2.6 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

সাবিনা-কৃষ্ণাদের জীবন সংগ্রাম সিনেমার চেয়ে কম কিছু নয়

সাবিনা-কৃষ্ণাদের জীবন সংগ্রাম সিনেমার চেয়ে কম কিছু নয়
ছবি সংগৃহীত

অধিনায়কের নেওয়া শটে হকিতে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি তার দেশ। সেজন্য তাকে মানসিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সেই তিনি নিয়েছিলেন নতুন চ্যালেঞ্জ। নিজের অপূর্ণতা দেশের মেয়েদের দিয়ে পূরণ করবেন তিনি। গঠন করলেন জাতীয় নারী হকি দল। যে দল গড়ার আগে ও পরে কটু কথায় মুখর ছিলেন দেশটির বোর্ড কর্তারাও। তবে কোচ দমে যাননি। লড়াই করেছেন, শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করে ফিরেছেন।

উপরের কাহিনীটি একটি সিনেমার। যেখানে দেশটির পিছিয়ে পড়া বহু অঞ্চল থেকে নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আসা হকি খেলোয়াড়দের নিয়ে মেয়েদের দল গঠনের দৃশ্য ফুটে উঠেছিল। সেই দলটি হয়েছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপকে বলা হয় দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ। আর তাতে প্রথমবার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। যাদের জীবন-সংগ্রাম সেই সিনেমার দৃশ্যের চেয়ে কম কিছু নয়।

- Advertisement -

কারও বাবাকে হারাতে হয়েছে, কেউ মায়ের শেষ সম্বল বিক্রি করে ফুটবলার হয়েছে। কেউ আবার বোনের অলংকার কিংবা পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন হয়ে ফুটবলে নাম লিখিয়েছিল। পাড়ি দিতে হয়েছে নানা চড়াই-উৎরাই। সমাজের টিপ্পনিকে একপাশে রেখে সবুজ ঘাস ছুঁয়েছিলেন সাবিনা- কৃষ্ণা-সানজিদা-ঋতুপর্ণারা। আজ তাদের হাত ধরেই দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা।

২০০৩ সালে প্রথম এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। ছেলেদের সেই দলের নেতৃত্বে ছিলেন রজনীকান্ত বর্মন। কাঞ্চনের দেওয়া গোলে ম্যাচের ১৩ মিনিটেই এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেদিন সেই গোলেই শিরোপা জেতা হয়ে যেত। কিন্তু ৫৭ মিনিটে উমার মালদ্বীপকে সমতায় ফেরালে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে ৫-৩ গোলের জয়ে প্রথমবার সাফ জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ।

১৯ বছর পর সাবিনা খাতুনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল পেয়েছে সাফের শিরোপা জয়ের স্বাদ। এমন এক সময় জয়টা পেয়েছে বাংলাদেশ, যখন ক্রীড়াঙ্গন সবক্ষেত্রেই জয় খড়ায় ভুগছে। এই শিরোপা দেশের ক্রীড়াপ্রেমিদের দীর্ঘদিন পর যেন স্বস্তির নিশ্বাস দিয়েছে।

২০০৩ সালের সাফ জয়ী দলের সদস্য আলফাজ আহমেদ বলেছেন, এই জয়ের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এই শিরোপা জয়ের মাধ্যমে দেশের ফুটবল আরও গতিশীল হবে। মেয়েদের ফুটবলের সুযোগ সুবিধা আরও বৃদ্ধির প্রত্যাশা আমাদের।

তবে শিরোপা জয়ী দলের মেয়েরা শিরোপা জিততে মরিয়া ছিলেন শুধু সেই সব মানুষদের জন্য, যারা সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে এক পাশে রেখে সাবিনা-সানজিদাদের সবুজ ঘাসে ফুটবল খেলার সুযোগ দিয়েছিলেন। সেই সব ক্রীড়াপ্রেমি দর্শকরা যারা অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে গেছেন তাদেরকে শিরোপা জয়ের উল্লাসে মাতিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত দর্শকদের মুখে শিরোপা জয়ী হাসিটাই ফুটিয়েছেন তারা।

গ্রাম বাংলার দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের হার না মানা জীবনের প্রতি পরত খুব কাছাকাছি থেকে দেখা এই দলের অনেক সদস্যদের। যারা জীবন যুদ্ধে লড়াই করতে ভয় পায় না। সেই লড়াকু মানসিকতা নিয়ে ফুটবলারের চরিত্রে নয়, এগারোজনের যোদ্ধাদল মাঠে খেলে শিরোপা জয় করে ফিরেছে।

সানজিদা আক্তারের ফেসবুক স্ট্যাটাসে চোখের জলে ভাসানো আরও অনেক কথা ছিল। ফাইনালের আগে শিরোপা জয়ের স্বপ্নে বিভোর সানজিদা মানুষকে শুধুই জয়ের আনন্দে ভাসাতে চেয়েছিলেন। ছাদ খোলা কোনো বাসে ট্রফি নিয়ে উল্লাসের কোনো আগ্রহ দেখাননি তিনি।

তার সেই স্ট্যাটাসে ছিল কোনো চাহিদা। বাংলার মেয়ো ট্রফি জিততে চেয়েছিলেন ভবিষ্যতের সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়াদের বন্ধুর পথটুকু কিছু হলেও সহজ করে দিতে। এ সমাজে যে এখনও মেয়েদের খেলাধুলা, চাকরি নিয়ে উপহাস করা হয়। সেই সব টিপ্পনি-কাটা সমর্থকদের যেন কড়া জবাব দিয়েছেন তারা।

নেপালকে হারিয়ে শিরোপা জিতে ভবিষ্যতের নারী ফুটবলারদের পথ অনেকটাই সহজ করে দিয়েছেন সানজিদারা। কৃষ্ণার জোড়া গোলে ট্রফি নিয়েই এবার দেশে ফিরবেন তারা। যে ট্রফি ছোঁয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন সেই সব স্বপ্নসারথীরা, যারা সানজিদা-সাবিনাদের উপর ভরসা করেছিলেন। কোচ গোলাম রব্বানী ও বাফুফে সদস্য মাহফুজা আক্তার কিরণরা তাদের ওপর আস্থা রেখে সবুজ ঘাসে দিয়েছিলেন মেয়েদেরকে ফুটবল খেলার সুযোগ। তারা নিশ্চয়ই নীরবে চোখের জল ফেলবেন সেই ট্রফি জয়ের আনন্দে।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles