রাজধানী ঢাকার বেশকিছু এলাকাকে ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য হটস্পট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এসব এলাকায় মূলত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এসব ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। এমনই একটি কিশোর গ্যাং ‘ভাইব্বা ল কিং। এই চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-২।
জানা যায়, গত দুই-তিন বছর ধরে কিশোর গ্যাং চক্রটি মোহাম্মদপুর এলাকায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চুরি-ডাকাতি ও আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। তারা ভাড়ায় বিভিন্ন স্থানে হুমকি ও মারপিটে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।
র্যাব জানায়, ‘ভাইব্বা ল কিং’ মানে তাদের সদস্যদের যেই অবস্থায় থাকুক না কেন তারা নিজেদের মোহাম্মদপুরের কিং ভাবে। অপরাধ কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা নিজেদের কিং হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়।
র্যাব আরও জানায়, সোমবার রাতে এক দম্পতি কিশোর গ্যাং চক্রটির দ্বারা ছিনতাইয়ের শিকার হয়। র্যাব-২ এ অভিযোগ করার ১০ মিনিটের মধ্যে ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামক একটি কিশোর গ্যাং চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-২ এর একটি দল। গ্রেপ্তারদের মধ্যে তিন জনের বয়স ১৮ বছরের নিচে।
গ্রেপ্তার বাকিরা হলেন- মো. রুমান (১৮), গ্যাং লিডার শরীফ ওরফে মোহন (১৮), মো. উদয় (১৯), মো. শাকিল (১৯), মো. নয়ন (১৮) ও মো. জাহিদ (১৮)।
অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে চারটি লোহার তৈরি দেশীয় ছুরি, একটি স্টিলের হাতলযুক্ত কুঠার, গাঁজা ৫০ পুরিয়া, দুটি স্টিলের তৈরি ছুরি, একটি স্টিলের তৈরি হোল্ডিং চাকু, একটি প্লাস্টিকের পিস্তল সদৃশ্য, ৬৫ পিস ইয়াবা ও ইয়াবা খাওয়ার সরঞ্জামসহ তিনটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকার বেশকিছু এলাকাকে ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য হটস্পট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান, বসিলা ও রায়েরবাজার এলাকা অন্যতম। এসব এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য পায় র্যাব।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গতকাল সোমবার রাত ৯টায় ঢাকা উদ্যানের সামনে থেকে র্যাব-২ কন্ট্রোল রুমে ফোন করে ছিনতাইয়ের খপ্পরে পড়ার তথ্য জানিয়ে সহযোগিতা চান এক দম্পতি। র্যাব-২ এর গোয়েন্দা ও টহল দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এরপর রায়ের বাজার এলাকা থেকে ছিনতাইয়ে জড়িত চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ছিনতাইয়ের ভ্যানিটি ব্যাগ।
পরে ঐদিন রাতেই র্যাবের টহল ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করে চাঁদ উদ্যান সংলগ্ন সাত মসজিদ হাউজিং এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এসময় কিশোর গ্যাং চক্রটির লিডার মোহনসহ আরও পাঁচ সদস্যকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র, পিস্তল সদৃশ্য বস্তু ও মাদকসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, ‘ভাইব্বা ল কিং’ চক্রের সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন। দলের লিডার মোহনের নেতৃত্বে দুই/তিন বছর আগে গ্যাংটি গঠন করা হয়। এরা মোহন সিন্ডিকেট নামেও পরিচিত। এ গ্রুপের সদস্যরা আগে লেবেল হাই গ্যাং এ অন্তর্ভুক্ত ছিল। অন্তঃকোন্দলে যা পাঁচ/ছয়টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। গ্রুপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টিকটকেও সক্রিয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের গ্যাং সংক্রান্ত বিভিন্ন ঔদ্ধত্যপূর্ণ প্রচারণা পাওয়া যায়। যেমন- ‘মোহাম্মদপুরের পোলাপান যা করি তা টোকেন ছাড়াই ওপেন’, ‘মোহাম্মদপুরের পোলা বাজান, আমি একাই একশ, গেঞ্জাম করার আগে ভাইব্বা লইও’।
র্যাব মুখপাত্র মঈন বলেন, ‘ভাইব্বা ল কিং’ মানে তাদের সদস্যদের যেই অবস্থায় থাকুক না কেন তারা মোহাম্মদপুরের কিং। অপরাধ কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা নিজেদের কিং হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। গ্রেপ্তাররা লেগুনা, অটো চালক, দোকানের কর্মচারী, নির্মাণকর্মী ও অফিসের বার্তাবাহক পেশার পাশাপাশি মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিনতাই ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। তারা বিভিন্ন সময় ছিনতাইয়ের উদ্দেশে ব্যাংকের আশপাশে অবস্থান নিয়ে গ্রাহকদের টার্গেট করত।
‘ভাইব্বা ল কিং’ চক্রটিকে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে পেছন থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। পৃষ্ঠপোষকদের শনাক্ত করা হয়েছে। চক্রে জড়িত পলাতকসহ পৃষ্ঠপোষকদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান র্যাব।
সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল