10.4 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪

কবিতার মতো

কবিতার মতো

মনে করুন, আপনি নদীর ছবি তুলতে গেছেন।

- Advertisement -

অসম্ভব সুন্দর, ছবির মতো নদী। তবে ছবি তুলে জুত পাচ্ছেন না। কিছু একটা অনুপস্থিত। সৌভাগ্যক্রমে পেয়েও গেলেন যেটা খুঁজছিলেন। পাল তোলা নৌকা। সাদা পালের মাঝখানে লাল কাপড়ের তালি সেলাই করার কারণে ক্যামেরায় দৃশ্যপট প্রাণ ফিরে পেলো। ভাগ্য ভালো যে ছেঁড়াটা ছিল!

আপনার ভাগ্য আরও ভালো যে হঠাৎ এক জেলে তার গায়ে ঝুলানো জালটা অপরূপ কৌশলে নিখুঁতভাবে ছুঁড়ে দিলো বাতাসে। আপনিও তৈরী ছিলেন; সেটা পানি ছোঁবার আগেই হাই স্পিড শাটারে বেশ কিছু ক্লিক দিলেন। পেয়ে গেলেন মনের মতো ছবি। ছবিটা আরো মহিমান্বিত হতে পারতো যদি সবুজ শাড়ির লাল পাড়ে লাজুক রমণী ছয় মাসের সন্তান বুকে বেঁধে জেলেকে সাহায্য করতো।

আপনার চোখের সামনে তৎক্ষণাৎ ভেসে উঠলো ছবিটার এইচডি প্রিন্ট ভার্শন। ত্রিশ বাই পঞ্চাশ ইঞ্চি প্রিন্ট করে লাক্সারি ফ্রেমে বাধিয়ে ড্রইং রুমের দেয়ালে ঝুলিয়ে দিয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছেন। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব আপনার প্রতিভায় মুগ্ধ।

কিংবা আপনি ফেব্রুয়ারি মাসে সাত সকালে, কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরবেলায় বেড়িয়েছেন ছবি তুলতে। গ্রাম সাইডে হাঁটতে গিয়ে পেয়ে গেলেন কলাপাতা সবুজ ধানের বীজতলা। লুঙ্গি কাছা মারা, পাতলা গেঞ্জি গায়ে গাল ভাঙা কৃষকেরা ধানের চারাগুলো আঁটি বেঁধে ছুঁড়ে ফেলছে বিশ ফুট দূরে শিমুল গাছটার নিচে। আইলে কমলা শিমুল ফুলের কার্পেট। আপনি বাসায় গিয়ে বসে গেলেন সুপার স্পিড কম্পিউটারের বিশাল এইচডি স্ক্রিনে, ফটোশপের সামনে। মুগ্ধ হয়ে ডাক দিলেন প্রিয়তমা স্ত্রী কে, দেখে যাও ছবিটা!

ও হ্যা, আরেকটা দৃশ্যও তুলেছিলেন রেললাইনের পাশ দিয়ে হাঁটার সময়। মাটির ঘরের সামনে একদল ছোট্ট বাচ্চার দল আগুনের চারপাশে গোল হয়ে ঘিরে বসে লম্বা কাঠিতে মিষ্টি আলু গেঁথে পোড়াচ্ছে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে। সবার চোখে কি যে এক প্রত্যাশা, স্বপ্ন!
দিনটা আপনার পুরো সাকসেস!

ফেলানীর ছবিটা মনে আছে?
দেহটা আরও প্রাণ পেয়েছিল কাঁটা তারে বেঁধে উল্টো হয়ে ঝুলতে থাকার কারণে। ভাগ্য ভালো পরনে ছিল উজ্জ্বল লাল কামিজ আর নীল সালোয়ার। বেশ ফুটে ছিল। এরচাইতে মোক্ষম সাবজেক্ট আপনি সারা জীবন সাধনা করলেও হাতে গোনা কয়েকটার বেশি পাবেন না। লাল জামা না হয়ে সাদা জামায়ও অবশ্য মাত্রা পেতো, রক্তে রঞ্জিত হয়ে।
রচিত হয়েছিল বেশ কিছু কবিতা।

ক’জন সাধারণ মানুষের কষ্টের সন্ধান করবে? পালের ছেঁড়া অংশের দুর্দশার কাহিনী অনুভব করবে?
ছবি কবিতার মতো।
আপনি কিভাবে দেখবেন সেটা ফুটে উঠবে চিন্তা চেতনার ধরণের ওপর। প্রেমের কবিতাকে আপনি দেশ-প্রেমের সাথে কিংবা প্রেয়সীর সাথেও তুলনা করে গল্প সাজিয়ে ফেলতে পারবেন। আপনার পূর্ব নির্ধারিত প্রোগ্রামড কল্পনার ছাঁচে ঠিকই সেটা সেট হয়ে যাবে।

ক্ষুধার্ত মাঝির হাড় ভাঙ্গা খাটুনির মাছ পাবার অনিশ্চিত প্রচেষ্টা আপনার কাছে হয়ে উঠবে ড্রইং রুমের অপরূপ শোভা। ওদিকে হয়তো সে খালি হাতেই ফিরবে!
পেটে পাথর বাঁধা, ঋণে জর্জরিত, রক্ত পানি করা কৃষকের দেয়া মুক্তহস্তের উপহার দৃশ্য নিয়ে আপনি হয়ে উঠবেন হিরো।

কিংবা, এসব নিয়ে লিখা কবিতা যখন শত শত এলিট শ্রোতার সামনে আবৃত্তিকার তার নিখুঁত ভরাট কণ্ঠে, দাড়ি-কমার চতুর প্রয়োগে, আবেগের চৌকস ব্যাবহারের ছন্দে আবৃত্তি করবে; হাত তালিতে ফেটে পড়বে ডলবি ডিজিটাল অপেরা হাউজের দামি সুবাসের মূল্যবান বাতাস। ঝংকার উঠবে ঝাড়বাতিতে!
আমরা তাঁদের ব্যবহার করি।

 

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles