13.9 C
Toronto
শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪

ডাউনটাউনে একা একা

ডাউনটাউনে একা একা
টরন্টোতেও এমন কিছু ব্যক্তি আছে যাদের এগুলো করতে ভাল লাগেএদের বেশীর ভাগের বিচরণ ডাউন টাউনেইউনিভার্সিটি যাওয়ার পথে একজনকে দেখি প্রতিদিন

ইউনিভার্সিটি আমার বাসা থেকে ৩০ মিনিট হাঁটার দূরত্বে। এই পথটা আমি প্রতিদিনই হেঁটে যাই আবার ফিরেও আসি ৩০ মিনিট হেঁটে যত রাতই হোক কিংবা বৃষ্টি বা বরফ পড়ুক না কেন।দু’একজন ভবঘুরে রাতে সামনে পড়ে। ছিনতাইকারী বা হাইজ্যাকারের দেখা পাওয়া যায়না এখানে।ভবঘুরেরা হঠাৎ এসে হাত পাতে তারপর চোখের মুহুর্তে উধাও হয়ে যায়।ডাউন টাউনে এই উৎপাত বেশী কিন্ত্ত পুলিশ তৎপর। মাঝে মাঝে ওদের কে নিয়ে যায় শেলটারে যেখানে ওদের পূর্ন নিরাপত্তা আছে তারপরও ভবঘুরেরা ভবঘুরে অর্থাৎ আবার বাইরে চলে আসে।এটাই ওদের ভাল লাগে।একবার লন্ডনে টিউব রেলওয়ে ষ্টেশনের প্রবেশ মুখে একটি ২০/২২ বৎসরের ছেলেকে হাতপাততে দেখে জিজ্ঞাসা করেছিলাম-তুমি ভিক্ষা কর কেন? সে উত্তরে বলেছিলো ভিক্ষা করতে তার ভাল লাগে।টরন্টোতেও এমন কিছু ব্যক্তি আছে যাদের এগুলো করতে ভাল লাগে।

এদের বেশীর ভাগের বিচরণ ডাউন টাউনে।ইউনিভার্সিটি যাওয়ার পথে একজনকে দেখি প্রতিদিন। ভারী স্বাস্থ্যের অধিকারী এবং ভদ্র।কফি রেষ্টুরেন্ট ‘টিম হর্টন’ এর সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। দরজাটা খুলে দেয়। কিছু নিয়ে ফেরার সময় ওর হাতে কখনও কয়েন দেই, কখনওবা খাবার দেই।মাঝে মাঝে হাই হ্যালো করি।সেদিন সকালে প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে দেখি সে বসে আছে।মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। চেহারায় কথাবার্তায় সে একজন খাঁটি কানাডিয়ান।কফির দোকানে না ঢুকে সোজা ভার্সিটির দিকে হাঁটা শুরু করলাম।তার সামনে যেতেই সে একটু মিহি সুরে মিনতি করে বললো- দু’একটি কয়েন দিয়ে যাও।যেহেতু কফি কিনলামনা তাই তাকে কোন কয়েন দেবোনা বলে আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। হাত নেড়ে আর ইশারায় সেই কথাই বোঝালাম কিন্ত্ত বেশী এগোতে পারলাম না।দাঁড়িয়ে পড়লাম।পকেটে হাত দিলাম। দু’টো কয়েন মুঠিতে আনলাম।

- Advertisement -

দেখলাম সে আমাকে দেখছে।ফিরে এলাম তার কাছে। একটু অবাক হলাম- সে হাত না বাড়িয়ে আমাকে বললো- যদি কিছু মনে না করো তোমায় একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো? বললাম- কি জানতে চাও?- তুমি কোন দেশের নাগরিক? তার প্রশ্ন। ভাবলাম বলি কানাডার নাগরিক কিন্ত্ত তাতেতো তার উত্তর মিলবে না। তাই একটু রহস্য করে উপর দিকে হাত দিয়ে বললাম-আল্লাহই জানেন। সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এবার বললাম-বাংলাদেশ। – বেংলাদেশ। মনে হলো সে বাংলাদেশকে চিনে।এবার সে হাত বাড়ালো কয়েন নেয়ার জন্য। দুটি সমমূল্যমানের কয়েন তার হাতে দিলাম।সে বললো-একটি আমার। উপরের দিকে হাত তুলে বললো- আর একটি তাঁর।

বললাম-ওটিও তোমার তবে তাঁর নাম স্মরণ করে দিলাম।তাকে বললাম আমি এখন কানাডার নাগরিক। এবার সে উঠে দাঁড়ালো। আমার দিকে হাত বাড়ালো।হ্যান্ডশেক করতে করতে বললো- তুমি তাহলে ‘Bangladesh born Canadian’ বললাম-হ্যাঁ।আমি সামনের দিকে হাঁটা শুরু করেছি। এবার কানে এলো সে বলছে-বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার শুভ কামনা।আমার জন্য বললো না আমার জন্মভূমির মানুষদের জন্য বললো বুঝতে পারলাম না।মনে পড়লো বাংলাদেশের মানুষের কথা। সত্যি তো তারা কেমন আছেন?তাদের জন্যও আমার শুভকামনা।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles