13 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪

উত্তম ও অধম

উত্তম ও অধম

বেশ কিছুদিন পূর্বে সত্যবাবু লিখিত “উত্তম ও অধম” শিরোনামে একটি কবিতা প্রকাশ করিয়াছিলাম। যাহারা আমার ন্যায় মধ্যবিত্ত বাঙালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করিয়া পিতা মাতাদিগকে কিছুটা বিরক্তিমেশানো ধন্য করিয়াছিলেন, উহারা স্মরণ করিতে পারিবেন, দেড়/দুই বৎসর বয়স্কাল হইতেই পিতা মাতাগন শিশুটির উপরে ছড়া নামক অত্যচারটি করিয়া থাকেন। সেই সকল শিশুগনকে নানা ধরনের ছড়া জোরপূর্বক মুখস্ত করাইয়া পরবর্তীকালে সেই সকল ছড়া আবার বাসায় আমন্ত্রিত অতিথিগনের সম্মুখে হাত পা নাড়াইয়া, ছলা কলা করিয়া অভিনয়ের সহিত উদগিরন করিতে হয়। ইহাতে কিন্চিৎ বিব্রত অতিথীগনের যেমন ভদ্রতা করিয়া এক হাতের তালুর সহিত অন্য হাতের তালু বারি দিয়া দিয়া কিছুটা শব্দদূষন করিয়া, ঠোঁটের কোনায় জোরপূর্বক মুচকি হাসি এবং মুখস্ত কিছু প্রসংশা বাক্য বলিতে হইত, তেমনি সকলের চক্ষুদৃষ্টি এবং মনোযোগ শিশুটির দিকে থাকাতে উহার আত্মারামও খাঁচাছাড়া হইবার উপক্রম হইত।

- Advertisement -

বাল্যকালে এহেন অত্যাচারের শিকার বহুবার হওয়ার কল্যানে বেশ কতক ছড়া মস্তিষ্কে এহেনরূপে গাঁথিয়া গিয়াছে যে ইচ্ছা থাকিবার সত্বেও বাহির করিতে পারি নাই। অতঃপর এই প্রবীনকালে আসিয়া যখন পশ্চাতে ফিরিয়া তাকাই, তখন আবেগে চক্ষু ছলছল হয় বৈকি। পিতা মাতা বর্তমানেও গর্ববোধ করিতেন যে অদ্যবধি সেই সকল ছড়া কন্ঠস্ত হইয়া রহিয়াছে। সুধি পাঠকসমাজ, আমার এই স্মৃতিশক্তির বিন্দুপরিমান তারিফ করিবার পূর্বে দয়া করিয়া জানিবেন যে বাল্যকাল হইতে কেবল ছড়াপ্রেমী আমি কাব্য, কবি কিংবা কবিতার আর কোনও শিক্ষা গ্রহণে ব্যার্থ হইয়াছি। শস্যক্ষেত্রে গড়ানো কাজকর্মহীন বেগুনের অপেক্ষা অধিক ক্ষ্যাত হিসেবে আত্মপ্রকাশে আমার লইজ্জা থাকিলেও কার্পণ্য নেই।
“উত্তম ও অধম” কবিতাটি কিন্তুক একটি অনুবাদ যাহা মহামতি শেখ সাদী কর্তৃক লিখিত এবং সত্যবাবু কর্তৃক অনুবাদিত। আমার পিতা বৃহত এবং ভারি অর্থবহ কবিতা পছন্দ করেন। তিনি এহেন কিছু কবিতা আমাকে মুখস্ত করাইয়াছিলেন। কবিতাটি আমাকে এক পায়ে দাঁড়াইয়া বলিতে হইত কারন কবিতাটি পথিক এবং কুকুরের আক্রমনে তাঁহার আহত হইবার কথা বলা হইয়াছে। তাই সেই আহত পথিকের ন্যায় একপায়ে দাঁড়াইতে হইত। বর্তমানে এই স্মৃতি যখনই মনাকাশে উড়ে আসে তখনই মনে হাহাকার পূর্ণ হয়। আহা পিতা নিশ্চয়ই আজও চাহিতেন যেন আমি একপায়ে দাঁড়াইয়া কবিতাটি আমার হেঁড়েকন্ঠে পাঠ করি। তিনি না জানি কত খুশি হইতেন।

কিছুকাল পূর্বে চেহেরা বই এর এই সামাজিক মাধ্যমে ঘুরিতে ফিরিতে হঠাৎই এই কবিতাটি চক্ষে পড়ে। দেখিবামাত্র উহা নকল করিয়া অগ্রপশ্চাত কল্পনা না করিয়া চেহার বই এ পোষ্টাইয়া দিই। ঘটনা হইল, ইহা আমার নিকট কেবলই এক মধুমাখা স্মৃতি, পরন্তু বর্তমান পৃথিবীর জিলাপির ন্যায় প্যাঁচ ইহাকে ব্যক্তিগত আক্রমন বলিয়া ঠাহর করিল। উহারা ধারনা করিয়া লইল কবিতাখানি সাদী সাহেব এবং সত্যবাবু কেবল উহাদের লইয়াই লিখিয়াছিলেন।কতকজন লিখিলেন কেহই উত্তম কিংবা অধম নন। কেহ বলিলেন এহেন মারাত্মক কবিতা আমার লিখিবার কারন দর্শাও। কিছুজন হস্যরস করিলেন।তখন , আমার বাল্যবেলার স্মৃতি যুদ্ধ ময়দানে এক আক্রমনাত্মক কামান হইয়া দাঁড়াইল এবং চেহারা বই এর গোপনাঙ্গের ম্যাসেন্জার নামক এক বিষফোঁড়ায় একটি বিশেষ গ্রুপ প্রতিষ্ঠিত হইল।

ঘটনার প্রবাহ দেখিয়া কবিতাটির অর্থ চিন্তা করিতে বাধ্য হইলাম।বুঝিয়ে গেলাম কেন সত্যবাবুর এই কবিতা আমার পিতার মনে এতখানি দাগ কাটিয়াছিল এবং এজন্যই সকলকে একপায়ে দাঁড়াইয়া বলিতেছি, মনোযোগ দিয়া শুনিও:

দন্ত যত ধারালো হউক না কেন, কুকুরদিগকে কামড়ানো যাইবে না।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles