10.4 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

সেদ্ধ ডিম আর গরম ম্যাগি নুডলস

সেদ্ধ ডিম আর গরম ম্যাগি নুডলস
ফাইল ছবি

রাত বারোটা ত্রিশ।
তিন তলা থেকে নেমে দোতলার দরজা নক করতেই আমার বোন সিটকিনি খুলে বলল- ভাই রে, খিদে? [যেন সে জানতো আমি আসবো]
– হু
– কিছু বানায়ে দি?
– নাহ.. ফ্রিজে মিষ্টি, সিঙ্গারা, পেয়ারা তো আছে..
– চা?
– দিতে পারিস।

ফ্রিজ থেকে মৌবন মিষ্টান্ন ভান্ডারের ‘ইলিশ’ নামক পেটি সাইজের দুটা মিষ্টি বের করে পাউরুটির মধ্যে দিয়ে খেতে খেতে চায়ে চুমুক দিয়ে বোনের সাথে গল্পে মেতে উঠি। সে বলল- ভাই, আপেল, ড্ৰাই কেকও আছে কিন্তু।

- Advertisement -

নাস্তা শেষ করে এক বোতল পানি, তিলেখাজা নিয়ে তিন তলায় রেখে আবার বের হয়ে চার তলা পেরিয়ে ছাদে উঠে চেয়ারে বসে চাঁদটার দিকে চেয়ে থাকি। হালকা ঠান্ডা, আকাশ ক্লিয়ার। শিউলি ফুলের সুবাস আসছে। আচ্ছা, একটা ব্যাপার লক্ষ্য করছেন; শিউলি ফুলের সুবাসে কেমন একটা হাফ বয়েল্ড ডিমের ফ্লেভার আছে? এরকম চমৎকার ওয়েদারে দুটা হাঁসের ডিম সেদ্ধ পেলে মন্দ হতো না। গা গরম করতে এর জুড়ি মেলা ভার।
.
খরগোশটা দৌড়ে পায়ের কাছে এসে বসলো। তার মাথা, গলায় হাত বুলাতে থাকি। থুতনিটা মেঝের সমান্তরালে ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে গেলো। পনেরো মিনিট আকাশে দূর গ্যালিক্সির দিকে তাকিয়ে থাকি। হাজারো তারার মেলা। চাঁদটা ঠিক পাকান পিঠা সাইজের।

ছাদ থেকে নামার সময় চার তলার মেইন দরজাটা খোলা মনে হলো..। আস্তে করে ধাক্কা দিতেই সেটা খুলে গেলো। এরা দরজা বন্ধ করতে ভুলে গেছে? আস্তে করে ডাক দিলাম, ভাবি!

কোনো সাড়া শব্দ নাই। ডাইনিং এর দিকে কিছুটা এগুতেই হঠাৎ করে যেন বর্ষাকাল চলে আসলো। প্রবল নাক ডাকার শব্দ। কোনোটা কোলা ব্যাঙ, কোনোটা বা সোনা।
আমি দ্বিধাগ্রস্তভাবে ডাইনিং এর আলোটা জ্বালিয়ে চেয়ারে বসলাম। সবাই যে আরামে ঘুমাচ্ছে; তাদের ডেকে তোলাটা খুব অন্যায় হবে। কৌতূহলবশত টেবিলে হাড়ির সর্পোশ সরাতেই দেখি খেজুরের রসের দুধ পিঠা। রান্নাঘর থেকে বাটি এনে দুটা তুলে পর্যাপ্ত রস ঢেলে চুবিয়ে ফেলি। গোলাপী কালারের ঘন দুধে পারফেক্ট সফ্ট পিঠাগুলোকে মনে হচ্ছে যেন সমুদ্রের তলায় রংবেরঙের কোরাল রিফের সারি! খেজুরের রস আর দুধের কম্বিনেশনটা অপূর্ব। ঠিক যেন মৌমাছির চাক ভেংগে মধু খাচ্ছি!

আটটা পিঠা থেকে কমে হলো ছয়টা। ওরা তিন জন, তাই পার পারসন দুইটা করে এনাফ। তবে বড়ো ভাইয়ার যেহেতু ডায়াবেটিস, তাই আরেকটা কমিয়ে ফেলে তার উপকার করলাম। ছেলেটা একদম কন্ট্রোল করতে পারে না। সামনে রাখা কফির কৌটাটা ঝাকিয়ে দেখি কফি আছে। মাইক্রোতে আধা কাপ পানি গরমে দিয়ে ব্ল্যাক কফি বানাই। দুধ কফির চাইতে হাজারগুন ভালো।

মুখটা বেশি মিষ্টি হয়ে আছে। কফিতে চুমুক দেবার আগে ফ্রিজটা খুলে দেখি কয়েকদিন আগে চাইনিজ থেকে পার্সেল করে আনা থাই সুপগুলো ওভাবেই ধরা আছে। আধা বাটি গরম করে একটু সিরকা আর দুটা কাঁচামরিচ, সামান্য হট সস দিয়ে ঘুটা দিতেই দারুন ফ্লেভার ছুটতে লাগলো। কফিটা স্যুপের পরেই খাই..। বাংলাদেশের চাইনিজ খোদ চীনকেও হার মানাবে। সাথে দুই পিস চিকেন ফ্রাই।

রাত একটা ত্রিশ।
আর অপেক্ষা না করে দরজাটা সাবধানে টান দিয়ে আসিয়ে রাখি। আল্লাহ ভরসা। চার তলা থেকে তিন তলায় নেমে দরজা বন্ধ করে মশারী খাটিয়ে শুতে না শুতেই বাইরের দরজায় নক করার শব্দ। দরজা খুলতেই দেখি দোতলা থেকে আমার বোন এসে একটা ঢাকনা দেয়া বাটি হাতে দাঁড়ানো। এগিয়ে দিয়ে বলল- ভাই রে.. এটা খায়ে ঘুমাস। এতক্ষন ছাদে ছিলি; খিদে লাগতে পারে। আর শোন, একটু ভুড়ি আর পরোটাও আছে। লাগলে বলিস, গরম করে দিব; লজ্জা করবি না..।

আমার মমতাময়ী বোনের দেয়া বাটির ঢাকনা খুলে দেখি একটা সেদ্ধ ডিম আর গরম ম্যাগি নুডলস। পিরিচে দুটো জিলাপিও..

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles