13.9 C
Toronto
শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪

নতুন আইটেম, টেনশনে আছি

নতুন আইটেম, টেনশনে আছি

রাত নয়টা।
সোফায় রিল্যাক্সড হয়ে টিভি দেখছিলাম।
দখিনা এসে বলল- বাবা, আম্মুর খুব মাইগ্রেন; তুমি খাবার বানাতে পারবা?

- Advertisement -

রান্নাবান্না আর তেমন করি না, অলস হয়ে গেছি।
রান্নাঘরে গিয়ে খুঁজতে থাকি কি দেয়া যায়। বার্গার? কিন্তু কালকেই যে খেলো? চিকেন শর্মা বানাতেও সময় লাগে। রাতে এরা কখনোই বাঙালি খাবার খাবে না। ডিপ ফ্রিজে চোখ আটকিয়ে গেল প্রাণ ফ্রোজেন পরোটাগুলোর দিকে। আইডিয়া খেলে গেল। পাঁচটা পরোটা বের করলাম; বিত্ত’র দুটা, আর আমাদের সবার একটা করে। স্যামন ফিশের প্যাকেট জমে শক্ত, ভিজিয়ে নরম করতে অন্ততঃ আধাঘন্টা লেগে যাবে। গরম পানিতে দ্রুত থ করলে স্বাদ থাকে না। সময় নেই, বাচ্চা দুজন একটু পরেই চেঁচিয়ে উঠে বলবে- “খাবার?”

স্যামনের বিকল্প হিসাবে কেবিনেট থেকে একটা টুনা মাছের ক্যান, ফ্রিজ থেকে মোজারেলা চিজ, মাখন বের করে লবন, গোল-মরিচের গুঁড়া হাতের কাছে রাখলাম। রান্না খুব দ্রুত হবে। ননস্টিক প্যান গরমে দিলাম অল্প তেলে।

একটা পরোটা গরম প্যানে দিয়ে সেটার ঠিক মাঝখানে এক টুকরো মাখন রেখে দুই টেবিল চামচ টুনা মাছের গুঁড়া, এক মুঠো মোজারেলা চিজ দিলাম। চিজের উপর গোল-মরিচের গুঁড়া আর লবন ছিটিয়ে নরম হয়ে আসা পরোটার চারপাশ থেকে পরিধি বরাবর ইঞ্চিখানেক ফোল্ড করে ঢেকে একটা গোলগাল মোটাসোটা কিমা পুরি আকারের বানিয়ে ফেললাম। দ্রুত উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে নামিয়ে ফেললাম। আড়াই মিনিটের মধ্যে তৈরি। দশ মিনিটের মাথায় বাকি চারটা বানিয়ে হাঁক ছাড়লাম- খাবার রেডি তোরা আয়!

নতুন আইটেম, টেনশনে আছি; বেইজ্জতি না হয়। বিত্ত মারাত্মক খুঁতখুঁতে। তাই গোল-মরিচ ছাড়া কোন মশলা দেইনি। দখিনা অবশ্য তেমন আপত্তি না করে খেয়ে ফেলবে।

বিত্ত চাকু দিয়ে কেটে, কাঁটাচামচ দিয়ে ফিরিঙ্গি ভদ্রলোকের মতো কয়েকবার মুখে পুরে বলল- আব্বু ইয়েস, ভালো হইছে! ওর সাথে দখিনাও তাল মেলালো।
আমার ইচ্ছা ছিল স্যামন ফিশ দিয়ে বানাবো
– ইয়েস আব্বু, স্যামন দিয়ে আরও ভাল হবে!
– অবশ্য গরুর কিমা দিয়েও ভাল হবে
– ফর শিওর আব্বু। আমি এখনই ফিল করতে পারছি কিমা দিয়ে কেমন লাগবে! নেক্সট টাইম প্লিজ!
আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।

এক কাপ দুধ আর খাবারটা নিয়ে উপরে গিয়ে গিন্নির পাশে রেখে বললাম, তোমার খাবার
– আমি খাবো না। [চোখ না খুলেই বলল, যন্ত্রণাকাতর অবস্থায়। মাথা যন্ত্রণায় ব্যাচারী কাতর]

কি মনে করে তবুও খাবার রেখে ফিরে এসে বাচ্চাদের সাথে যোগ দেই। পুরির মতো হাতে নিয়ে কামড়িয়ে খেতে থাকি। সত্যি ভালো হয়েছে। মাখন, চিজ আর টুনার মিশ্রিত পুরের সাথে মুচমুচে পরোটার চামড়া দারুন কম্বিনেশন। মুখের মধ্যে গলে যেতে লাগলো। দখিনাকে বললাম- মা রে, একটু আয় তো; আমার পিঠে জোড়ে চাপড় মেরে বল সাব্বাশ!
দখিনা এসে আমার পিঠে আলতো করে খুব সাবধানে চাপড় মেরে দিল; বাপের যেন না লাগে।
আব্বু আমিও দেই?- বিত্ত জিজ্ঞেস করে।
– না রে, তোর যা শক্তি, তুই মারলে আমি মরেই যাবো।
লাভ হলো না, সে হাত উঁচু করে এগিয়ে আসলো। আমি পিঠ বাঁকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি…

বাসন-কোসন সব রান্নাঘরে রেখে উপরে গেলাম। দেখি গিন্নিও সাবাড় করে ফেলেছে। চেখ বন্ধ করে বিছানায় শোয়া। খালি প্লেট, গ্লাস হাতে নিয়ে বের হয়ে আসার সময় আস্তে দুর্বল গলায় ফিসফিসিয়ে ডাকলো- চান্দু
– হু
– তোমার খাবার অসম্ভব স্বাদের হইসে। থ্যাংক ইউ
– ওয়েলকাম
– জিনিসটার নাম দিসো?
– হু, “পকেট চিজ টুনা” , তবে স্যামন দিলে নাম চেঞ্জ হবে
– নামটাও সুন্দর হইসে
– থ্যাঙ্ক ইউ
– ওয়েলকাম..

মে ১, ২০২৪।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles