18.4 C
Toronto
রবিবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪

সখ্য মাদকে, মোস্তাফিজের ‘চাহিদা মেটাতে’ ধর্ষণের পরিকল্পনা

সখ্য মাদকে, মোস্তাফিজের ‘চাহিদা মেটাতে’ ধর্ষণের পরিকল্পনা
<br >র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার মামুনুর রশিদ মামুন এবং তার সহযোগী মুরাদ ছবি সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার আসামিদের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে মাদকের মাধ্যমে। ধর্ষণের মূল পরিকল্পনাকারী মামুনুর রশিদ ওরফে মামুন মূলত ইয়াবা ব্যবসায়ী। মামুন টেকনাফ থেকে প্রতি মাসে কয়েক দফায় ৭-৮ হাজার ইয়াবা এনে বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর আশপাশ এলাকায় সরবরাহ করতেন। এর মাধ্যমেই ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা এবং মামলার এক নম্বর আসামি মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। মাঝে মাঝেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে মাদকসহ রাত্রিযাপন করতেন মামুন।

গ্রেপ্তার মামুনের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে র‍্যাব। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র‌্যাব) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

- Advertisement -

র‍্যাব জানিয়েছে, মোস্তাফিজ তার অনৈতিক ইচ্ছার কথা মামুনকে জানালে সে এই পরিকল্পনা করে।

কমান্ডার মঈন বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত মামুন জানায়, প্রায় ৬/৭ বছর যাবত মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সে। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে প্রতি মাসে কয়েক দফায় প্রায় ৭/৮ হাজার ইয়াবা এনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকাসহ মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীকে সরবরাহ করত। মাদকের মাধ্যমেই মোস্তাফিজ এবং ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর সঙ্গে পরিচয় তার।’

মামুনের দাবি, ওই নারীর স্বামীর মাধ্যমেও বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশ এলাকায় মাদক সরবরাহ করতেন তিনি।

কমান্ডার মঈন জানান, বেশি দিন একস্থানে থাকত না মামুন। মাদক কারবারের কারণে কিছুদিন আগে তার থাকার জায়গার সমস্যা হলে সে ভুক্তভোগীর বাসায় সাবলেট হিসেবে প্রায় ৩/৪ মাস অবস্থান করেন। ঘটনার আগে মামলার ১ নম্বর আসামি মোস্তাফিজুর রহমান অনৈতিক কাজের ইচ্ছা পোষণ করে মামুনের কাছে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, মামুন গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকালে ভুক্তভোগীর স্বামীকে ফোন দিয়ে জানায়—জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোস্তাফিজুর নামে এক বড় ভাই তার জন্য হলে থাকার ব্যবস্থা করেছে। এখন থেকে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকবে। তাই মোস্তাফিজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে বলে ওই নারীর স্বামীকে জাবি ক্যাম্পাসে আসতে বলে মামুন।

মামুনের কথা মতো ওই দিন সন্ধ্যার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে দেখা করে ওই নারীর স্বামী। সেখানে তাকে মোস্তাফিজ, মুরাদ, সাব্বির, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় মামুন।

অভিযুক্ত মামুন কৌশলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে তাদের বাসায় থাকাকালীন তার ব্যবহৃত কাপড়চোপড় হলে নিয়ে আসার জন্য তার স্ত্রীকে (ভিকটিম) ফোন দিতে বলে। স্বামীর ফোন পেয়ে একটি ব্যাগে করে মামুনের ব্যবহৃত কাপড় নিয়ে রাত ৯টার দিকে মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে উপস্থিত হন ওই নারী।

র‌্যাব জানায়, ওই সময় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, মামুন ও মোস্তাফিজ কৌশলে ভিকটিমের স্বামীসহ মামুনের ব্যবহৃত কাপড়ের ব্যাগ হলের ৩১৭ নম্বর রুমে নিয়ে যেতে বলে এ মামলার আসামি মুরাদকে। মুরাদ ভুক্তভোগীর স্বামীকে নিয়ে হলের রুমে অবস্থান করে।

এ সময় মামুন ও মোস্তাফিজ ভিকটিমকে কৌশলে হলের পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে পর্যায়ক্রমে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই নারীকে বাসায় চলে যেতে বলে। মামুন ও মোস্তাফিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের রুমে গিয়ে নারীর স্বামীকেও চলে যেতে বলে।

পরে ওই নারীর স্বামীকেও বাসায় পাঠিয়ে দেয় তারা। স্বামী বাড়িতে গেলে ধর্ষণের স্বীকার হওয়ার কথা তাকে জানান ভুক্তভোগী। পরে ওই নারীর স্বামী থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করেন।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে ধর্ষণের পরিকল্পনাকারী মামুনুর রশীদ ওরফে মামুনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। একই দিনে মামুনের সহযোগী মুরাদকেও গ্রেপ্তার করেছে বাহিনীটি। তাকে নওগাঁ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

র‍্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত মামুন প্রায় ২০ বছর পূর্বে ঢাকার জুরাইন এলাকায় এসে গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে চাকরি নেন। পরবর্তীতে সে আশুলিয়া এলাকায় এসে গার্মেন্টসের চাকরির পাশাপাশি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ২০১৭ সালে গার্মেন্টসের চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি মাদক ব্যবসায় জড়িত হয়। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মাদক সংক্রান্তে ৮টি মামলা রয়েছে। এর আগে এসব মামলায় সে একাধিকবার কারাভোগ করেছে।

এর আগে ধর্ষণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করে সংগঠনটি।

ধর্ষণের ঘটনায় মোস্তাফিজুরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত করেছে প্রশাসন। আর বহিষ্কার করা হয়েছে ৩ জনকে।

সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন বলেন, আমাদের আগামী প্রজন্মকে জাহাঙ্গীরনগর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করার স্বপ্ন দেখি। এমনকি যারা মাদক কারবার, চোরাচালানসহ অবৈধ ব্যবসা করেন সেই সকল ব্যক্তিরাও খারাপ হলেও তাদের সন্তানকেও বিদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করান। আমরা চাই আমাদের সন্তানরা লেখাপড়া করুক এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত হোক।

সম্প্রতি স্বামীকে আটকে রেখে গণধর্ষণের ঘটনারও দায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles