14.9 C
Toronto
মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৩, ২০২৪

সে দিনের ঘটনার বর্ণনা দিলেন ‘আল্লাহু আকবার’ বলা সেই ছাত্রী

সে দিনের ঘটনার বর্ণনা দিলেন ‘আল্লাহু আকবার’ বলা সেই ছাত্রী - the Bengali Times
<br >ছবি সংগৃহীত

গত মাসে (জানুয়ারি) ভারতের কর্ণাটকের উদুপি জেলায় এক সরকারি কলেজের কর্তৃপক্ষ হিজাব পরে ক্লাস করা যাবে না বলে বিধি জারি করে। এ নিয়মের প্রতিবাদে মুসলমান শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানান। স্থানীয় কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠনগুলো এর বিরোধিতা করলেও দলিত হিন্দুদের অনেকে মুসলিম শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই কর্নাটকের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে হিজাব নিষিদ্ধ করার দাবিতে গেরুয়া উত্তরীয় পরে বিক্ষোভ করেছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। পাল্টা হিজাবের সমর্থনে পথে নেমেছে মুসলিম শিক্ষার্থীরা।

বিশেষ করে কর্ণাটকজুড়ে চলা উত্তেজনার মধ্যে বোরকা-হিজাব পরে কলেজ ক্যাম্পাসে এসে হয়রানির শিকার হয়েছেন মুসকান খান নামে এক ছাত্রী। তবে গেরুয়া উত্তরীয় পরা একদল যুবকের ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানের সামনে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়ে অবিচল থেকেছেন ওই ছাত্রী। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

- Advertisement -

ভিডিওটিতে দেখা গেছে, হিজাব পরে মুসকান যখন তার স্কুটি পার্ক করে ক্লাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু বেশ কিছু মানুষ তাকে অনুসরণ করছেন।

দেখা যায়, গেরুয়া রঙের স্কার্ফ পরিহিত একদল ব্যক্তি ‘জয় শ্রী রাম’ শ্লোগানে মুসকানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর চিৎকার করছে। মুসকানও তখন ভিড়ের দিকে ফিরে হাত তুলে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।

মুসকানের এমন সাহসী ভূমিকায় পাকিস্তানের নোবেলজয়ী শিক্ষা ও নারী অধিকার কর্মী মালালা ইউসুফসহ অনেকেই তার প্রশংসা করেছেন।

সেই ঘটনা নিয়ে বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কর্নাটকের মান্ডা জেলার একটি প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজের বি.কম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মুসকান খান।

তিনি বলেন, আমি আগে থেকে কিছুই জানতাম না। সব সময় যেভাবে কলেজে যাই, সেভাবেই গেলাম। বাইরে থেকে আসা একদল লোক সেখানে বলল যে বোরকা পরে কলেজের ভেতরে যাবে না। কলেজে যেতে হলে বোরকা ও হিজাব খুলে ভেতরে যেতে হবে। তুমি যদি বোরকা পরে থাকতে চাও, তবে বাড়ি ফিরে যাও। আমি ভিতরে এলাম। ভেবেছিলাম চুপচাপ চলে যাব। কিন্তু সেখানে অনেক শ্লোগান উঠছিল। ‘বোরকা কাদ’, ‘জয় শ্রী রাম’ এর মতো শ্লোগান।

‘আমি ভেবেছিলাম আমি ক্লাসে যাব, কিন্তু ছেলেগুলো আমাকে এমনভাবে অনুসরণ করছিল যেন তারা সবাই আমাকে আক্রমণের চেষ্টা করছে। তারা ছিল ৪০ জনের মতো। আমি ছিলাম একা। কারও মধ্যে আমি মনুষ্যত্ব লক্ষ্য করিনি। হঠাৎ তারা আমার কাছে এসে চিৎকার করতে লাগল। কারও কারেও হাতে ছিল কমলা রঙের স্কার্ফ। আর আমার মুখের সামনে এসে স্কার্ফ দোলাতে দোলাতে বলতে লাগল – জয় শ্রী রাম, চলে যাও, বোরকা খুলে ফেলো।’

মুসকান বলেন, প্রি-ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার পর থেকে আমি হিজাব পরে আসছি। কলেজে কোনো সমস্যা হয়নি। সবকিছু আগের মতই ছিল। আমরা হিজাব পরে ক্লাসে যাচ্ছিলাম। আমরা বোরকা পরি না, শুধু হিজাব পরি। চুল আড়াল করে ক্লাসে যাই। কিন্তু ওই লোকেরা আমাকে ক্যাম্পাসে ঢুকতেও দিচ্ছিল না। তারা অনেক বহিরাগত ছিল এবং কলেজের ছাত্র ছিল কম। বেশির ভাগই ছিল বহিরাগত।

তিনি বলেন, আমার সামনে চার মেয়ে এসেছিল। গেট তালাবদ্ধ ছিল। তারপর কোনোমতে প্রিন্সিপাল এলেন। অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা আমাকে রক্ষা করেন। ছেলেরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে ভেতরে গিয়েছিল। কিন্তু বেরিয়ে এসে একই কাজ করল। আমি কাঁদিনি। আমি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। আমি বললাম আল্লাহু আকবার। কারণ, আমি ভয় পেয়েছিলাম। ভয় পেলে আমি আল্লাহর নাম নিই। আল্লাহর নাম নিলেই আমার সাহস বেড়ে যায়।

মুসলিম এই ছাত্রী বলেন, আমি এখানে হিন্দু বা মুসলিম কোনো জাতপাত ছড়াচ্ছি না। আমি শুধু আমার শিক্ষার জন্য, আমার অধিকারের জন্য দাঁড়িয়েছি।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles