-0.8 C
Toronto
সোমবার, মার্চ ১৮, ২০২৪

কানাডার সময় ব্যবধান

কানাডার সময় ব্যবধান - the Bengali Times
দেশে আমার বোনকে ফোন দিয়ে বললাম, গুড মর্নিং বুড়ি!

সে হকচকিয়ে, সামলিয়ে হেসে বলল, গুড ইভনিং ভাই!

- Advertisement -

এক পুরানা বন্ধু আমাকে এক যুগ পর ফেইসবুকে খুঁজে পেয়ে ফোন দিচ্ছে রাত দুইটা/তিনটায়..। হয়তো ঐ সময়টায় সে ফ্রি থাকে। কেমনে ধরি তার ফোন?

আমিও মাঝে মাঝে ভুলে সৌদি আরবে থাকা বন্ধুকে ফোন দিলে সে ঘুম ঘুম গলায় গালি দেবে, এই বুকা.. কয়টা বাজে হুঁশ আছে?

অবশ্য ইচ্ছা করেও যে মাঝে মাঝে অসময়ে ফোন দেই না, তা না..

তবে আমার নরওয়েজিয়ান বন্ধুকে পাওয়া খুব সহজ। বিকাল চারটা তার ডেডলাইন, এর পরে আর ফোন দেই না। তবে সে গভীর ঘুমায়ে গেলে “জরুলী” মেসেজ পাঠাই- “ও কাহা আসো না গেসো?”। অবশ্য নরওয়েতে রাতই কি, আর দিনই বা কি.. মাথার উপর গনগনে সূর্য জ্বলজ্বল করে। নড়েও না, চড়েও না। এপ্রিল থেকে অগাস্ট পর্যন্ত সূর্য ডোবে না। এর মধ্যে লোকে কেমনে ঘুমায় আল্লাহই জানে। তার ওখানে, ‘ট্রোমসো’ শহরে “পোলার নাইট” এ, অর্থাৎ নভেম্বর থেকে জানুয়ারী পর্যন্ত সূর্যই উঠে না। রাতের বেলায়ই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হয়।

ইশ!

কানাডার রাত নয়টা মানে বাংলাদেশের সকাল সাতটা। সবচাইতে খারাপ অবস্থা অস্ট্রেলিয়া আর কানাডার মধ্যে। এখানে রাত নয়টা মানে ওখানে দুপুর বারোটা। বন্ধুদের ফোন দিতে হয় ছুটির দিনে। হয় সকাল আটটার মধ্যে ফোন দাও, নয়তো রাতে। আমার এক আত্মীয়র বাচ্চা ছেলেটা বাংলাদেশে তার মাকে জিজ্ঞেস করেছিল, আম্মু কানাডাতে রাতের বেলায় কেন বাচ্চারা স্কুলে যায়?

যে জন্য লেখাটা।

কানাডা কিংবা বাংলাদেশ, বা যে কোনো দেশ; সব জায়গার মানুষই ব্যস্ত। অফিস, বাচ্চাদের স্কুলে আনা নেওয়া, বাজার করা, ঘর গুছানো, রান্না বান্না; সবই পুরোদমে চলে। অনেক বিচক্ষণ মানুষ সময় বুঝে, হিসাব করেই ফোন দেন। আর যারা পারেন না, তারা ফোন করার আগে ছোট্ট করে গুগল করে দেখে নিতে পারেন এখন কোথায় কয়টা বাজে। সার্চ দিন- Local Time Canada, Local Time Dhaka বা Saudi Arabia Local time. সেকেন্ডের মধ্যে চলে আসবে। আপনি হয়তো রিলাক্স করে ঘুমুতে যাবার আগে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে ভাবলেন প্রিয় বান্ধবীকে ফোন দিয়ে সুখ দুঃখের কথা বলবেন। ঘুম ভালো হবে। ওদিকে আপনার বান্ধবী তখন ব্যাস্ত রান্না-বারি, ঘর গোছাতে। মেহমান আসবে দুপুরে..

অনেকেই মুখ ফুটে বলতে দ্বিধা করে; ফোনদাতার তুমুল আগ্রহ দেখে বলতেও পারে না ‘আজ রাখি’। আর যারা ফোন গ্রহীতার ব্যস্ততা দেখেও ফোন রাখেন না, ডিজেল ইঞ্জিন, তাদেরকে নিয়ে কিছু বলার নাই। তাদের জন্য খাস দিলে দোয়া..

তাই পৃথিবীর যে প্রান্ত থেকেই ফোন করুন, আগে জিজ্ঞেস করুন এখন কথা বলা যাবে কি না। ইয়ারের বন্ধু হলে ইজিলি বলা যায় পরে ফোন দিস। কিন্তু অনেকেই স্বভাবসূলভ বলে ফেলে “বিজি না”। কারণ ভেবেছিল মিনিট পাঁচেকে কথা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আধা ঘন্টায়ও যখন ফোন ছাড়ে না, জোশ উঠে যায়; তখন পড়ে বিপদে।

আমি নিজেও মাঝে মাঝে অস্বস্তিতে পড়ে যাই। দেশে ফোন দিতে তিনবার ভাবি। দেখা যায় আম্মা খেতে বসেছে বা ইন্সুলিন নেবে কিছুক্ষনের মধ্যে। বেচারা তখন ছেলের সাথে কথাও বলতে চায়, ইন্সুলিন নেবার সময়ও চলে যায়।

মদ্দা কথা হলো, দেশের মধ্যে হোক বা বিদেশে, নিজেকে কন্ট্রোল করুন। শুধু নিজের কথা না বলে অন্যের কথাও শুনুন। বিনয়ের সাথে ‘না’ বলতে শিখুন। আবার আমার মতোও হইয়েন না; ফোন ধরতে ইচ্ছা হয় না, কথা বলতেও ইচ্ছা হয় না..

লোকে ভাবে বিজি!

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles