14.5 C
Toronto
শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪

ফায়ার ড্রিল

ফায়ার ড্রিল
সাবান পানি দিয়ে কাঁচ মুছে জানালার কব্জায় WD 40 লুব্রিকেন্ট মাখিয়ে সহজ করে ফেলে পার্মানেন্ট মার্কার দিয়ে দিক নির্দেশনা দিলাম কোনদিকে হ্যান্ডেল ঘোরালে জানালা খুলবে কোনদিকে ঘোরালে বন্ধ হবে

ছুটির দিন।

কাজ খুঁজে বের করলাম। বাসা থেকে বের হলেই মনে পড়ে হাজারটা কাজ রেখে বের হচ্ছি; এই কাজ করিনি, ঐ কাজ করিনি..। অথচ বাসায় ফিরলে মাথা ফাঁকা হয়ে যায়, কিচ্ছু মনে পড়ে না। লিস্ট ছাড়া বাজারে গেলে ঠিক এরকম হয়। আজ ঠিক করেছি বাড়ির সব জানালাগুলো মুছবো, তেল দিবো কব্জায়।

- Advertisement -

সাবান পানি দিয়ে কাঁচ মুছে, জানালার কব্জায় WD-40 লুব্রিকেন্ট মাখিয়ে সহজ করে ফেলে পার্মানেন্ট মার্কার দিয়ে দিক নির্দেশনা দিলাম কোনদিকে হ্যান্ডেল ঘোরালে জানালা খুলবে, কোনদিকে ঘোরালে বন্ধ হবে। আগে আন্দাজে চেষ্টা করতে করতে জানালার হাতলের বারোটা বেজে গেছে।

কাজ শেষে বাচ্চাদের ডাক দিলাম, বিত্ত দখিনা এদিক আয়।
ওরা ট্যাব-কম্পিউটার রেখে বিরক্ত মুখে এসে দাঁড়ালো।
আজকে ফায়ার ড্রিল চলবে। বল এখন, যদি উপরের তলায় আগুন লাগে, তখন তোরা কী করবি? বিত্ত আগে বল
– পালাবো!
– গুড! যদি দেখিস সিঁড়িঘরে আগুন, নিচে নামতে পারছিস না; তখন?
সে জানালার দিলে তাকাল।
দখিনা তুই কী করবি?
সেও ইতস্ততভাবে জানালার দিকে তাকালো।
.
ঠিক ধরছিস; জানালা দিয়ে পালাতে হবে। বিত্ত, কীভাবে পালাবি দেখা।
সে অনেক কষ্টে জানালা খুলে বত্রিশ পাটি বের করে বলল, এবার লাফ দিবো। আমি আবার জানালা আটকিয়ে দিয়ে দখিনার দিকে তাকিয়ে বললাম, এবার তুই খোল।
.
ভারি জানালা খুলতে দখিনাকে অনেক বেগ পেতে হলো। সে এমনিতে খুব টিঙটিঙা হাড্ডিসার, দুর্বল।
তারপর?
– জানালা দিয়ে পালাবো? [দখিনা উপর থেকে নিচে তাকিয়ে নিয়ে চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করে ]
– অফকোর্স!
– আব্বু, তুমি কি বাসায় আগুন দিয়ে আমাদের প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা নিবা?
– আরে ধ্যাৎ! যদি দেখিস পালানোর কোনো উপায় নাই, তখন জানালা দিয়ে সোজা লাফ দিবি নিচে!
– এতো নিচে ব্যাকিয়ার্ডে লাফ দিলে কি ডাই করবো [মারা যাবো]?
– নাহ.. বড়জোর হাত পা ভাঙবে? তবে চেষ্টা করবি মাথা যেন গ্রাউন্ড এ বাড়ি না খায়
– মরার থেকে হাত পা ভাঙা বেটার [বিত্ত আবার বত্রিশ পাটি বের করে যোগ করলো]
– রাইট। আর ভালো কথা, খবরদার তখন ট্যাব/আইপ্যাড খুঁজতে যাবি না। সবকিছু ফেলে পালাবি। এক সেকেন্ডের অনেক দাম!
– আব্বু আমার মনে হয় তুমি সবার আগে তোমার ক্যামেরাটা খুঁজে গলায় ঝুলায়ে তারপর লাফ দিবা! হি হি!

তাদের নিজেদের ঘরে নিয়ে গিয়ে তাদের জানালা কীভাবে দ্রুত খুলতে হবে শিখিয়ে দিলাম। এবার তারা স্বস্তি পেলো; কারণ তাদের ঘর থেকে লাফ দিতে হবে না, জানালার নিচেই বাড়ির ঢালু ছাদ।

এবার গিন্নিকে ডাক দিলাম, কোই গেলা শিগগির আসো।
গিন্নি আসতেই বললাম, মনে করো বাসায় আগুন লাগছে, তখন কী করবা প্রথমে?
– গয়নাগুলো খুঁজে নিয়ে ব্যাগে ভরে চম্পট দিবো!
– ইয়ার্কি না। সিরিয়াসলি বলো, ফায়ার ড্রিল চলতেসে
– প্রথমে নাইন-ওয়ান-ওয়ান এ কল দিবো
– আরি তাই তো! শোন বাচ্চারা, সবার আগে নাইন-ওয়ান-ওয়ান এ কল দিবি। তারপর?
– পালাবো?
– যদি দেখো সিঁড়িঘরে আগুন জ্বলতেছে, তখন?
– জানালা দিয়ে পালাবো?
– গুড! জানালা খুলে দেখাও।

সে নির্বিগ্নে জানালা খুলে বলল, লাফ দিয়ে দেখাবো?
– থাক। তারপর?
– তারপর পারলে জ্যাকেট গায়ে দিব। এই মাইনাসে ঠান্ডায় জমে মরার চাইতে গরম আগুনে মরা অনেক আরামের
– তারপর?
– সবার আগে বাচ্চাদের বাঁচাবো
– তারপর?
– সময় পেলে তোমারও খোঁজ নিব..
– জাযাকাল্লাহ খাইরান! তারপর?
– জানালা দিয়ে কম্বল, বালিশ, কুশন; যা কিছু হাতের কাছে পাবো সব নিচে ফেলে গদি বানায়ে নিয়ে তারপর লাফ দিবো
– এক্সেলেন্ট! হোয়াট এন আইডিয়া! বাচ্চারা শুনলি তো? তবে সময় না পেলে জ্যাকেট পরার দরকার নাই, পাশের বাড়িতে শেল্টার নিবি। এমন কি বাথরুমে যে অবস্থায় থাকবি, ঐ অবস্থায়ই বের হয়ে আসবি!
.
এটা শুনে ছেলেমেয়ে দু’জন প্রতিবাদ করে উঠলো। এটা মানা নাকি তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
আচ্ছা চান্দু, আমি আটকা পড়লে আমাকে বাঁচাবা না?- গিন্নি কৌতুক আর কৌতূহলপূর্ণ দৃষ্টিতে জানতে চায়।

এবার সবাইকে নিচে নিয়ে গিয়ে ফায়ার এক্সটিংগিশার [আগুন নিভানো সিলিন্ডার] কীভাবে এক হাত দিয়ে ধরে আরেক হাত দিয়ে পাইপ টার্গেট করে লিভার প্রেস করে দশ ফুট দূর থেকে আগুন নিভাবে হয় দেখিয়ে দিলাম।

.
সন্ধ্যার দিকে বাসায় পায়চারি করতে করতে গিন্নিকে বললাম, আজকে কত ইম্পরট্যান্ট ট্রেইনিং দিলাম দেখলা! তোমাদের জীবন বাঁচায়ে দিলাম!
– তোমার প্রতি আমি খুবই কৃতজ্ঞ চান্দু..। তো কী করতে হবে?
– না মানে.. বলতেছিলাম, এখন যেন আবার কষ্ট করে মশুরের ডাল-টাল ভিজাতে না যাও..। দুপুরে কতকিছু রান্না করলা!

গিন্নি মশুর ডালের পেঁয়াজু ভেজে, চা হাতে এনে বলল, একটা প্রশ্ন ছিল
– বলো?
– তোমাকে অফিস ট্রেইনিং দিছিলো, সার্টিফিকেট দিছে না?
– হু
– আমাদের সার্টিফিকেট দিবা না? আচ্ছা চান্দু, মনের আগুন নিভানোর উপায় তোমার জানা আছে?
আমি কী বলবো বুঝতে পারি না। বোকার মতো ফ্যালফ্যাল চেয়ে হাসতে থাকি।
ভদ্রমহিলার মনে আবার কিসের আগুন?
চিন্তায় ফেলে দিলো..

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles