7.7 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

তিন অবস্থা-৬

তিন অবস্থা-৬
ফাইল ছবি

বাজার এনে গিন্নিকে ডাকাডাকি শুরু করলাম- কই গেলা, বাজার তোলো…
– লুঙ্গি কিনছো তো?
– পুরানটায় ভাতের মাড় দিলেই ঠিক হয়ে যাবে
– টাকা দিয়ে দিলাম, তাও কিনলা না? সেই চার বছর আগের পাতলা ত্যানা পরে ঘুরো। মেহমান আসলে টেলিভিশনের সামনে তোমার ঘোরাঘুরি দেখে আমি লজ্জায় মরি। এর চাইতে জর্জেট অনেক শালীন। মরার লুঙ্গি ছেড়েও না….পিঁয়াজ কোই?
– এই ধরো..
– এইটা কী!
– পিঁয়াজের বাপ। এক চিমটি মানে আধা কেজি, চোখ বুজে ছয় মাস। টু নাইন্টি নাইন ডলারে চারশো গ্রাম। ওনিয়ন পাউডার। চোখের পানি ফেলা, রক্তারক্তির দিন শেষ। আগে ছিলাম মূর্খ
– আলুর পাউডার পাওয়া যায় না? ভাজি করে দিতাম?
– কালকে খুঁজবো
– আমি নিজে আজকে বাজার যাবো। ওপরতলার ভাবীর কাছ থেকে ধার করা পিঁয়াজ ফেরত দেওয়ার নাম নাই। আবার বইলো না এক চামচ পাউডার দিয়ে আসো…
– এই ধরো তরমুজ। থ্রি নাইন্টি নাইন। মেইড ইন কানাডা!
– মেড ইন জাপান কিছু পাও নাই?
– পাইছি- বলে টেস্টিং সল্টের প্যাকেটটা হাতে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বললাম, সাত ডলারের সল্ট ওয়ান নাইন্টি নাইন। পিওর জাপানি জিনিস! স্যুপ বানাও
– এই তরমুজ শেষ পর্যন্ত ভাজি করে খেতে হবে দেইখো!
– বাজায় আনছি…

বাচ্চা কাচ্চাদের হুকুম দিলাম, সবাই রেডি হ। ড্যানফোর্থে মেলায় যাবো। দুপুরে রেস্টুরেন্টে খেয়ে বিকালে মাছ ধরতে যাবো! আমি মাছ ধরার সরঞ্জাম আর একটা ছোট বেলচা নিয়ে রওনা দিতেই গিন্নি বলল, বেলচা দিয়ে কী করবা?
আমি রহস্যের হাসি দেই।
.
ড্যানফোর্থের মেলা আর ডলারামায় কেনাকাটা করে গাড়িতে উঠার সময় গিন্নি বলল, কিছু খাওয়া দরকার। একটু কফি…
– ওমা! সামান্য কফি খাবা; কোনো ব্যাপার
– তোমার খরচ হবে…
– এদেশে কফি খেতে আবার টাকা লাগে?
– বাচ্চারা কুকি আর ডোনাট চাইতে পারে
– দেবো

- Advertisement -

আমি ওদের তিনজনকে ড্যানফোর্থ/ভিক্টরিয়া টিডি ব্যাংকের ভেতর নিয়ে গেস্টদের সোফায় বসালাম।
– ব্যাংকে কী কাজ?
– এদের কফিটা ভালো
– টিডি ব্যাংক ইদানিং কফিও বিক্রি করা শুরু করছে না কি?

সোফার পাশে রাখা মেশিনে কফি বানিয়ে গিন্নির হাতে দিয়ে বললাম, মেশিনটা ভালো। পাশের কাস্টমার সার্ভিস কাউন্টারে বললাম, কুকি আছে?
– অফ কোর্স স্যার!
– পানি?
– স্পার্কলিং না রেগুলার?
– স্পার্কলিংটাই দেন…
– এনিথিং এলস স্যার?
– ডোনাট?
– ইয়াপ! দ্যাটস অল?
– ইয়েস
– হ্যাভ আ সিট্

ম্যানেজার নিজে এসে ট্রেতে চকলেট চিপস কুকি, ডোনাট সার্ভ করে গেলো। আমরা কফিতে চুবিয়ে খেতে লাগলাম। কিছুক্ষন পর একজন ব্যাংক কর্মী এসে খোঁজ নিয়েও গেলো অসুবিধা হচ্ছে কি না।

বুঝলা, ভালো বংশের লোক এরা
– কয় ডলার বাঁচলো?
– টিম হর্টন্স এ খেতে কমসেকম আট ডলার তো লাগতোই…
– জিতছো। মাছ ধরতে কোথায় যাবা?
– স্কুগোগ লেক। কেজি পাঁচেক মাছ আনতে পারলেই গাড়ির তেল খরচ উসুল। আগে চলো কান্দাহারে খাই
– তুমি সত্যি খাওয়াবা কান্দাহারে! সূর্য পশ্চিমে উঠলো মনে হচ্ছে? আমি কিন্তু কাবাব আর টিক্কা খাবো
– নো অরিজ হানি!

কান্দাহার কাবাব রেস্টুরেন্টে গিয়ে চার প্লেট রাইস এনে টেবিলে রাখলাম। কাবাব আসতেছে, গরম হচ্ছে
– রাইসের সাথেই দেওয়ার কথা না?
– মাইক্রোওয়েভে আছে
– মাইক্রোতে কেন!
– ওয়েইট করো…

আমি কাবাব আর টিক্কা তাদের সামনে রাখতেই গিন্নি বলল, বাসা থেকে আনছো?
– হু। বাসায় জিনিস থাকতে কেনা কি দরকার? একই..
– আমাকে আগে বলতা? রাইসও রেঁধে দিতাম
– কষ্ট হতো
– কত সেইভ করলা?
– বিশ ডলার। তোমার রান্না কি এদের থেকে খারাপ?
– তা ঠিক। নিজের রান্না রেস্টুরেন্টে খাওয়ার মজাই আলাদা। আর এই বাসার কোকগুলা এনে ভালই করছো, এক্সপায়ারি ডেট আর এক সপ্তাহ। সালাদও বাসার?

আমরা কান্দাহার থেকে বের হয়ে স্কুগোগ লেকের দিকে রওনা দেই। একটা ডোবার পাশের গাড়ি থামিয়ে বেলচা হাতে বের হয়ে বললাম, তোমরা বস, আসতেছি।

আমি বৃষ্টি ভেজা মাঠের কর্নারে গিয়ে উবু হয়ে মাটি কোঁপাতে থাকি। বেশ কিছু কেঁচো বের করি। মাছ ধরার টোপ। বৌ বাচ্চা বিস্ময়ে, কৌতূহল চোখে জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে। সবাই খুব চিন্তিত।
চার ডলার সেইভ!

মাছ ধরে ফেরার পথে কান্ট্রি সাইডে আমার বুক পকেট হাতড়ানো দেখে গিন্নি জিজ্ঞেস করে, কিছু খুঁজো?
– দখিনার কানের দুল জোড়া। মেলায় দৌড়াদৌড়ি করার সময় খুলে আমার পকেটে দিছিলো। কেঁচো খোঁড়ার জায়গাটা কোথায় ছিল মনে আছে?
– না
– দেখতো খুঁজে পাও কি না। ওখানেই পড়ছে
– ঘুটঘুটে অন্ধকার। কত দিয়ে কিনছিলা?
– দেড়শো
– ভালো…

আমি এই সিঙ্গেল লেনের রাস্তায় স্লো হয়ে আশেপাশের ডোবা-নালা খুঁজতে যেতেই পেছনে প্রায় শ খানেক গাড়ি হর্ন দেওয়া শুরু করে দিলো…
আমি বাধ্য হয়েই স্পিড বাড়িয়ে দেই…
বাসার চাবিটাও মনে হয় গেছে।

অটোয়া, কানাডা

 

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles