10.5 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

আজও তা বহে সমান্তরাল

আজও তা বহে সমান্তরাল
মেট্রোরেল

একদিন এই শহরে মেট্রোরেল ছিল না, ছিল না বাইপাসের নামে সাপ লুডুর মতো উড়াল সেতু। শুধু ছিল তোমার আমার বুকের মধ্যে বাষ্প ইঞ্জিনের হুশ-হাস আর উড়াল বাইপাস। মানুষ বলেই দশ হাত দূরে দাঁড়িয়েও আমরা উষ্ণতা অনুভব করতাম। পলক পলক ভালোবাসার জালে আবদ্ধ ছিলাম দুজন। যে কথা হয় নি বলা, কিংবা যেখানে হয়নি রাখা হাত, তা সম্পূর্ণ করতে প্রবাস থেকে এসে বসে থাকি পাতলা খান লেন গলির মুখে ট্রাফিক চত্বরে।

এবারও হলো না দেখা। একা একা কিছুক্ষণ বসে ছিলাম শহীদ মিনারের লাল সিঁড়ির ওপর। মাছেরাও খুনসুটি করে অধিকতর চেনাজানা মাছের সাথে। পাখিরাও মাটি ছুঁয়ে পেয়ে যায় কখনো সখনো তাদের পুরানো সাথী। শুধু আমিই হেঁটে বেড়াই চকচকে জুতো পরে ঢাকার ধুলোবালি মাখা রাজপথে। দেখা হয় না চক্ষু মেলিয়া অথবা পলক পলক সেই সন্ধ্যার মতো চক্ষু তুলিয়া। অনেক তো হলো, এখন লতা পাতায় জড়িয়ে থাকা বট গাছের মতো একটি প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে। আচ্ছা তোমার চুলগুলো কি সব পেকে গেছে? বাকী প্রশ্ন অনেক বড়। সবটা হয়তো মুখ ফুটে বলতে পারবো না। ভয় এখনো রয়ে গেছে। তারচেয়ে ভালো, অন্যভাবে বলি। মানে কোকা-কোলার মত ফুস করে না উঠে একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে।

- Advertisement -

আমাদের বাসায় যে ডাক পিয়ন চিঠি নিয়ে আসতো সে আমার বড় বোনের হাতে তার স্বামীর লেখা চিঠি তুলে দেবার আগে একবার বুকে ঘষে দিত। স্বামী বিদেশে থাকার কারণে আমার লক্ষ্মী বোনটা মন মরা হয়ে থাকতো সারাক্ষণ। কিন্তু ডাকপিয়ন যতোটা না বিদেশী নীল খাম তুলে দিত শেফা’পার হাতে তার থেকে বেশি দিত নিজের বুকের দাগ। কিকরে বলবে ডাকপিয়ন লোকটা আমার বোনের জন্য রাত জেগে চোখের পানি ফেলত না। একদিন শেফা’পা তার স্বামীর কাছে চলে আসে পশ্চিম জার্মানির শহর মিউনিখ। সেই থেকে বিদেশী চিঠি আসা বন্ধ হয়ে যায় আমাদের বাড়িতে। কিন্তু মাঝে মাঝে দেখতাম ডাক পিয়ন বাসার কাছ দিয়ে যাবার সময় আড় চোখে চেয়ে থাকত দরজার দিকে। এমনও হয়েছে পানি খাবার নাম করে দরজার কাছে এসে টোকা দিত। কাজের মেয়েকে জিজ্ঞেস করতো শেফালি আপা ভালো আছে তো?

ফিরে আসি আমার কথায়। ঢাকা শহরে যখন একা একা ঘুরি তখন আমারও খুব তৃষ্ণা পায়। পনেরো বছরের বেশি হলো লন্ডন থাকছি। লন্ডনে কখনো আমার তৃষ্ণা পায় না। ঢাকায় এলেই বুকের মধ্যে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। যাক, দু সপ্তাহ হলো এসেছি। রিক্সার ঘণ্টি, স্কুল ছুটি, বিকেলে চা বারান্দায় অনেক খুঁজেছি তোমাকে। দু’চারদিনের মধ্যে ফিরে যাব বিদেশ বাড়ি। কিন্তু যাবার আগে এবার সেই ডাকপিয়নকে খুঁজে বের করবো। যদি খুঁজে পাই, দেখতে চাইবো ওর পোশাকি জামার ওপর লেগে থাকা দাগ। মুছে গেছে, না আজও তা বহে সমান্তরাল। আমি নিশ্চিত ছোট্ট এক কামরার ঘরে দুই দেওয়ালের মাঝে পদ্মা সেতুর মতো একটি দড়ি টানিয়ে সেখানে খাকী জামাটা ঝুলিয়ে রেখেছে লোকটা। হয়তো তার বুক পকেটে একটি চিঠিও পাওয়া যাবে। যা শেফা’পাকে দেবে বলে লিখেছিল কিন্তু অনিবার্য যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে সেটা ওর দেওয়া হয়নি।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles