“এই কানাডায় না আসলে একটা বড় শিক্ষার থেকে বঞ্চিত হতাম। পরিবেশ পরিস্থিতি মানুষকে মানুষ হবার পথ তৈরি করে দেয়। আমাদের বাবা মায়েরা ছেলে মেয়ের জন্য জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। নিজের জন্য একটুও জায়গা রাখেনি অথচ কোন জীবনই তুচ্ছ নয়। এই বোধটি আমি পেয়েছি এখানে এসে। অন্যের জন্য ভাবনা থাকবে, ভালবাসা থাকবে বিনিময়ে নিজেকে অবহেলা করে নয়, নিজের জায়গাটা ধ্বংস করে নয়।
৭০-৭৫ বছরের বয়স্ক মানুষ যখন পার্কে দৌড়ায় তখন আমার নিজের বাবা মায়ের কথা খুব মনে পড়ে। ছেলে মেয়ের কথা ভাবতে ভাবতে উনারা জীবনটা পার করেছেন। স্পেনের এক নারী শনি রবিবারে অনলাইনে আমাদের আর্ট গ্রুপে আর্ট শেখে। গত সপ্তাহে সে জানালো ৭০+ অবসরে তার সঙ্গী হয়েছে আর্ট। এই ভাবে তারা জীবনটা উপভোগ করে। নিজের জন্য কোন স্পেস না রাখাটা গর্বের বিষয় হতে পারে না। আমাদের বাবা মায়েরা সব সময় বলতো তোরাই আমার সব। আসলে তা কি হয়? বুঝলাম ছেলে মেয়ের প্রতি এদের ভালবাসা অনেক কিন্তু এই ভালবাসা আরেকটি জীবনকে অবহেলা বা নষ্ট করে দিয়ে নয়। সারা জীবন ধরে শিক্ষার প্রক্রিয়ার মধ্যেই এরা থেকে যায়।
প্রতিটি জীবনের আলাদা আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। আমি জানি আমাদের অনেক বান্ধবীদের বিয়ের পরে সম্পুর্ণ অন্য মানুষ হয়ে যেতে হয়েছে। যে মেয়েটি ভাল গান গাইতো সেটি বন্ধ হয়েগেছে সংসারের চাপে। এই চাপটা মনে হয় আমাদের সমাজে মেয়েদের উপরই বেশি। এটি যে মানব সম্পদের বড় অপচয়। এমন কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া এক সময়ের মেধাবী ছাত্রীও দেখাগেছে বিয়ের পরে সব কিছু বিসর্জন দিয়ে সংসারটি ধরে রেখেছে।
অধিকাংশ পুরুষেরা চায় না মেয়েদের একটা বিশেষ জায়গা তৈরি হউক যেখানে সে মেধার পরিচয় দিতে পারে। এখানে তাদের একমাত্র ভয় কতৃত্ব থাকবে না। ভাল মানুষ কখনো অন্যের উপর কতৃত্ব রাখে না। জীবনকে ভালবাসা মানে অন্যের উপর অন্যায় অবিচার করে নিজের জায়গা ঠিক রাখা নয়। আবার নিজেকে একেবারে বঞ্চিত করে অন্ধের মত ভালবাসা তাও নয়।” —–এ কথাগুলো লিখেছেন রশোনারা বেহাম,একজন বাংলাদেশী ক্যানাডিয়ান চিত্র শিল্পি। টরোন্টোতে বসবাস করেন।
টরন্টো, কানাডা