“কানাডায় তো এখন সব বাংলাদেশী চোরের বসবাস।”
আসলেই কী বাংলাদেশী যারা কানাডায় থাকে তারা সবাই চোর? গতকাল থেকে এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মনে।
গতকাল বাংলাদেশ থেকে এক লোক হঠাৎ মেসেন্জারে কল দিয়ে বসলেন।
অপরিচিত। আগে কোনদিন কথা হয় নাই।
অলসভাবে বসেই ছিলাম। যাক কলটা রিসিভ করলাম। অপর প্রান্ত থেকে:
: আসসালামু আলাইকুম
আমি উত্তরে বললাম, ওলাইকুম আসসালাম।
তারপর উনি শুরু করলন,
: কেমন আছেন?
: ভালো, আপনি কেমন?
: আলহামদুলিল্লাহ।
এখন বেশীরভাগ বাংলাদেশের মানুষ `ভালো আছি`র পরিবর্তে আলহামদুলিল্লাহ বলতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। যাহোক, তাতে দোষের কিছু দেখিনা। উনি চালাতে থাকলেন,
: দেশের বাড়ি কোথায়?
বললাম, অমুক জেলায়।
: ক্যানাডায় কী করেন?
এরপর আরো হাজারো প্রশ্ন। সবগুলোর জবাব দিলাম। যদিও ইচ্ছা করছিলনা। তারপরেও মেজাজ ঠান্ডা রেখে উত্তরগুলো দিলাম। ওনার প্রশ্নগুলো শুনে মনে হচ্ছিল, উনি ওনার বোনকে অথবা মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিবেন। সব যাচাই বাছাই করছেন।
ইতো:মধ্যে পনের মিনিটের মত কথা হয়ে গেছে। তারপর উনি তার আসল কথা পারলেন। সংক্ষেপে ওনার বক্তব্য হলো:
ওনার কানাডায় আসার ব্যাপারে আমার সাহায্য চান।মানে আমি যেন তাকে একটি চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেই। এতে ওনার ভিসা পাওয়াটা সহজ হবে। হয়ত কোন কনসালটেন্ট হয়ত ওনাকে এ পরামর্শটা দিয়েছেন।
বললাম, ভাই আপনি কানাডায় আসলে তখন আপনাকে চাকুরী পেতে হেল্প করতে পারব।
বললাম, আপনাকে তথ্য দিয়েও হেল্প করতে পারি। ক্যানাডার বাইরে থেকে কীভাবে জব পাওয়া যায় সে ব্যাপারেও আপনাকে তথ্য উপাত্ত্ব দিয়ে হেল্প করতে পারি। কিন্তুু চাকুরীটা আপনাকেই ম্যানেজ করতে হবে। আমার নিজের হাতে কোন চাকুরী নেই যে আপনাকে দেব।
কিন্তুু উনি তা বুঝতেই চাননা। উনি আমাকে অনুরোধ করেই যাচ্ছেন।
যাক, অনেক কথার পরে আমি আমার অপরাগতার কথা জানানোর সাথে সাথেই উনি রেগে গেলেন আমার ওপর। এক পর্যায়ে বলে বসলেন, “ক্যানাডায় শুধু বাংলাদেশী বড়বড় চোরেরা এবং তাদের বউও ছানাপোনাই বসবাস করেনা, আপনার মত ছোট বদমাস গুলোও থাকে।”
কি আর কইতাম কন? আমি তো হতভম্ব। তারপর মেজাজটাকে নিয়ন্ত্রন করে জিজ্ঞাসা করলাম,
আপনার এই ধারনা হল কেমনে?
উনি বললেন, বাংলাদেশী চোরেরা তো টাকা পয়সা মেরে নিয়ে গিয়ে কানাডায় বিশাল বিশাল বাড়ি ঘর কিনছে।
আমি বললাম, আমি তো তা করিনি,ভাই।
উনি বললেন, করেন নাই যে তা বিশ্বাস করবো কীভাবে?
এখানে চোরেরা থাকে এত কিছু জানার পরেও উনিও যে কানাডায় আসতে চাইছে তা আমার আর পাল্টা জিজ্ঞেস করার রুচি হলনা।
এরপর আর কথা বলার শক্তি পেলাম না। ফোনটা কেটে দিলাম।
ভাবতে লাগলাম, কিছু চোরেরা হয়ত বাংলাদেশ থেকে টাকা চুরি করে কানাডায় বাড়ি কিনছে ঠিকই। কিন্তু তা কী সবাই করছে? আর আমার মত ছাপোষা একজন মানুষ চিন্তা করছি কীভাবে লোকজনকে বুঝাবো আমি চুরি করে কানাডায় কোন টাকা পয়সা আনি নাই। আর সেই সার্টিফিকেট আমাকে কে দেবে?