5.1 C
Toronto
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

শুভ জন্মদিন বন্ধু

শুভ জন্মদিন বন্ধু
ফাইল ছবি

‘মাটিগর্ভে গেছে যে শহর তার লুপ্ত
খিলানের রেখা থরথর কাঁপে তোমার টেবিলে
দূরগ্রহে আরো কোন নগরীর জ্যামিতিক বিভা
কাছে এসে জড়ো হয়, আড়াআড়ি স্কেলে
তুমি রেখেছ আঙ্গুল… গুহা থেকে শব্দগুলো
ধ্বনি ভেঙ্গে আসে, স্থাপতিক অস্থিসন্ধি জেনে

হতে চায় সৌধ সুকুমার…’
(দ্বিসত্তা/ তুষার গায়েন/ নীলভবহ্রদ /পৃষ্ঠা১২)
এই কবিতাটি পাঠ করে আমি কবি ও স্থপতি তুষার গায়েনকেই দেখতেই পাই। ঐতিহ্যের কাছে নতজানু, আলোকিত আগামীর কাছে দায়বদ্ধ সৃজনীশক্তিতে ভরপুর একজন মেধাবী কবির প্রকৃতিই এই কবিতার নায়ক। আমার চোখে যার বাস্তব অবয়ব এই কবিতার কবি স্বয়ং তুষার গায়েন।
‘আমাকে উদরে পুরে আকাশে আকাশে
ছায়া ফেলে উদাসীন উড়ে যায় পাখি
সীমাহীন ডানা জুড়ে বাতাসের ঝড়

- Advertisement -

ভরকেন্দ্র টেনে রাখে সবেগ শূন্যতা…’
(পুনর্জন্ম/ তুষার গায়েন/ নীলভবহ্রদ /পৃষ্ঠা ৩৪)
এই কবিতায় সময়ের গতির সাথে সমান্তরাল পথের এক যাত্রীর সম্মুখীন হই; যার অন্তরাকাশে নিরন্তর উড়ে যায় মায়াবী ময়ূরের রঙিন পেখম। বারংবার এখানেও আমার চোখে আঁকা হয় কবি তুষার গায়েনের মুখ।
‘কখনো সখনো যদি উড়ে যাই
বাতাসে হেলান দিয়ে বহুদূর
দু’পা ছড়িয়ে সটান পূর্ণিমার
আকাশে নির্ঘুম, জলখণ্ড
মেঘের উচ্ছ্বাস মেরু থেকে মেরু
অবধি অস্থির বাতাসের স্রোত
নীচে নীল পৃথিবীর ছায়া

টলমল কাঁপে…’
(গর্ভজাত/ তুষার গায়েন/ নীলভবহ্রদ/ পৃষ্ঠা ৩৮)
কল্পনাযানে আকাশে হেলান দিয়ে উড়ে যেতে পারেন শুধু কবি। অস্থির বাতাসের স্রোত আর নীল পৃথিবীর ছায়া মাড়িয়ে কবিই আমাদের জানান দেন টলমলে কাঁপা পৃথিবীতে তার আপন উপস্থিতি।
আমার হাতের কাছে কবি তুষার গায়েনের ‘নীলভবহ্রদ’ ও ‘বৃষ্টির অন্তর যাত্রা’ নামক দু’খানা কবিতাগ্রন্থ আছে।
এই বই দুটি থেকে আমি আজ তুষারের কবিতা পাঠ করছি। আজ তুষারের জন্মদিন। একজন কবির জন্মদিনে তার সৃষ্টি কবিতায় অবগাহনই কবির প্রতি যথাযথ সম্মান বলে আমি মনে করি।
‘বহুপথ ঘুরে এসে ভাবি
যাওয়াটা ঠিক হলো নাকি

অন্যপথে যাওয়া ছিল ভালো?’ (আখবনে নিমখুন তারা/ তুষার গায়েন/ বৃষ্টির অন্তর ত্রাস/ পৃষ্ঠা ৬২)

জীবন ও জীবনের নানা বাঁকে অভিজ্ঞতালব্ধ সঞ্চয়ে ঋদ্ধ তুষার গায়েন। সেই অভিজ্ঞতার দেয়ালেই স্বগত প্রশ্নের মুখোমুখি আজ কবি। কোন পথ ভালো সময়ই যে শুধু জানে! কিন্তু যখন সময় ছিল না? এক মহাবিস্ফোরণের ফলে যে মহাবিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ক্রমশ সম্প্রসারণের মাধ্যমে গ্রহ-নক্ষত্রের উৎপত্তি এবং পৃথিবী নামক সবুজ গ্রহের সৃষ্টি, এইসব আলোচনাই করছিলাম একদিন গভীর রাতে তুষারের সঙ্গে। আমরা বসেছিলাম বিশাল বিশাল পাথরের উপরে। অন্টারিও লেকের বিশাল জলরাশি ছিল আমাদের সামনে। পায়ের কাছে পাথরে এসে ভেঙ্গে পড়া মৃদুমন্দ ঢেউয়ের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ আমাদেরকে পুলকিত করছিল। আমাদের মাথার উপরে নির্মেঘ পরিচ্ছন্ন আকাশে ছিল তারার মেলা। দূরে একফালি চাঁদও উঁকি দিয়ে আমাদেরকে সঙ্গ দিয়েছিল। আমরা, অর্থাৎ আমি আর তুষার নিজেদেরকে খুঁজতে চেয়েছিলাম এই মহাবিশ্বের মহাশক্তিধর প্রকৃতির কাছে আমাদের প্রকৃত কর্তব্য ও তা নিবেদনের সুসামঞ্জস্য ভাষা। আলোচনা এমন এক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছালো যে, বাসায় এসেও আমি এর বহুস্তর পর্দা থেকে মুক্ত হতে পারলাম না। রাতে সেই প্রেক্ষাপটের উপরেই লিখলাম ‘বোধির কুপি’।

ইদানীং তুষারের সঙ্গে দেখা হয় না৷ হলেও বছরের প্রান্তে। গত সপ্তাহে সহসাই চলতি পথে আমাদের দেখা হয়েছিল। মুহূর্তটিকে ক্যামেরা বন্দী করেও রেখেছিলাম। এই মেধাবী কবির জন্য আমার অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
শুভ জন্মদিন বন্ধু।

টরন্টো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles