8.2 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

ভুল

ভুল - the Bengali Times
গত সপ্তাহে উইনার্স দোকানে ঢুকছিলাম মেয়েটার জ্যাকেট কিনতে এ দোকানে ঢুকলে গিন্নিকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না

গত বছর অনেক ভুল করছি। কিছু ভুল ছিল ন্যাক্কারজনক, বলার মতো না। নতুন বছরের শপথ- একই ভুল দুইবার করবো না। ভুল অবশ্য এক্সিডেন্টের মতো, কেউ এসবের উর্ধে না। সবাই নিজেদের ভুলগুলা স্বীকার করলে মানুষের সেলফ রেসপেক্ট বাড়বে। মানুষ মাত্রই ভুল করে; Man is mortal. যেমন সেদিন গিন্নির সাথে বিকালে হাঁটতে বের হয়ে তার হাত ধরে বাসায় ফিরবার সময় হঠাৎ খেয়াল করি ঐটা আমার গিন্নি না।
গত সপ্তাহে উইনার্স দোকানে ঢুকছিলাম মেয়েটার জ্যাকেট কিনতে। এ দোকানে ঢুকলে গিন্নিকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। শেষে ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে অনুরোধ করে মাইক্রোফোনটা হাতে নিয়ে ঘোষণা দিলাম- বিদুষী, তুমি যেখানেই থাকো, শিগগির কাউন্টারে চলে আসো। তোমার ছেলে-মেয়েরা কান্নাকাটি করতে করতে দম বন্ধ হবার উপক্রম।

ঘটে গেলো আরেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা। যে মহিলা ছুটে আসলো, সে আমার বাচ্চাদের মা নয়। তাদের আসল মাকে পাওয়া গেলো কিছু দূরে কানে হেডফোন লাগানো অবস্থায়।
যাই হোক, দাম দিতে লাইনে দাঁড়াতেই গিন্নি বলল, ওর জ্যাকেট নিছো?
– এই যে!
– ও পছন্দ করছে?
– ওকে পরায়েই তো তোমাকে দেখালাম। তুমিই না বললা এক্সসেলেন্ট?
– ও মা কখন? তাই দখিনা, তোর বাপ তোকে পরায়ে দেখায়ছিল জ্যাকেট? [গিন্নি মেয়েকে জিজ্ঞেস করে]
না তো!- দখিনা উত্তর দেয়।
ছিঃ ছিঃ..এতক্ষনে ঘটনা বুঝলাম।
জ্যাকেটটা মেয়ের গায়ে পরায়ছিলাম ঠিকই, তার মাকে দেখায়ছিলামও। কিন্তু অন্য কোনো কন্যাকে, নিজেরটাকে না। ওদিকে কাউন্টারে গিন্নিকে গোলাপি পিওর মুক্তার মালা এগিয়ে দিতে দেখে বললাম, এতো দামি জিনিস এখন?
– সে কি! তুমিই না বললা এটা নিতে, আমাকে নাকি মানাবে!
যাক গে, লেবু বেশি কচলালে তেঁতো হবে। কোন শালা আমার সর্বনাশ করলো কে জানে! আমি পাঁচশো ডলার বিল দিয়ে রিসিট চেক করে দেখি সেখানে ডেভিড নামের লোকের নাম। পাসওয়ার্ড ভুল করে ফেলছিলাম। যার পাসওয়ার্ড, তার নামে বিল গেছে। আমার আর কি!
**[শিক্ষণীয়: পাঠকগণ, জুয়েলারী দোকানে গিন্নিকে সাথে নিয়ে গেলে তার আশপাশেই থাকবেন। তা না হলে কোনো দালাল পাম দিয়ে কিনায়ে ফেলাবে]
এরকম ভুল যে শুধু আমি করি, তা অবশ্য না..

- Advertisement -

এক যুগ আগে আমার এক বন্ধু নতুন বউ নিয়ে টাউন সার্ভিস বাসে যাত্রাবাড়ী যাচ্ছিল। বাসে খুব ভীড়, দুইজন ধরাধরি করে দাঁড়ানো ছিল। তারা খুব রক্ষণশীল, বউ বোরখা পরে। বাস থেকে নেমে রিক্সায় উঠে আমার বন্ধু খেয়াল করে যে তার বউ এর পায়ের স্যান্ডেল অচেনা..।
.
**[শিক্ষণীয়: ভিড়ের মধ্যে শিওর হয়ে নেবেন কোনটা আপনার বউ। ছেলেরা ভুল করলেও মেয়েরা ভুলেও ভুল করে না, তারা জেনে শুনেই..]
কিছু ভুলের জন্য অনেক মাশুল দিতে হয়।
দুই বছর আগে গাড়িতে পেট্রোলের পরিবর্তে ডিজেল নিয়ে ইঞ্জিনের বারোটা বাজায়ছিলাম। ইঞ্জিন একবার চালু হলে আর বন্ধ হতো না।

মাস চারেক আগে করোনা কমে গেছিল। তখন চিশতী আমাকে প্রক্সি দিতে পাঠালো মিসিসাগায় এক বিয়ের অনুষ্ঠানে। তার নাকি আরেক জায়গায় দাওয়াত। আমি দুই পায়ে খাড়া। তার ক্যামেরাটা আমার হাতে দিয়ে বলল, বর কনের ছবি তুলিস। কনে আমার ভাগ্নি লাগে, খুব আদরের।

অনুষ্ঠানে গিয়ে তার পাঠানো হীরের আংটি আমি নিজ হাতে কনেকে পরিয়ে দিয়ে বললাম- মা আমি তোমার মামা লাগি। পরীর মতো মেয়েটা খুশিতে নিজ থেকেই আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলল। আর যে খাওয়া দাওয়া! এরকম হুলুস্থূল কান্ড জীবনে দেখি নাই। দশজনের টেবিলে একটা করে আস্ত বেক করা ছাগল রাখা। হাড্ডি থেকে আলগোসে নরম মাংস খুলে খুলে পড়তেছিল। মিডিল ইস্টের আমীররা এসব খায়। পিওর জাফরানের মোহনীয় সুবাস, যে যত খুশি খাবলায়ে মাংস খুলে খাও ঘি মাখানো নান আর আফগান জাফরানী রাইস দিয়ে!
রাতে চিশতীকে ক্যামেরা ফেরৎ দিয়ে আসি। পরদিন তার ফোন, হারামি তুই কার ছবি তুলছিস?
– ক্যা!
– এইটা আমার ভাগ্নি? আংটিটা দিয়ে দিছিস?
– দোস্ত, নিজ হাতে পরায়ে দিছি!
– তুই কোন কমিউনিটি সেন্টারে দাওয়াত খায়ে আসছিস বুকা.. শিগগির ফেরৎ আন!
কমিউনিটি সেন্টার পাশাপাশি থাকলে ভুল হতেই পারে। কীভাবে আবার ফেরৎ আনি? তার বারো’শ ডলার গচ্চা। একই ভুল বাংলাদেশেও কয়েকবার করছি। মিরপুরে আরেক কমিউনিটি সেন্টারে ঢুকে বেইজ্জতি। ঘাড় ধরে বের করে দিলো! গিফট আর ফেরৎ আনতে পারিনি।

যাই হোক, মেয়ের জ্যাকেট নিয়ে বাসায় ঢুকে সবাই খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ি। ঘুমানোর আগে বাথরুমের কমোডে বসে খেয়াল করলাম পায়ের নিচে কার্পেট। অথচ আমাদের বাথরুমে কার্পেট থাকার কথা না। গিন্নিকে ঘুম থেকে তুলে ফিসফিসিয়ে বললাম, শিগগির উঠো!
– কী হইছে?
– এই বাড়ি আমাদের না!
– মানে?
– ভুলে অন্যের বাসায় ঢুকছি!
– কীভাবে বুঝলা?
– বাথরুমে কার্পেট বিছানো, আমাদের বাসায় কার্পেট ছিল?
বাচ্চাদের ঘুম থেকে তুলে রেডি করে, স্নো’র মধ্যে মাইনাস দশ ডিগ্রীতে আসল বাসায় যাওয়া চাট্টিখানি কথা? গাড়িতে বাচ্চাদের বসিয়ে স্টার্ট দিতেই গিন্নি বলল- আচ্ছা, আমাদের গাড়ি না ভক্সওয়াগন?
– হ্যা?
– এটা কোন কোম্পানির ?
সর্বনাশ, গাড়ির স্টিয়ারিং এ ক্যাডিলাক চিহ্ন! ভুলে অন্যের গাড়ি নিয়ে চলে আসছিলাম। তারমানে এই বাসায় উঠার পেছনে আমার ভুল না, গাড়ির জিপিএস যে এড্রেসে নিয়ে গেছে, সেখানেই গেছি। আমার কী দোষ?
**[শিক্ষণীয়: গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার আগে শিওর হয়ে নেবেন যে ওটা আপনারই গাড়ি, বাড়ি পৌছিয়ে দেখে নেবেন ভুলে অন্যের বাড়ি ঢুকছেন কি না]

তবে নিজের ভুলের জন্য আরেকজন ঝাড়ি খাওয়াটা দুঃখজনক।
গত পরশু কাজে ছিলাম, গিন্নি ফোন করে বলল, তুমি এতো খরচ করে স্যামন মাছের ফিলে কিনছো!
– কবে?
– কালকে মেট্রো থেকে; মনে নাই?
– বলো কি!
– কি যে ফ্রেশ! পাউন্ডই তো মনে হয় আঠারো ডলার করে! থ্যাঙ্ক ইউ!
– ওয়েলকাম
– আর শোনো.. তুমি ফুল কিনে বলো নাই কেন? কি যে সারপ্রাইজ!
খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। ফুল, স্যামন মাছ; এসবের মানে কী?
পাশে বসা আমার কলিগের দেখি খুব মন খারাপ। জিজ্ঞেস করলাম কী হইছে ভাই?
সে যা বলল তা শুনে আমার আক্কেল গুড়ুম। তার বউ সিরিয়াস ঝাড়ি দিছে তাকে। সে বিছানার চাদর কিনে নিয়ে গেছে ডাবল, অথচ তার খাট কুইন।

কিন্তু চাদর তো কিনছিলাম আমি! বুঝলাম, আসলে আমাদের মোবাইল উল্টাপাল্টা হয়ে গিয়েছিল। সে ভুলে আমার বউকে ফোন দিছিল, আমিও তার বউ কে। দুইজনের মোবাইলেই ওয়াইফ নামে সেইভ করা!
**[শিক্ষণীয়; বউ এর নাম সেভ করার সময় সাবধান, বউ /ওয়াইফ নামে সেভ না করে নাম দিয়ে সেভ করবেন]
ও হ্যা, আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছিলাম। চিশতী পরে ফোন করে বলছিল যে তার ভাগ্নী বিয়েতে আংটি নাকি পাইছিল। তাহলে ভুলটা কোথায় ছিল? দুই বোনের কি পাশাপাশি বিয়ে হচ্ছিল? পরে তারা আংটি ট্রেড করে নিছে?

কি জানি ভাই, কত কিছু যে হতে পারে!.. তাই ভুল করে লজ্জা পাবেন না। আমরা সবাই একই কাজ করি; কেউ বলে, কেউ বলে না।
চীয়ার্স!

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles