5.8 C
Toronto
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

বঙ্গবন্ধুর নাম নিশানা মুছে ফেলার সেই ঘনঘোর কৃষ্ণপক্ষ গ্রহণকালের ছবি

বঙ্গবন্ধুর নাম নিশানা মুছে ফেলার সেই ঘনঘোর কৃষ্ণপক্ষ গ্রহণকালের ছবি
বঙ্গবন্ধুর নাম নিশানা মুছে ফেলার সেই ঘনঘোর কৃষ্ণপক্ষ গ্রহণকালের ছবি

ছড়াটা রচিত হয়েছিলো এমন একটি সময়ে যখন বাংলাদেশের মানচিত্রে ইতিহাস বিকৃতির মহোৎসব চলছে। বিএনপি-জামাত চার দলীয় জোটের শাসনের নামে চলছে বাংলাদেশকে অন্ধকারের দিকে ধাবিত করার জোর কদম কুজকাওয়াজ। বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা হয়েছে সবকিছু থেকে। তাঁর জায়গায় প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে একজন মেজরকে। একাত্তরের ঘাতক দালাল যুদ্ধাপরাধীরা যখন গাড়িতে পতাকা উড়িয়ে মন্ত্রীত্ব করে বেড়ায় মানচিত্র জুড়ে। জনকণ্ঠে সম্পাদক তোয়াব খান খুব গুরুত্ব দিয়ে লেখাটা ছেপেছিলেন ‘চতুরঙ্গ’ নামের রাজনৈতিক কলামের পাতায়। একমাত্র জনকণ্ঠই তখন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা আর বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত বন্ধুর ভূমিকায় সোচ্চার ছিলো।

অবশেষে আমাদের দীর্ঘ রক্তাক্ত সম্মিলিত সংগ্রামের পথ পরিক্রমায় গাঢ় অন্ধকারের মেঘ অপসারিত হয়েছে বাংলার আকাশ থেকে। সেখানে দীপ্যমান হয়েছেন জাতির জনক তাঁর আপন দীপ্তিতে।

- Advertisement -

কী দুঃসময় আমরা অতিক্রম করেছিলাম সেটা আমরা বিস্মৃত হই প্রায়শঃ। গোল্ডফিস মেমোরি আমাদের। সবকিছু ভুলে যাই দ্রুত। এই ছড়াটা সেই দুঃসময়কে ধারণ করে রচিত।

এটা আমার নিজের লেখা প্রিয় একটি ছড়া, বঙ্গবন্ধু বিষয়ে। রচনাকাল ১৩ আগস্ট ২০০৬।

‘মুজিবের থাকা না থাকা’ শিরোনামে ছড়াটা প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো ২০০৬-এর ১৫ আগস্ট, দৈনিক জনকণ্ঠে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে অনুপম প্রকাশিত ‘একটি মুজিবরের থেকে’ বইতে এটা মুদ্রিত হয়েছিলো।

তিনি অবিনাশী অবিনশ্বর তাঁহার বিনাশ নাই

লুৎফর রহমান রিটন

দেয়ালে দেয়ালে সারা দেশ জুড়ে লেখা ছিলো তাঁর নাম

পুরনো দেয়াল সেই অজুহাতে করিয়েছি চূনকাম।

টিভির ফুটেজে সংরক্ষিত ছিলো তাঁর যতো ছবি

এডিট করেছি ইরেজ করেছি নষ্ট করেছি সবই।

ছোটদের যতো পাঠ্যসূচিতে লেখা ছিলো তাঁর নাম

জ্ঞাণপাপী কিছু লেখক জুটিয়ে সব ছেঁটে ফেললাম।

রেডিওতে ছিলো তাঁকে নিয়ে গাওয়া কালজয়ী কিছু গান

ইরেজ করেছি নষ্ট করেছি গান হলো অবসান।

চলচ্চিত্রেও ছিলো তাঁর ছবি, দিয়েছি বেজায় ঘষে

ভেবেছি মুজিব ইতিহাস থেকে চিরতরে গেছে খসে।

ইতিহাস থেকে মুজিবের নাম মুছে দিয়ে অতঃপর-

উল্লাসে মাতি-নেই নেই নেই, নেই সেই মুজিবর ।

এতো মুছলাম এতো কাটলাম এতো ঘষলাম তবু

এই বাংলায় মুজিবর নেই বলতে পারি না কভু।

এতো কাটা-ছেঁড়া তবুও মুজিব কী করে সজীব রয় ?

এই বাংলায় কারা অবিচল মুজিবের কথা কয়!

প্রকৃতির কাছে পাঠ নিতে নিতে অবশেষে জানলাম

এই বাংলার পরতে পরতে লেখা আছে তাঁর নাম!

যেদিকে তাকাই এই বাংলার মাটি আর আসমান

সবখানে দেখি মুজিবের ছায়া আর তাঁর জয়গান।

প্রতিদিন জেনো সূর্যের নামে মুজিব উদিত হয়

প্রতিদিন জেনো দখিনা বাতাস মুজিবের নামে বয়।

প্রতিদিন জেনো মুজিবের নামে সহস্র ফুল ফোটে

মুজিবের নাম গান হয়ে ওঠে হাজারো পাখির ঠোঁটে।

প্রতিদিন জেনো ভোরের শিশির মুজিবের নামে ঝরে

মুজিবের নামে টাপুর টুপুর অঝোরে বিষ্টি পড়ে।

রাতের আকাশে মুজিব জোছনা , আকাশে মুজিব চাঁদ

নদী কলোকলে ঝর্ণার জলে মুজিবের সংবাদ।

ফসলের মাঠে প্রতি মৌসুমে প্রতিটি শস্যকণা

মুজিবের যতো কীর্তিকে নিয়ে করে শুধু আলোচনা।

কৃষকের চোখে হাসে মুজিবর নবান্ন উৎসবে

মুজিব মুখর শাপলার বিলে ডাহুকের কলরবে।

নৌকার পাল লাঙলের ফলা এবং ধানের শীষে

ঊর্মির ভিড়ে সমূদ্র তীরে মুজিবর আছে মিশে।

বটের ছায়ায় উদাসী দুপুরে রাখালের প্রিয় বাঁশী

সিম্ফনি তোলে-মুজিব তোমাকে ভালোবাসি ভালোবাসি।

মায়ের আঁচলে বোনের বেনীতে বাবার জায়নামাজে

অষ্টপ্রহর মুজিবর আছে সকল শুভর মাঝে।

কিষাণি বধূর সন্ধ্যা প্রদীপে পড়ে মুজিবের ছায়া

নকশী কাঁথার বুননে বুননে মুজিবের যতো মায়া।

জারি সারি আর ভাটিয়ালী গানে মুজিবের যতো কথা

মুজিবের প্রেমে নুয়ে পড়ে ঘাস লাজুক স্বর্ণলতা।

শরতে আকাশে শাদা শাদা মেঘ মুজিবের ছবি আঁকে

ধ্রুবতারা হয়ে মুজিবর আছে তারাদের ঝাঁকে ঝাঁকে।

বইয়ের মলাটে মুজিবর আছে কবিতার পঙক্তিতে

ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরিতে নাটকে ও সঙ্গীতে।

মুজিব মূর্ত চারুশিল্পীর বিমূর্ত ক্যানভাসে

বাংলার দুখে বাংলার সুখে মুজিবর কাঁদে, হাসে।

মিছিলে মিছিলে শ্লোগানে শ্লোগানে পোস্টারে ফেস্টুনে

লাল অক্ষর আরো লাল হয় মুজিবের তাজা খুনে।

শ্রমিকের ঘামে মজুরের শ্রমে শিশুদের সমাবেশে

উদ্দীপনার হিমালয় হয়ে মুজিব দাঁড়ায় এসে।

শিক্ষার্থীর মননে মেধায় মুজিবর জাগ্রত

ধ্বংসস্তুপে মুজিবর জাগে ফিনিক্স পাখির মতো।

লাখো শহীদের শোনিত প্রবাহ মুজিবের পানে ধায়

জোনাকীর আলো জ্বলে আর নেভে বিনম্র শ্রদ্ধায়।

দ্রোহে প্রতিবাদে প্রতিরোধে জেনো মুজিবর আছে কাছে

স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনারে মুজিবর মিশে আছে।

মুজিবর আছে বাংলাদেশের অপরূপ পতাকায়

মুজিবর আছে মানচিত্রের মায়াভরা আঙিনায়।

এদেশের কোটি মানুষের বুকে মুজিব নিয়েছে ঠাঁই

তিনি অবিনাশী অবিনশ্বর তাঁহার বিনাশ নাই।

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles