13.9 C
Toronto
শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪

বন্ধু আমার কথা রাখেননি

বন্ধু আমার কথা রাখেননি

ময়মনসিং এর স্মৃতি আমার মনে ঘুরে ফিরে সব সময় আসে। জীবনের কষ্টের কিন্ত্ত মধুর সময় সেখানে কেটেছে।যেদিন প্রথম বর্ষ এম বি বি এস ক্লাসে যোগ দেয়ার জন্য প্রথম হোষ্টেলে হাজির হলাম তখন শ্রদ্ধেয় আলমগীর ভাই(ডা: আলমগীর)এর রুমে হাজির হওয়া ছাড়া আমার হাতে আর কোন বিকল্প পথ ছিলনা। আলমগীর ভাই অত্যন্ত অমায়িক এবং সজ্জন ব্যক্তি।

- Advertisement -

ভর্তি হয়ে চলে আসার সময় বলেছিলেন-তুমি আমার এখানে এসেই থেক। উনি হয়তো বুঝতে পারেননি তার এই কথার উপর ভর করে পুরা ১৩ টি মাস আমি তার ঘরেই কাটিয়ে দেব। শুধু সজ্জন তারে বলি কেন তার অপর তিন রুম মেটও(অধ্যক্ষ ডা: আজহার, প্রফেসর জব্বার-কম্যুনিটি মেডিসিন ও ডা: সুকান্ত দা)সজ্জন ব্যক্তি।সবাই আমাকে বেশ সহানুভুতিতে দেখতেন।ক্লাসে আমরা কত বন্ধু কিন্ত্ত হোষ্টেলে ফিরলে একা হয়ে পড়ি তাই এই রুম ছেড়ে কোথাও যাওয়ার ভরসা পাইনি।সহপাঠিদের সবার অবস্থাও আমার মতো। তবে তারা এক এক জেলার বেশ কয়েকজন মিলে এক সাথে মরাখোলা, কেওয়েট খালি, জেসিগুহ রোড এবং হোস্টেলের আশেপাশে ঘর ভাড়া করে থাকে। আমরা একই এলাকার ৪/৫ জন তবে সবাই কারো না কারো ঘরে গিয়ে ঠাই নিয়েছি।বাসস্থানের অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে বাবা-মা এর কাছ থেকে আমরা এসেছি লেখা পড়া করে গাড়ী-ঘোড়া চড়বো বলে।

আমার এই রুমে রুম মেটরা যখন রাতে বিছানায় যায় তখন ফ্লোরে আমার বিছানা পড়ে তাছাড়া আমার চুপ চাপ বসে থাকতে হয় চোখে ঘুম এলেও।মাঝে মধ্যে ছুটির দিনে দুপুরে বিছানা পেতে ঘুমাই। বুকের উপরে ঢাউস মার্কা একটা ফ্যান শব্দ তুলে ঘুরতে থাকে। একটু ঠান্ডা অনুভুত হয় তাই শরীরের উপর চাদর বা লেপ দিয়ে ঘুমাই।সেদিন এমনিভাবে ঘুমিয়ে পড়েছি।কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানিনা হঠাৎ কানের কাছে মিহি স্বরের আওয়াজ পেলাম-বাবু, বাবা। চোখ খুলে দেখলাম আমার মাথার ধারে দুটি পা তার পর চেয়ারে বসা একজন। আগে কখনও দেখিনি। জব্বার ভাই বল্লেন–তোমার আব্বা পাঠিয়েছেন তোমাকে দেখতে।আমি বাকহীন। ভদ্রলোক বলতে শুরু করলেন-আমার বাড়ী এখানে, আমি যশোরে চাকুরী করি সেই সুবাদে তোমার আব্বার সাথে আমার পরিচয়।তারই অনুরোধে তোমাকে দেখতে আসা।আমি বিছানা গুছিয়ে প্রস্ত্তত হয়ে বললাম-চলুন আমরা বাইরে বসে কথা বলি।দুজনে বাইরে এলাম।বাগমারা মাঠ পার হয়ে রেল রাস্তা ধরে শহরে চলে এলাম।এক সাথে বসে কিছুক্ষণ কথা বললাম।আমার ভালো লাগছে আব্বার সংস্পর্শে যাওয়া একজনকে পেলাম কথা বলার। মনে হলো আব্বার সাথেই যেন কথা বলছি।আসবার সময় মিনতি করে বল্লাম-একটা অনুরোধ রাখবেন? তিনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।বল্লাম-আব্বাকে বলবেন না যে আমি ফ্লোরে ঘুমাই।

বেশ কিছুদিন পর আব্বার চিঠি পেলাম। তিনি লিখেছেন-তোমাকে বাড়তি টাকা পাঠাবো তুমি একটা ঘর ভাড়া করে থাকো। বুঝতে পারলাম তার বন্ধু আমার কথা রাখেননি।সম্ভবত তার স্থানে আমি হলে আমিও ঐ অনুরোধটুকু রাখতে পারতাম না।

ইনুভিক, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles