11.8 C
Toronto
রবিবার, মে ৫, ২০২৪

কুখ্যাত ‘সিরিয়াল কিলার’ বৃদ্ধা, শুনলে গা শিউরে উঠবে

কুখ্যাত ‘সিরিয়াল কিলার’ বৃদ্ধা, শুনলে গা শিউরে উঠবে - the Bengali Times
ছবি সংগৃহীত

১৯৪৬ সালের ২৮ নভেম্বর। জাপানের কিতাকুয়ুশু শহরের মধ্যবিত্ত এক পরিবারের জন্ম নেয় চিসাকো কাকেহি নামের এক শিশু। ছোটবেলা থেকেই উচ্চাভিলাষী জীবনযাপন করতে চাইত চিসাকো। কিন্তু বাবার দারিদ্রতা তা হয়ে উঠত না। তবে ভালো শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় তিনি উচ্চশিক্ষা নিতে পারেননি। ১৯৬৯ সালে তার বিয়ে হয়ে যায়। ২৫ বছরের সেই সংসারে তার দুটি সন্তানও রয়েছে।

কিন্তু প্রথম স্বামী ১৯৯৪ সালে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। এত বছর সংসারের পর নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন চিসাকো। তবে নিঃসঙ্গ কাকেহি কি ঠিক সময়েই হত্যার পরিকল্পনা করেন নাকি তিনিই তার স্বামীকে হত্যা করেছেন সেই বিষয়টি এখনো অজানা।

- Advertisement -

এর অনেকদিন পর চিসাকো বিভিন্ন ম্যাচ মেকিং এজেন্সিতে তার প্রোফাইল খুলেন, সেখানে তিনি খুঁজে বেড়াতেন বয়স্ক, টাকাওয়ালা নিঃসন্তান পুরুষদের। ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি একাই ছিলেন, এরপর তিনি বিয়ে করেন একজন ওষুধ কোম্পানির ম্যানেজারকে। বিয়ের তিন বছরের মাথায় ৬৯ বছর বয়সী সেই দ্বিতীয় স্বামী হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যবরণ করেন।

২০০৮ সালে তিনি তৃতীয়বার বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। এবার তার পাত্র ছিলেন তোসিয়াকো ইয়ামামতো নামের একজন। তিনি একজন সম্পদশালী কৃষিবিদ ছিলেন। বিয়ের তিন মাসের মাথায় তিনিও হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। উপরের এই মৃত্যুগুলোতে তার হত্যাকান্ডের কথা প্রমাণ করা যায়নি, যেহেতু সেই মৃত ব্যক্তিদের সমাহিত করে ফেলা হয়েছিলো।

এদিকে, ইয়ামমতোর সঙ্গে সম্পর্ক থাকা অবস্থাতেই তার সঙ্গে তোসিয়াকো সুহেরিও নামের একজনের সঙ্গে সম্পর্ক হয়ে যায়। তিনি একজন উচ্চপদস্থ সরকারি আমলা ছিলেন। ২০০৭ এ তিনি সুহেরিও এবং তার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে লাঞ্চ করেন, সুহেরিওর খাবার ক্যাপসুলে তিনি সায়ানাইড মিশিয়ে দেন। এর ঠিক মিনিট পনেরো পর তিনি রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে অবচেতন হয়ে পড়েন। তাকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি সে যাত্রায় বেঁচে যান। এই ইয়ামমতোই একমাত্র ভিক্টিম যে চিসাকোর হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলো। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য সচেতন, উৎফুল্ল মিসাহোরির হোন্ডার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান চিসাকো। সালটা তখন ২০১২, ওই বছরেই তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন, বিয়ের ঠিক আগে আগেই মার্চের ৯ তারিখ চিসাকো তার সঙ্গে দেখা করেন, দেখা করার পর, বিকালের দিকে তারা আলাদা হয়ে দু’জন দুদিকে যান।

তার কিছুক্ষণ পর মিসাহোরি বাইক চালাতে চালাতে এরিথমিয়ায় যাকে বলা হয় অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া। পরে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার পর তাকে ডাক্তাররা মৃত ঘোষণা করেন। মাসাহোরিইর সঙ্গে সম্পর্ক থাকা অবস্থাতেই চিসাকো একজন ৭৫ বয়স্ক আর্কিটেক্ট মিনেরো হিয়োকির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। হিয়োকি লাংস ক্যান্সারে ভুগছিলেন এবং অনেকাংশে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। তিনি চিসাকোর সঙ্গে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। সেই স্বপ্নে পানি ঢেলে চিসাকো কাকেহি তার মরণাস্ত্র প্রয়োগ করেন। ২০১৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর হিয়োকি তার প্রেয়সীর সঙ্গে ডিনার করার পর মৃত্যবরণ করে। এরপর চিসাকো সম্পর্কে জড়ান ইসাও কাহেকির সঙ্গে। সেটা তাও হিয়োকি মৃত্যুর মাত্র ২ মাসের মাথায়। ওই বছরের ডিসেম্বরেই তারা বিয়ে করেন এবং বিয়ের এক মাসের মধ্যে ডিসেম্বরের ২০১৩ সালে ইসাও কাহেকি হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেন।

পুলিশ তাকে সন্দেহ করলেও তার নাগাল পাচ্ছিল না। কিন্তু ইসাও কাহেকি মৃত্যু যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক করে। সে জন্য পুলিশ সেটার ময়নাতদন্ত করার অনুমতি পায়। এবং ময়নাতদন্তের পর তার রক্ত, হার্ট এবং পেটে সায়ানাইডের উপস্থিতি পাওয়া যায়। তারপর পুলিশ তার বাসা তল্লাশি চালায় সেখানে তার খালি ক্যাপসুলের মোড়ক পায়, যেখানে সায়ানিড ভরা হয়ে থাকতে পারে। এরপর আগস্ট ২০১৪ সালে তার বাসায় একটি স্মোকিং গান পায়, যেটি একটি গাছের টবে পোতা ছিল। সেই গান এবং সেটি যেই প্যাকেটে মোড়ক পাওয়া যায়, সেখানে তারা সায়ানাইডের হদিস পায়।

সেই ধরণের প্যাকেটটি আবার চিসাকোর বাসা তল্লাশি করার সময় পাওয়া যায়। অবশেষে চিসাকোকে গ্রেফতার করে পুলিশ। চিসাকো তার শেষ তিনটি হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে এবং সুহেরিওকে হত্যাচেষ্টার কথা স্বীকার করেন। পুলিশ তাকে আরও ৪টি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অভিযুক্ত করে, কিন্তু প্রমাণের অভাবে দোষী সাব্যস্থ করতে পারেনি। যদিও আদালত তাকে এই চারটি হত্যাকান্ডের জন্য মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে ২০১৪ সালে। অবশেষে তিন প্রেমিককে খুন ও একজনকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে ৭৪ বছর বয়সী ব্লাক উইডো খ্যাত চিসাকো কাকেহির মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। যদিও সেই রায় এখনো কার্যকর হয়নি।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles