8.7 C
Toronto
শনিবার, মে ১১, ২০২৪

পাখি

পাখি - the Bengali Times
পাখি নিয়ে আমার ভালোবাসার গবেষণার শেষ নেই একেক সময় আপ্লূত হয়েছি নানা রকম পাখি দেখে সেদিন কোথায় যেন টুন টুনি পাখির কথা পড়ে চমকে উঠেছিলাম

পাখি জাতিটা আমার অনেক প্রিয় । পাখি নিয়ে আমার ভালোবাসার, গবেষণার শেষ নেই ।একেক সময় আপ্লূত হয়েছি নানা রকম পাখি দেখে । সেদিন কোথায় যেন টুন টুনি পাখির কথা পড়ে চমকে উঠেছিলাম । টুনটুনি পাখি নামে যে পৃথিবীতে কোন পাখি আছে সেটাই জেনো ভুলে গিয়েছিলাম ।ভাবতে শুরু করলাম টুনটুনি পাখি নিয়ে ।

টরন্টোতে আমার বাড়ির আঙিনাতে একদিন কাকের ডাক শুনে ছুটে গিয়েছিলাম কাকটিকে দেখতে । এই কর্কশ কণ্ঠের পাখিটিকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। ভেবে আনন্দির হয়েছিলাম কাকেরা ক্যানাডাতে অভিবাসী হওয়ার সুযোগ পেয়েছে । আহারে কতদিন কোকিলের ডাক শুনিনা । মনটা কোকিলের ডাক শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলো । সেই কোকিলের গান প্রান ভরে শোনার সুযোগ হোল হওয়াই এর মাওয়াই দ্বীপে বেড়াতে গিয়ে ।

- Advertisement -

সময়ের ব্যবধানের জন্য অনেক ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেলো । আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে হোটেল রুমের জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালাম । উঁচু উঁচু পাম ট্রি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে । আমি নিজের মনে বলে উঠলাম, তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে উঁকি দেয় আকাশে । চারপাশ থেকে ভেসে আসছে পাখির কলরব । একটি কোকিল কোন একটি গাছে বসে বেসুরো গলাতে গান গেয়ে চলেছে । মনে হয় কোকিলের কোন দূর সম্পর্কের আত্নীয় হবে । কোকিলটি ভোর থেকে শুরু করে বেলা নয়টা পর্যন্ত গান গেয়ে গেলো ক্লান্তিহীন ভাবে । তার সাথে তার সখা সখীরাও সুর মিলাচ্ছে ।

রুমের বাইরে কফি হাতে নিয়ে ব্যলকনিতে এসে বসলাম । পাঁচতলা থেকে নীচে তাকিয়ে দেখলাম ঘুঘু পাখিদের চলাচল । একটি ঘুঘুকে দেখলাম আরেকটি ঘুঘুর ঠোটে ঠোট রেখে চুমু খেতে । ধরে নিলাম একটি ছেলে আর একটি মেয়ে ঘুঘু হবে । কারন পাখিদের সমকামী হওয়ার কথাটি এখনো কেউ আবিষ্কার করেনি । প্রকৃতির নিয়মে ছেলে ঘুঘুটি ভালবাসলো মেয়ে ঘুঘুটিকে । ভালোবাসা শেষ করে ছেলে ঘুঘুটি মেয়ে ঘুঘুটির উপর থেকে নেমে স্বদর্পে হাঁটতে শুরু করলো আর মেয়ে ঘুঘুটি হেলেদুলে ছেলে ঘুঘুটির পেছনে পেছনে হাঁটতে লাগলো । বিস্মিত হয়ে দেখলাম পাখিদের মাঝেও পুরুষত্বের দম্ভ ।

আমাদের আজকের পরিকল্পনা সমুদ্র সৈকতে যাবো । যদিও আমরা বসে আছি প্রশান্ত মহাসাগর ঘেরা দ্বীপে । আজ ভেবেই গেলাম আজ শুধু পা ভেজাবো গা ভেজাবো না। পা ভিজিয়ে হেঁটে বেড়ালাম সৈকতের এপ্রান্ত থেকে অপ্রান্ত । সূর্য ততক্ষণে মাথার ওপর প্রচণ্ড আক্রোশে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে শুরু করেছে । সমুদ্রের ঢেউয়ের পর ঢেউ আমার পা দুটু ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে ।আমার নিজেকে মনে হচ্ছিল চঞ্চলা কিশোরী । ঝাঁপিয়ে পরতে চাই সমুদ্রের বুকে ।

কিছুক্ষণ পর সূর্যের তাপে অস্থির হয়ে সৈকত ছেড়ে ওপরের দিকে উঠে এলাম । ছায়া সুনিবিড় জায়গাটি । বিশাল গাছগুলি উদারভাবে ছায়া বিলিয়ে যাচ্ছে ।আমিও একটি গাছে হেলান দিয়ে বসলাম । একটি শালিক পাখি উড়ে এসে ঠিক আমার পাশটিতে এসে দাঁড়ালো । তারপর দুটি তিনটি করে একঝাক শালিক এসে জরো হোল একই জায়গাতে । মনে মনে ভেবে নিলাম আজ হয়তো শালিকদের জরুরী সভা । ছোটবেলার কথা মনে পরে গেলো ।এক শালিকে দুঃখ , দুই শালিকে আনন্দ , তিন শালিকে চিঠি, চার শালিকে অতিথি কথা গুলো

শুধু বলতাম না মনে প্রানে বিশ্বাসও করতাম । আজ একঝাক শালিক আমার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে আজ কি ভাববো জানি না ।

এত কাছ থেকে আমি কখনো শালিক পাখি দেখিনি । মানুষ কেনো বলে হরিন চোখ কেনো বলে না শালিক চোখ । আজ যেনো শালিকের চোখ আবিষ্কার করলাম নতুন ভাবে । শালিকের চোখের চারপাশে যে এত শুন্দর করে শৈল্পিক ভাবে হালকা হলুদ রঙে আঁকা তাতো কখনো দেখিনি।শালিকের হলুদ পা নিয়ে কতো লিখা তাহলে শালিকের চোখ নিয়ে কেউ কিছু লিখেনি কেন? হয়তো লিখেছে আমি পরিনি ।

আজ সারাটা দিন গেলো নানা রকম পাখি ভাবনাতে । তারপরে আরো দশদিন কাটালাম মাওয়াই দ্বীপে বিভিন্ন জায়গাতে ঘুরাঘুরি ,নানা রকম অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন সুন্দর জিনিষে চোখ জুরিয়ে । তবে সে দশদিন কোকিলের বেসুরা গান নয় বরং আসম্ভব সুরেলা কণ্ঠের সকাল বিকেল গান শুনে মুগ্ধ হলাম মনে হলো এযেনো এই দ্বীপের কোকিলদের দায়িত্ব সকাল বিকেল সবাইকে গান শুনিয়ে মুগ্ধ করা । আমিও সে মুগ্ধতা নিয়ে ফিরে এলাম ।

ম্যাল্টন, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles