-0 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

ডায়েরি লিখি না অনেকদিন

ডায়েরি লিখি না অনেকদিন
ছবিলিলারটসি

অনেক দিন হয়ে গেলো ডায়েরি লিখি না। লিখি না মানে লিখতে ইচ্ছা করে না। রোজ রাতে যখন ঘুমাতে যাই তখন প্রতি রাতে একটি করে আমি গল্প লিখি। সে গল্প গুলো আমি মাথায় নিয়ে ঘুমিয়ে পরি। আমার সাথে সাথে আমার গল্প গুলো ও ঘুমিয়ে পরে। সকালে আমি ঘুম থেকে উঠে গেলেও গল্প গুলো কিন্তু আলোর মুখ দেখে না। ওরা আমার মাথার ভেতর ঘুমিয়ে থাকে দিনের পর দিন। এমন অসংখ্য গল্প আমার মাথায় মৌচাকের বাসার মতো চাক বেঁধে আছে। সেখান থেকে একটা মৌমাছিও বেড়িয়ে আসে না।

আজ মনে হোল আমার ডায়রির পাতায় ধুলো জমে যাচ্ছে । তাকে আমি পুরানো দামী নকশী কাঁথার মতো বাক্সে বন্ধী করে রেখেছি। তাকে একটু আলো দেখানো প্রয়োজন। অবসর মানুষের ব্যস্ততা বেশী সে কথাটা আমি প্রতিদিন অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যাচ্ছি । ডায়রি লেখার কোন সময়ও যেনো আমার নেই।

- Advertisement -

লিখতে বসেও ধ্যাত ভাল্লাগে না বলে উঠে যাই । ধ্যাত ভাল্লাগেনা বলাটাও আমার একটা অসুখ । কোন কিছুতে বিরক্ত বোধ করলেই বলি ধ্যাত ভাল্লাগে না। অনেক সময় এমন হয়েছে যে সেখানে ভাল্লাগেনা বলাটা মোটেও উচিৎ ছিলো না, তারপরও বলেছি। খুবই বাজে অভ্যাস ছিলো । সময়ের সাথে সাথে ধ্যাত অভ্যাসটা চলে গেলেও ভাল্লাগেনা অভ্যাসটা রয়েই গেলো । পরিস্থিতি পরিবেশ আমার অনেক সরল অভ্যাস গুলো কমিয়ে দিয়েছে।

আমার বিয়েটা হঠাৎ করেই ঠিক হয়ে গিয়েছিলো । মানসিক প্রস্তুতি নেবারও সময় হোল না। যাকগে সে সব পুরানো কথা। আমার গায়ে হলুদের আগের দিন আমার ক্লাসের এক বন্ধু মোটর সাইকেল চালিয়ে আমাদের বাসায় এসে হাজির আমার সাথে দেখা ও বিয়ের কিছু কার্ড নেবার জন্য। ওকে দেখেই আমি কপাল কুচকে বলে উঠলাম, ধ্যাত কিছু ভাল্লাগে না। বন্ধুটি অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো , কি ভাল্লাগেনা? আমি মুখ নিচু করে বললাম, বিয়ে…। আমার বন্ধুটি হেসে ফেললো , ভাল্লাগেনা তাহলে বিয়ে করছিস কেন? আমি আবারো কপাল কুঁচকে জবাব দিয়েছিলাম, কে বললো তোকে আমি বিয়ে করছি? আমার নিষ্ঠুর বাবা মা আর আমার বোন আমাকে বিয়ে দিচ্ছে। আমার বন্ধুটি আর কথা না বাড়িয়ে কার্ড নিয়ে চলে গেলো । কিন্তু খুব ভালো লেগেছিলো জানতে পেরে দুদিন আগে দাওয়াত পেয়েও আমার সব বন্ধুরা বিয়েতে এসেছিলো ।

বিয়ে পরের দিন আমার বউ ভাত। আমাকে সাজিয়ে গুছিয়ে বিয়ের হলের সিংহাসনের মতো একটা চেয়ারে বসিয়ে দেয়া হলো । অতিথীরা হলে ঢুকেই মনোযোগ দিয়ে আমাকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করতে আগ্রহী হয়ে পরলেন। কেউ বলছে কি সুন্দর বউটা , কেউ বলছে কি মিষ্টি চেহারা। কেউ আবার একজন আরেকজনকে বলছেন দেখেন গহনা গুলো কি সুন্দর। কি জানি কোন জুয়েলারি থেকে নিয়েছে। দু’একজন আবার আমাকেই জিজ্ঞেস করলো কোন গয়না বাবার বাড়ীর কোন গুলো শ্বশুর বাড়ীর?কেউ কেউ আমাকে এমন ভাবে দেখছিলো মনে হচ্ছিল আমি কোন উদ্ভট প্রাণী , যা উনারা কখনো দেখেন নি। এই ঘটনা গুলো ৪০ বছর আগের ঘটনা ।তখন মানুষ গুলো অনেকটাই সরল মনের ছিলো । রাখি ঢাকি ব্যাপারটা অনেকের মাঝেই ছিলো না।

আমি মাথা নিচু করে বসে বসে আমার পরিবারের গুষ্টি উদ্ধার করছিলাম। ওদের জন্য আজকে আমাকে সং সেজে বসে থাকতে হচ্ছে। বিরক্তি যখন অতিরিক্ত পর্যায় চলে গেলো তখন একটু জোরেই বলে ফেলেছিলাম, ধ্যাত কিচ্ছু ভাল্লাগেনা। আমার খুব একজন ঘনিষ্ঠ বান্ধবী আমার পাশেই বসে ছিলো । ও আমার হাতে চাপ দিয়ে ফিস ফিস করে বললো , চুপ কর তোর শ্বশুর বাড়ীর লোক জন তোর দিকে তাকিয়ে আছে।

সময় চলে যায়। জীবনের একেক পর্যায়ে আসে একেক ধরনের অনুভূতি , একেক রকমের অভ্যাস ।একেক ধরনের সরলতা। অনেক আনন্দের মাঝে সুখের মাঝেও কিছু অন্য রকম হলেই আমি আজো বলি কিচ্ছু ভাল্লাগেনা। তবে এখন স্থান পরিবেশ বুঝতে পারি। মানুষ ধীরে ধীরে বিভিন্ন পর্যায় পেড়িয়ে একটা সমান্তরাল পর্যায়ে এসে পৌঁছে । আমিও এখন সে সমন্তরাল পর্যায়ে আছি।

ম্যালটন, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles