-0 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

৫৩টি ফেরির ৫০টিরই ফিটনেস সনদ নেই

৫৩টি ফেরির ৫০টিরই ফিটনেস সনদ নেই - the Bengali Times

সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থাপনাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) ফেরি সার্ভিস। বছরের পর বছর এসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ না নেওয়ায় এই সার্ভিস রীতিমতো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

- Advertisement -

গত ২৭ অক্টোবর রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া থেকে ছেড়ে আসা রো রো (বড়) ফেরি আমানত শাহ মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে এসে যানবাহনসহ ডুবে যায়। এই ঘটনাসহ পাঁচটি ফেরি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে রাষ্ট্রীয় ওই সংস্থাটির ফেরি সার্ভিসের নানা অব্যবস্থাপনার চিত্র উঠে এসেছে। উল্লেখ করা হয়েছে এ সার্ভিসের ঝুঁকির কথা।

সাত সদস্যের এই তদন্ত কমিটি ১৬ নভেম্বর প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বিআইডব্লিউটিসির মেরিন বিভাগের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫৩টি ফেরির মধ্যে ৫০টিরই ফিটনেস সনদ নেই। এ ছাড়া ২৯টি ফেরিতে নেই কোনো রাডারব্যবস্থা, চারটিতে রাডার থাকলেও সেগুলো নষ্ট। পানির গভীরতা পরিমাপ করার যন্ত্র ‘ইকো-সাউন্ডার’ আছে ১২টিতে। সাতটির এই ব্যবস্থা আবার নষ্ট।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, তদন্ত কমিটির সদস্যরা আমানত শাহসহ ১০টি ফেরি পরিদর্শন করেছেন। কিছু ফেরির বিভিন্ন পাম্পের লিকেজ ও ইঞ্জিন রুমের তলায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। কোনোটার মূল ইঞ্জিনের এগজস্ট পাইপ উন্মুক্ত। এসব পাইপ এসবেস্টস ক্লথ বা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল অথবা অন্য কোনো তাপনিরোধক দিয়ে ঢেকে রাখার কথা। এভাবে উন্মুক্ত থাকলে এগজস্ট পাইপে আগুন লাগাতে পারে। লুব ওয়েল বরাদ্দ দেওয়া হলেও ইঞ্জিনে তা নিয়মিত পরিবর্তন করা হয় না।

চলতি বছরের জুলাই মাসে মেরামত করা হলেও আমানত শাহ ফেরির তলদেশের কোনো কাজ হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ফেরিটি যেদিকে কাত হয়ে নিমজ্জিত হয়েছে (বাঁ পাশ), সেই পাশে ফেরির তলদেশে বালাস্ট ট্যাংকে (নৌযানের ভারসাম্য রক্ষার জন্য পানি নেওয়ার স্থান) ছিদ্র ছিল। এই ছিদ্র পুরোনো বলে মনে হয়েছে। ফেরির ওপরের দিকেও বেশ কিছু ছিদ্র পাওয়া যায়। এ ছাড়া বালাস্ট ট্যাংকের প্রবেশমুখ (ম্যানহোল) কখনোই ঠিকভাবে বন্ধ করা হয়নি। তাই ছিদ্র দিয়ে দ্রুতগতিতে পানি প্রবেশ করেছে এবং ম্যানহোল সঠিকভাবে বন্ধ না থাকায় ফেরি অল্প সময়েই কাত হয়ে যায়।

ফেরি দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বিআইডব্লিউটিসির মেরিন, প্রকৌশল ও বাণিজ্যিক বিভাগের মধ্যে সমন্বয় না থাকা, আগের তদন্ত কমিটির সুপারিশ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না করা ও ফেরির মাস্টারের মতামত গুরুত্ব না দেওয়াসহ বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেছে তদন্ত কমিটি।
সুপারিশ

ফেরি সার্ভিসের মানোন্নয়নে এবং দুর্ঘটনা এড়াতে কমিটি স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ করেছে। উল্লেখযোগ্য সুপারিশ হচ্ছে, ফেরির পূর্ণ ডকিং করে মেরামত নিশ্চিত করা; ফেরির সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা; মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি প্রত্যাহার; প্রয়োজনীয়সংখ্যক ফেরি বা জলযান কেনার উদ্যোগ গ্রহণ; ড্রাইভার ও মাস্টারদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা; নিরাপত্তা ও দ্রুত যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি যেমন: ওয়াকিটকি, জিপিএস, ভিএইচএফ, রাডার, ইকো-সাউন্ডারসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আবশ্যিকভাবে ফেরিতে রাখা; ফেরি ও জেটির মাঝে পর্যাপ্ত টায়ার ফেন্ডারের ব্যবস্থা করা; ফেরির কর্মরত-কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটির বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে বিবেচনা করা; পরিস্থিতি বিবেচনায় সাপ্তাহিক ছুটি দেওয়া সম্ভব না হলে বাড়তি ভাতা প্রদানের বিষয় বিবেচনা করা; আসন্ন বিপদের আশঙ্কার ক্ষেত্রে ফেরির মাস্টারদের যেকোনো কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য ওভার রাইডিং ক্ষমতা প্রদান; প্রতিবার চেকলিস্টের মাধ্যমে ফেরির সার্বিক বিষয় নিশ্চিত হয়ে মাস্টার ও ইঞ্জিন ড্রাইভারের ঘাট ত্যাগ করা; চেকলিস্ট সংরক্ষণ করা; বিআইডব্লিউটিসির কর্মচারীদের বার্ষিক ৬০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ প্রদান এবং ডিজিটাল জাহাজ ব্যবস্থাপনা ও ঘাট ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।

পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা ও ফেরি আমানত শাহর দুর্ঘটনার কারণ উল্লেখ করা হলেও এসব ঘটনায় কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়ী করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদনে সুপারিশ করেনি কমিটি।

কমিটি বলছে, দুর্ঘটনার জন্য এককভাবে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে দায়ী করা যায় না। এটি সামগ্রিকভাবে বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা। সে জন্য ব্যবস্থাপনার মান যথাযথ পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী সরকারি সফরে দেশের বাইরে থাকায় প্রতিবেদনের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

এদিকে ১ নভেম্বর বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলামকে বদলি করে ভূমি আপিল বোর্ডের সদস্য করা হয়েছে। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ শামীম আল রাজীকে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বিআইডব্লিউটিসির ফেরি সার্ভিস নিয়ে উল্লেখ করা সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘উনারা (কমিটি) যেটা মনে করেছেন দিয়েছেন। রাতারাতি কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। অগ্রাধিকার দিয়ে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’

সূত্র : নতুন সময়

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles