7.9 C
Toronto
বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

ইসলামিফোবিয়া : সন্ত্রাসীর কোনো ধর্ম নাই

ইসলামিফোবিয়া : সন্ত্রাসীর কোনো ধর্ম নাই
ছবিসালমা জাহিদ এমপি

রবিবার সন্ধ্যা। লন্ডন, অন্টারিও, কানাডা।

ইচ্ছাকৃতভাবে, পরিকল্পনামাফিক লন্ডন শহরে পরিবারের চার জন মানুষকে ট্রাক চাপা দিয়ে মেরে ফেলা হলো। কোনোমতে বেঁচে গেলো নয় বছরের বাচ্চা ফয়েজ। তার বাবা, মা, বোন আর দাদি নিহত। তারা পাঁচজন রাস্তা পার হবার জন্য অপেক্ষা করছিল। তাদের অপরাধ তাদের বেশভূষা ছিল মুসলিমদের। তারা কোনো অপরাধ করুক বা না করুক, যত ভালো মানুষই হোক না কেন; তাদের মরতে হয়েছে। মেরেছে ভেল্টম্যান নামের ২০ বছরের ট্রাকচালক। সে মুসলমানদের ঘৃণা করে। তার ইচ্ছা হয়েছে, মেরেছে।

- Advertisement -

কানাডায় রেসিজম ভালোমতো আছে। হোক সেটা অনেক দেশের তুলনায় কম। আমার মতে রেসিজমের সবচাইতে বড় সিম্পটম হলো- ধর্মকর্ম, হিজাব দেখলেই ক্ষেপে যাওয়া। রেসিস্টদের মনোভাব খুব নিম্নমানের। কানাডার সমাজের বড় সুনাম হলো সবাই সবাইকে শ্রদ্ধা করে, সব ধর্মের মানুষ একে অপরকে সম্মান করে, সংস্কৃতিকে সম্পদ মনে করে। তবে পুরো সিনারিও কিন্তু সেটা নয়। কদাকার মানুষের অভাব নাই।

ভিকটিমসরা হতে পারতো আমাদেরই কারো মা, বাবা, মেয়ে, বোন কিংবা স্ত্রী। নিরপরাধ মানুষ মারা, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড কানাডাতে আগেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে। কুইবেকের মসজিদে ছয়জনকে মেরে ফেলা হয়েছিল ২০১৭ সালে।

পরিবারে যেরকম কোনো একটা সদস্যের বিশেষ ত্রুটিকে সমস্যা হিসাবে গণ্য না করলে ভবিষ্যতে সেটার শাখা-প্রশাখা গজিয়ে সংসার জীবন তছনছ করে ফেলে, সেরকম রেসিজম, ইসলামোফোবিয়া, ঘৃণা; এসবকে পাত্তা না দেবার অর্থ দেশের চরম দুর্গতি ডেকে আনা। সত্য স্বীকার করতে হবে, মেনে নিয়ে ভুল সংশোধন করতে হবে।

খুঁটিনাটি রেসিজম দৃষ্টিগোচর হলেই থামাতে হবে। রসিকতা পর্যন্ত বরদাস্ত করা যাবে না। বিপথগামী মানুষগুলোর মধ্যে রেসিজমের বীজ বপন করা আছে কোনোভাবে। তারা তাদের ঘৃণা সব জায়গায় ছড়িয়ে দিয়ে নিজের অপরাগতা, ক্ষুদ্রতাকে জায়েজ করতে চায়। ফেইসবুকেও আছে, যাদের বড় ডিগ্রি থাকলেও শিক্ষিত বলতে খটকা লাগে। তারা একবার “হুক্কাহুয়া” বলে, আর হাজারটা মূর্খ “কেয়া হুয়া কেয়া হুয়া” করে এগিয়ে আসে।

ইসলামোফোবিয়া কমাতে হবে।

ইসলাম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়া মানুষগুলোর সংখ্যা অনেক, তবে তামাম জনসংখ্যার তুলনায় অনেক কম। মনে রাখতে হবে একজন বয়স্ক মানুষ মানেই যেমন সে জ্ঞানী নয়, একজন শিশু মানে কিন্তু সে অজ্ঞানী নয়। তবে কিছু লোক নেগেটিভ কথা বলবেই, যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করবে কেন এসব হচ্ছে। এসব ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড সমর্থনে বিন্দুমাত্র যুক্তি যারা তুলে ধরার চেষ্টা করবে, তারাই রেসিস্ট!

আজকে লন্ডনে তাদের স্মরণ-সভায় প্রধানমন্ত্রী, প্রিমিয়ার, মেয়র আর হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে প্রচন্ড শক্তিশালী একটা প্রতিবাদী অনুষ্ঠান হয়ে গেলো। সবাই প্রতিজ্ঞা করলেন রেসিজমের মূল উৎপাটন করবেন। সারা দেশের কানাডিয়ানরা অভূতপূর্ব সমবেদনা জানালো। কাঁদছে সারা কানাডাবাসী।

এদেশের নেতারা এটাকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বলে আখ্যায়িত করেছেন। বেঁচে যাওয়া ছেলেটার সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বর্ণনাতীত শোক নিয়ে জীবন এগিয়ে নেওয়া। সে কিন্তু ঠিকই পর্যবেক্ষণ করবে আমাদের! দেখবে আমরা শুধু কথায়, না কি কাজে বিশ্বাসী। এতবড় শোক ফয়েজ কিভাবে বয়ে বেড়াবে? আমরা কী উত্তর দেব?

সন্ত্রাসীর কোনো ধর্ম নাই, নীতি নাই, যুক্তি নাই।

আমাদের চেঞ্জ হতে হবে। সন্তানদের ছোটকাল থেকেই সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। বড়দের ভুল ধরিয়ে দিতে হবে।

কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না।

কাছের মানুষ হোক, ফেইসবুক হোক, কোনো প্রকার হুক্কাহুয়া বরদাস্ত করা যাবে না। কানাডার মতো দেশে আমরা রাস্তায় ভয় নিয়ে চলতে চাই না। গাড়িঘোড়াকে সন্দেহের চোখে দেখতে চাই না।

কোনো দেশের জন্যই সন্ত্রাস কাম্য নয়।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles