10.4 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪

খুব অল্প বয়সেই বাড়ি থেকে ১০ বছরের বড় একটা লোকের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেয়, আমার দমবন্ধ লাগত, তারপর…

খুব অল্প বয়সেই বাড়ি থেকে ১০ বছরের বড় একটা লোকের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেয়, আমার দমবন্ধ লাগত, তারপর…
প্রতীকী ছবি

সম্পর্কে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস ও গভীর ভালোবাসা গড়ে উঠতে সময় লাগে। সম্বন্ধ করে বিয়ে হলে সেই সময় লাগে বেশি। একজন তরুণী সেই সমস্যার মধ্যেই ছিলেন। তারপর যা হল, সেই কথা নিজেই জানালেন তিনি।

কেউ হয়তো ঠিকই বলেছিলেন যে, স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক রাখার জন্য নিজেদের মধ্য়ে বোঝাপড়াটা খুব প্রয়োজন। তাই বিয়ের পরেও সম্পর্ক ঠিক রাখতে নিজেদের মধ্যে ভালোবাসা থাকা প্রয়োজন। একে অপরকে বোঝা প্রয়োজন। লভ ম্যারেজে (Love Marriage) ইতিমধ্যেই নিজেদের মধ্য়ে চেনা শোনা থাকে।

- Advertisement -

সেক্ষেত্রে ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে সংসার করতে সবাই চান। স্বামী-স্ত্রীর মধ্য়ে ভালোবাসা(Husband Wife Romance) থাকে ভরপুর। কিন্তু সম্বন্ধ করে বিয়ে হলে সেই বিষয়টা থাকে না অনেক সময়ে। কারণ, বাবা মায়েরা দেখেশুনে বিয়ে দিলে, সেই সম্পর্কে এই গাঢ়ত্ব তৈরি হতে সময় লাগে। তাঁরা ধীরে ধীরে কাছে আসেন। আমার ক্ষেত্রেও বিষয়টা ঠিক তাই হয়েছিল। ঠিক কীভাবে আমার বিবাহিত জীবন(Married Life)একটু একটু করে পাল্টে গেল, সেই কথা আমি জানাব।

মাত্র কুড়ি বছর বয়সেই বিয়ে হয়ে যায়
আমার যখন বিয়ে হয়, তখন আমি আমার স্বামীকে ঠিকভাবে চিনতামও না। তিনি আমার কাছে পুরোপুরিভাবেই অপরিচিত ছিলেন। সেই সময়ে আমার বয়স ছিল মাত্র ২০। আমাদের কখনও ফোনে কথাও হয়নি। আমার সেই সময় বলিউড ছবি দেখতে ভালো লাগত। বলিউডের পর্দায় দেখানো নানারকম প্রেমের গল্প আমায় ভাবাত। আমার নিজের জীবনেও ঠিক ওরকম প্রেম চাইতাম আমি। ভাবতাম, বিয়ের পর আমার জীবন সেরকমই হবে।

আমি ভাবতাম, বিয়ের পর আমি একজন খুব যত্নশীল স্বামী পাব। তিনি সব সময় আমার কথা ভাববেন। আমায় যত্ন করবেন। আমায় ভালোবাসবেন। ছোট ছোট সন্তান নিয়ে আমার সংসার আনন্দে ভরে উঠবে। কিন্তু বাস্তবে সব সময়ই তা হয় না। বলিউডের ছবির থেকে আমাদের বাস্তব জীবন অনেকটাই আলাদা। সত্যি বলতে, এর মধ্য়ে অনেক মিথ্য়ে জড়িয়ে আছে।

মন সব সময় খারাপ থাকত
আমার যাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়ে, সে খুবই সৎ। পরিবারের প্রতি তার দায়িত্ব ছিল প্রচুর। সে আমার যথেষ্ট যত্ন নিত। কিন্তু আমার ভালোবাসা নিয়ে যেরকম স্বপ্ন ও আশা ছিল, সেগুলো সে কোনওদিনই পূরণ করতে পারেনি। আমাদের বিবাহিত জীবনে কোনও রোম্যান্টিক ডেট নাইটের অস্তিত্বও ছিল না। আমার ভালো লাগত না। খুব মন খারাপ লাগত।

বিয়ের পর দিনের পর দিন আমি অপেক্ষা করেছি। ভাবতাম, আমার এই বিবাহিত জীবনে রোম্যান্সের সামান্য ছোঁয়াটুকু অন্তত থাকবে। কিন্তু তা আদৌ হয়নি। আমার স্বামী যখন অফিস থেকে বাড়ি ফিরত, সে খুবই ক্লান্ত থাকত। এরপরই প্রতিদিনের কথা অল্পবিস্তর হত। তারপর সে ঘুমিয়ে পড়ত। আমাদের জীবনে কোনও রোম্যান্সই ছিল না।

আমরা কখনও ক্যান্ডেললাইট ডিনারে যাইনি। আমাদের মধ্য়ে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা ছিল। কিন্তু তার মধ্য়ে কোনও রোম্যান্সের ছোঁয়া ছিল না। বিবাহিত জীবনে একের পর এক সমস্যা লেগেই ছিল। যে কারণে আমার মন কখনও ভালো থাকত না।

মা’কে জানাই একটা কথা
আমার জীবনে এক সময় খুব কঠিন পরিস্থিতি আসে। আমার কিছুই ভালো লাগত না। আমার বিবাহিত জীবন নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত ছিলাম। আমার মা’কেও আমি সেই কথা জানাই। আমি বিশেষজ্ঞের কাছে কোনও কথা লুকাব না। আমার মা’কে জানানোর আগে স্বামীর সঙ্গে কোনও কথাই বলিনি। সেজন্য হয়তো আমি আরও হতাশ ছিলাম।

আমার মনে হত, ও কখনও আমায় বুঝবে না। আমার কথা শুনে ওর মধ্য়ে কোনও প্রতিক্রিয়া হবে না। এই কারণেও আমি ওকে না বলে সরাসরি আমার মা’কে জানাই। আমার মা’কে বলি যে, আমাদের মধ্য়ে কোনও ভালোবাসাই নেই। এটা শোনার পর তিনি আমায় প্রশ্ন করেন, “ভালোবাসা বলতে তুমি কী বোঝাতে চাইছ?”

স্বামী হিসেবে ও ভালো ছিল খুব
ও স্বামী হিসেবে সব দায়িত্বই পালন করত। তাই আমি ওকে ছেড়ে যেতে চাইনি। আমার সব বিষয়ে সে খেয়াল রাখত। এই পরিস্থিতিতে স্বামীর সঙ্গে এসব কথা বলা খুব মুশকিল হয়ে পড়ে। আমি ওর সঙ্গে চাইলেও এই বিষয়ে কথা বলতে পারতাম না। কিন্তু আমি ওকে সব কথা বলি। ওর মধ্য়ে যেন কোনও খামতিই ছিল না। তারপরেও আমি ওকে বলি যে, আমাদের বিয়েতে ভালোবাসার কোনও ছোঁয়াই নেই।

স্বামীর সঙ্গে কথা বলি
পরদিন সকালে আমি আমার স্বামীর সঙ্গে কথা বলি। এরপর আমার ড্রেসিং টেবিলে আমি একটি নোট খুঁজে পাই। আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ও সেই চিঠিতে লিখেছিল, “তুমি যেমন চেয়েছিলে, আমি সেরকম রোম্যান্টিক স্বামী হতে পারিনি। কিন্তু আমি চেষ্টা করতে পারি।

আমার খুব ভালো লাগল যে, তুমি আমাদের বিয়ে নিয়ে এই কথা আমার সঙ্গে আলোচনা করলে। আমি যে পালটে যাব, এই কথা তোমায় দিতে পারছি না। কিন্তু আমি চেষ্টা করব। একে অপরকে ভালো করে বোঝার জন্য ও চেনার জন্য আরও একটি পদক্ষেপ করব।

এভাবেই হয়তো সম্পর্কটা আরও ভালো হয়ে উঠবে। তুমি যেমন চাও, সেরকম হবে এই সম্পর্ক।” ওর এই চিঠি পড়ে, আমার ঠোঁটে ছিল হাসি আর চোখ জলে ভরে গিয়েছিল।

ও বদলে যায়
এই ঘটনার পরে আমার স্বামী বদলে যায়। আমি দেখি যে, ও আমার মনের মতোই কাজ করার চেষ্টা করছে। সকালে গিজার চালিয়ে দিচ্ছে। অফিসে গাড়িতে যাওয়ার পরিবর্তে মেট্রোয় যাচ্ছে। যাতে আমি প্রয়োজনে গাড়ি ব্যবহার করতে পারি। এর থেকেই আমি বুঝতে পারি যে, প্রেম মানেই বড়পর্দার লভ স্টোরি নয়। প্রেম মানে অন্য কিছু। প্রেমের অনুভূতি একদম অন্যরকম। এরপর আমাদের মধ্য়ে সব কিছু ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায়। আমার জীবনে আজ আর সুখ-শান্তির অভাব নেই।

সূত্র : এই সময়

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles