-0.4 C
Toronto
সোমবার, মার্চ ২৪, ২০২৫

মৃত্যু নিশ্চিত করতে ৪০ মিনিট ঘটনাস্থল পাহারা দিয়ে রেখেছিল দুর্বৃত্তরা

মৃত্যু নিশ্চিত করতে ৪০ মিনিট ঘটনাস্থল পাহারা দিয়ে রেখেছিল দুর্বৃত্তরা - the Bengali Times
নিহত মোহাম্মদ আনিস বামে ও মাসুদ কায়ছার ছবি সংগৃহীত

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার ও অন্তঃকোন্দল নিয়ে মারামারির ঘটনায় গেল কুরবানির ঈদের পর মামলা দায়ের করেছিল দুই পক্ষ। সেই মামলার জের ধরে বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) প্রকাশ্যে ফিল্ম স্টাইলে গুলি করে দুইজনকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের পরিবার ও তাদের স্বজনরা।

দুর্বৃত্তরা গুলি করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা গুলিবিদ্ধদের মৃত্যু নিশ্চিত করতে ৪০ মিনিট ঘটনাস্থল পাহারা দিয়ে রেখেছিল বলে জানিয়েছেন ওই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নিহত মোহাম্মদ আনিসের স্ত্রী।

- Advertisement -

৯নং ওয়ার্ডে পশ্চিম কুয়াইশ এলাকার ওসমান আলী মেম্বারের বাড়ির মৃত মো. ইসহাক মিয়ার পুত্র নিহত মোহাম্মদ আনিসের বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী এনি আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ সময় এনি আক্তারের পাশে নিহত আনিসের সত্তরোর্ধ্ব মা সায়রা খাতুন তার নাতি-নাতনিকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করতে করতে বারবার বলেছেন, তোমরা আমার ছেলেকে এনে দাও। আমার ছেলে তো নির্দোষ, সে কারো ক্ষতি করেনি। বরং সে এলাকার গরিব লোকজনকে সাহায্য করার পাশাপাশি অসহায় পরিবারের মেয়েদের বিয়েশাদিতে আর্থিক সহযোগিতা করত।

শুক্রবার (৩০ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে গণমাধ্যমকর্মীরা নিহত আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আনিসের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকায়। পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা তাকে হারানোর শোক সইতে পারছেন না। তাদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। বাড়িতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। পাশাপাশি এলাকাবাসীও এমন করুণ মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না।

অন্যদিকে, ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারিয়ে নানার বাড়িতে মানুষ একই এলাকার আবদুস সাত্তার মিস্ত্রির বাড়ি প্রকাশ বিল্লা বাড়ির মৃত মুন্সি মিয়ার মেয়ের ঘরের নাতি দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত মাসুদ কায়ছারের পরিবারেরও চলছে শোকের মাতম। তার বৃদ্ধ নানি ছেনোয়ারা বেগম নাতির শোকে নির্বাক হয়ে পড়েছেন। নিহত নাতির কথা বলতে বলতে বাকরুদ্ধ হয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। নাতির মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর থেকে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন অনন্যা আবাসিক এলাকার অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়ক হয়ে শহর থেকে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে হাটহাজারী উপজেলার সীমান্তবর্তী নাহার গার্ডেনের সামনে ওতপেতে থাকা দুর্বৃত্তরা আনিস ও মাসুদকে লক্ষ্য করে ফিল্ম স্টাইলে গুলি ছোড়ে। এ সময় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় আনিসের। কিছুদূর এগিয়ে গেলে উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ছাবের সওদাগরের দোকানের সামনে এসে মাসুদকে এলোপাতাড়ি গুলি করলে মৃত্যু হয় তারও।

নিহত আনিস শিকারপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং মাসুদ আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক। তারা স্থানীয় রাজনীতিতে হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইউনুস গণি চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। পূর্বশত্রুতার জেরে এই জোড়া খুন হয়েছে বলে দাবি করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিহত আনিসের এক রাজনৈতিক সহকর্মী।

নিহত মোহাম্মদ আনিসের শ্বশুর মো. শাহাজান জানান, ১০ বছর আগে আমার মেয়ে এনির সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় আনিস। এর মধ্যে তাদের দাম্পত্য জীবনে আসে বর্তমানে ৯ বছর বয়সি মেয়ে হুমাইরা আক্তার ও ৪ বছর বয়সি ছেলে মো. আনাস। আমাদের জামাতা ব্যবসার (মাটি ও বালি) পাশাপাশি রাজনীতি করত। তবে তিনি কখনো অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল না। তিনি অপরাজনীতির শিকার হয়েছেন। তাকে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমি এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

নিহত মাসুদ কায়ছারের মামি মনোয়ারা বেগম বলেন, মাসুদ কায়ছারে বাবার বাড়ি বোয়ালখালি এলাকায়। ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারিয়ে মাসুদ নানা বাড়িতে মানুষ হয়েছে। আমরা তার দেখাশোনা করে আসছি। সে পড়াশোনা করা একটি ছেলে। সে মোহাম্মদ আনিসের সঙ্গে থাকত এবং তার সাথে ইট-বালির ব্যবসা করত। তার কী অপরাধ, কেন তাকে নির্মমভাবে এভাবে গুলি করে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনার এবং তাদের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে, এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে হাটহাজারী মডেল থানা ও বায়েজিদ থানায় পৃথক দুইটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলেছে বলে জানান মদুনাঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. মহিউদ্দিন সুমন। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকাল ৪টা) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিহত দুইজনের মরদেহের ময়নাতদন্ত চলছিল বলে জানান ওই পুলিশ পরিদর্শক।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles