কান চুলকানি বন্ধ করে; ভেতরের ময়লা পরিষ্কার করে; ক্ষত সারায়; এমনকি শব্দ দূষণে সৃষ্ট ক্ষতিও কমায়—এসব বলে ফেসবুকে একটি ‘ডিভাইস ও ড্রপ’-এর বিজ্ঞাপন দিয়ে যাচ্ছে শপার অল নামের একটি পেজ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, এটি চিকিৎসার নামে প্রতারণা।
পেজটি থেকে শেয়ার করা এক ভিডিও পোস্টে একটি ড্রপের কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটি লেখার সময় পর্যন্ত ওই পোস্টের নিচে ড্রপ নিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের মন্তব্য পড়েছে ৪৭৪টি। পোস্টটি শেয়ার হয়েছে ৬১৯ বার। এর দাম হাঁকা হচ্ছে ৯৯০ টাকা।
কিন্তু নাক, কান ও গলা বিষয়ক চিকিৎসকরা বলছেন, এই পোস্টের ভিডিওতে যা দেখানো ও বলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। এটা প্রতারণা। তারা বলছেন, অনলাইনে এ ধরনের প্রতারণায় আজকাল অনেকেই ক্রনিক রোগগুলোকে বেছে নিচ্ছে।
বর্তমানে প্রায় সব পরিবারেই ক্রনিক রোগী আছেন। এ রোগের তালিকায় আছে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিস, অ্যালার্জি ও নানান বার্ধক্যজনিত রোগ। সবাই এসব রোগ থেকে মুক্তির সহজ পথ খুঁজে পেতে মরিয়া থাকে। এ সুযোগই নেয় প্রতারক চক্র।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কানে না শুনতে পাওয়ার অনেক কারণ আছে। কেবল একটি ড্রপেই সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে—এমন চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি। ড্রপটি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলাও হয়নি সেখানে।
জানতে চাইলে পাবনা মেডিক্যাল কলেজের নাক, কান ও গলা বিভাগের অধ্যাপক ডা. আহমেদ তাউস বলেন, এটা অবৈধ ব্যবসা। এখনে চিকিৎসাবিজ্ঞানের লেশমাত্র নেই। সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া একে কিছু বলতে রাজি নই।
অধ্যাপক ডা. তাউস আরও বলেন, ‘কানে কম শোনার কারণ নির্ধারণ না করে কোনও ডিভাইস ব্যবহার করা উচিত নয়। যে কারণে কম শুনছে, সেটার চিকিৎসা করতে হবে। যেমন কানের পর্দায় ছিদ্র থাকলে পর্দা লাগাতে হবে।’
এদিকে, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আরিফ মোর্শেদ খান বলেন, ভিডিওতে এক ধরনের সলিউশনের কথা বলা হয়েছে, যেটা কানের ময়লা পরিষ্কার করবে। কিন্তু কানে ময়লা জমলে শব্দ হতে পারে। আর সেটা পরিষ্কার করলে সে আওয়াজও চলে যাবে। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, পুরো ভিডিওতে কানের সমস্যার সমাধান নিয়ে কিছু বলা হয়নি। এটাই একটা বড় প্রতারণা।’
তিনি আরও জানান, ‘যারা কানে শোনেন না এমন হয়তো পাঁচ শতাংশ রোগী পাওয়া যায় যাদের কানে ময়লার কারণে এ সমস্যা দেখা দেয়। ময়লা পরিষ্কার করা হলেই তারা শুনতে পাবেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এই তরল ব্যবহার করা হলেই শ্রবণ সমস্যার সমাধান হবে।’
কানে কম শোনা বা না শোনার অনেক কারণ থাকতে পারে। এমন মন্তব্য ডা. আরিফ মোর্শেদ খান বলেন, ‘কোনও চিকিৎসার কথা না বলে একটা ড্রপের মাধ্যমে সমস্যা দূর হয়ে যাবে—এটা হতে পারে না। তবে তো এই একটি ড্রপ দিয়েই কোটি মানুষের সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।’
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ফেসবুক পেজটির ইনবক্সে যোগাযোগ করা হলেও কোনও উত্তর আসেনি। পেজটিতে নেই কোনও ফোন নম্বরও।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন