবে। তারপর এয়ারটাইট কনটেইনারে চামড়া বইয়ের পৃষ্ঠার আকারে কেটে নিয়ে চুন/লাইম গোলানো পানিতে চার-পাঁচদিন চুবিয়ে রেখে দিতে হবে। ফ্রিজে রাখতে হবে, তা না হলে পঁচে যেতে পারে। ভেজানো হয়ে গেলে ধারালো বটিজাতীয় কিছু দিয়ে ঘষে তুলে ফেলতে হবে লোম।
তারপর চামড়া ভালমতো পরিষ্কার করে, ধুয়ে ছোট আকারে কেটে গরম মশলা দিয়ে মাংস রান্নার করার মতো রাঁধতে হবে। ভবিষ্যতের জন্য বাতাসে শুকিয়ে ফ্রিজিঙ করে রাখতে পারেন মাসের পর মাস। ভুঁড়ির মতো ছোট ছোট পিস করেও রান্না করে খেতে পারেন। বেশ সুস্বাদু।
যদিও প্রসেসটা সময় সাপেক্ষ।
তবে হতাশ হবেন না।

মানুষ যখন চামড়া খাওয়া শিখবে, তখন সেটা প্রসেস করার অনেক কারখানা গজাবে; তারাই আপনার চামড়া প্রসেস করে দেবে টাকার বিনিময়ে। অনেক মানুষের চাকরি হবে। তখন আর চামড়া ফেলে দিতে হবে না। যখন মানুষ ভুঁড়ি খেতে জানতো না, তখন গরু-ছাগলের ভুঁড়িও মাটি চাপা দিয়ে পুতে ফেলতো।
মনে রাখবেন- গরুর গায়ের রং লাল, সাদা, কালো কিংবা বাদামি; যাই হোক না কেন, চামড়া ছেলার পর ভেতরে কিন্তু সবই এক। মানুষের ক্ষেত্রেও এটা চরম সত্যি; চামড়ার নিচে সবার একই রং। তাই চামড়ার কালার দেখে ভেদাভেদ করাটা চরম অশিক্ষা আর মূর্খতার লক্ষণ।
.
প্রথম প্রথম হয়তো অনেকে হাসাহাসি করবে, কিন্তু একটা সময় আসবে, ভুঁড়ির মতো চামড়া নিয়ে টানাটানি করবে পাবলিক। সকালে রেস্টুরেন্টগুলো পরোটার সাথে চামড়া ভুনা পরিবেশন করবে কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ আর ধোনে পাতা কুঁচি ছিটিয়ে! চামড়া হবে মাংসের মতোই দামি খাবার।
আর দেরি কেন?
[বি দ্র: জুতা-স্যান্ডেল বানানোর জন্য কিছু চামড়া রাখবেন। জুতার দাম বাড়লে জাভেদ দায়ী থাকবে না; আগ থিকি কয়া রাকলাম..]

জাভেদ ইকবাল
মে ১৭, ২০২৩।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles