11 C
Toronto
সোমবার, মে ৬, ২০২৪

ত্রিশ না একত্রিশ লক্ষ

ত্রিশ না একত্রিশ লক্ষ

বুদ্ধিমান চৌ: যাই হোক আপনারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শুনতে এসেছেন। ভাই, ইতিহাস কি বলবো। আপনারা জানেন যে আমি ইতিহাসের একজন শিক্ষক। আমাকে ছাত্রদের সামনে সঠিক ইতিহাস বলতে হয়। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ হয়েছিল কিন্তু কতজন লোক সেই যুদ্ধে মারা গেছে তার সঠিক সংখ্যা আমরা আজও বলতে পারি না। এক-একজন এক-এক কথা বলেন। এটা হল বিজ্ঞানের যুগ। এই যুগে সঠিক হিসাব বের করা কোন ব্যাপার না।
বাংলাদেশ যুদ্ধের অনেক আগে শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। সেই যুদ্ধে হিটলার বাহিনীর হাতে ষাট মিলিয়ন লোক মারা যায়। সেই হিসাব থাকলে ১৯৭১ সালের কেন থাকবে না?

- Advertisement -

পৃথিবীর সব যুদ্ধের হতাহতের একটা পরিসংখ্যান আছে। আমরা যদি আন্দাজের উপর বলি ত্রিশ লক্ষ লোক মারা গেছে সেটার পক্ষে-তো কোন দলিল দেখাতে পারি না। বিদেশের মানুষ আমাদের কথা শুনে হাসে। তারা বলে পরিসংখ্যান দেখাতে। আমি ছাত্রদের বোঝাতে পারি না কোন সার্ভের উপর ভিত্তি করে এটা বলা হয়।

(দর্শকদের দিকে ইঙ্গিত করে) আপনারাই বলেন এতো ছোট একটা দেশ- ধরেন ষাট হাজার বর্গমাইল এলাকা। কি এমন কষ্ট হয় একটা সার্ভে করলে।
তারপর ধরুন রেপ ভিকটিম। তাদের সংখ্যা কত সেটা নিয়েও রয়েছে নানান জনের নানান কথা। বাংলাদেশের যুদ্ধকালীন ধর্ষণ ভিকটিমদের সঠিক সংখ্যা আমার বইতে পাবেন। আগামী বই মেলায় আমার একটা গবেষণাভিত্তিক বই বের হচ্ছে। আমি একজন মহিলা ডাক্তারের খোঁজ পেয়েছি। যিনি ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে গিয়ে রেপ ভিকটিমদের গর্ভপাত করিয়েছিলেন। তার ডাইরিতে মেয়েদের তালিকা আছে। কবে কোথায় কার গর্ভপাত করেছিলেন তার দিন ক্ষণ লিখে রেখেছেন। অনেক কষ্টে তার সাথে দেখা করতে পেরেছি। তিনি আমাকে সেই ডাইরিটা দিয়েছেন। আমার বই পড়লেই আপনারা জানতে পারবেন আসল পরিসংখ্যান। এভাবেই আমাদের বের করতে হবে আসলেই কতজন লোক ১৯৭১ সালে মারা গেছে কিংবা ধর্ষিত হয়েছে।

উপরের এই সংলাপ দিয়ে শুরু হয়েছিল ‘ত্রিশ না একত্রিশ লক্ষ’ নাটকটি। বুদ্ধিমান চৌধুরী মুখের কথাগুলো এক বুদ্ধিমান লোকের মুখে শুনেছিলাম। তিনিও বড় আকারে বই লিখে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদদের সংখ্যা কোনভাবেই ত্রিশ লক্ষ নয়। তিনি যুক্তিতর্ক এবং সুবিধা মত তথ্য দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষিতা নারীর সংখ্যা বানিয়ে বানিয়ে বলা হচ্ছে। বলা বাহুল্য আমি সামান্য একজন মানুষ। আমি কি পারি এমন বিদ্বান লোকের মুখোমুখি হতে। তাই নাটকের আশ্রয় নিতে হয়েছিল আমাকে। নাটকের সারমর্ম হলো, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ লোকের প্রাণ যায় নি সেটা প্রমাণ করছেন ভালো কথা। আমি যদি বলি ত্রিশ না একত্রিশ লক্ষ হবে সেই সংখ্যা, পারলে প্রমাণ করে দেখান আমি ভুল।

এখনো মনে আছে, এই নাটক শেষ হবার পর একজন দর্শক আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কেঁদেছিল। তখনই আমার বিশ্বাস জন্মে গেছে। পারবে না, বুদ্ধি দিয়ে কেউ কখনো নিজ জাতির বিশেষ গৌরবকে ছোট করতে পারবে না। তর্কের বাতাস উড়ে গেলে বুদ্ধিজীবীরাও ধপাস। ত্যাগ ও গৌরব পাটিগণিত দিয়ে মাপা যায় না।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles