14.6 C
Toronto
মঙ্গলবার, মে ১৪, ২০২৪

চাপে পড়ে ১০ লাখ টাকার দেনমোহরে কলেজ ছাত্রীর সঙ্গে ওসির দ্বিতীয় বিয়ে!

চাপে পড়ে ১০ লাখ টাকার দেনমোহরে কলেজ ছাত্রীর সঙ্গে ওসির দ্বিতীয় বিয়ে!
প্রতীকী ছবি

গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলাম এক কলেজছাত্রী নিয়ে বেশ কয়েক দিন আগে ওঠেন জেলার রাজেন্দ্রপুরের একটি রিসোর্টে। সেখানে বিয়ের জন্য ওসিকে চাপ দেন কলেজছাত্রী। এ নিয়ে দুজনের বিবাদের জেরে কলেজছাত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলার পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে কলেজছাত্রীকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছেন মিজানুর ইসলাম। গত বুধবার রাতে রাজেন্দ্রপুরের গ্রিন শালবন রিসোর্ট থেকে পুলিশ কলেজছাত্রীকে উদ্ধারের পর বৃহস্পতিবার দিনভর দেনদরবারের পর তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন মিজানুর ইসলাম।

এ ঘটনার পর জয়দেবপুর থানার ওসির দায়িত্ব থেকে মিজানুর ইসলামকে প্রত্যাহার করে গাজীপুর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে একটি তদন্ত কমিটি।

- Advertisement -

সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা এবং গ্রিন শালবন রিসোর্টের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংসদ নির্বাচনে আগে সৈয়দ মিজানুর ইসলাম জয়দেবপুর থানায় ওসি হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মানিকগঞ্জে থাকা অবস্থায় তিনি সিংগাইর থানায় এক বছর ও সদর থানায় তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি ওই কলেজছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন।

কিছুদিন আগে ওই কলেজছাত্রীর বিয়ে ঠিক হয়। এ খবর জানতে পেরে ওসি তার ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির মাধ্যমে কলেজছাত্রীকে বিয়ের কথা বলে জয়দেবপুর নিয়ে আসেন। ১০-১২ দিন ধরে তাকে রাজেন্দ্রপুরের গ্রিন শালবন রিসোর্টের একটি কক্ষে রাখেন। তিনি কলেজছাত্রীর সঙ্গে রাতে সেখানে থাকতেন। পরে কলেজছাত্রীকে তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কলেজছাত্রী মানিকগঞ্জ না গিয়ে বিয়ের জন্য ওসিকে চাপ দেন। কিন্তু ওসি বিয়েতে অস্বীকৃতি জানান। গত বুধবার রাতে ওসি ওই রিসোর্টে একদল যুবক পাঠিয়ে কলেজছাত্রীকে ভয়ভীতি দেখান। বাড়ি ফিরে না গেলে তাকে হত্যার হুমকিসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে রাতেই কলেজছাত্রী তাকে জয়দেবপুরে নিয়ে আসা ওসির ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে বিষয়টি জানান।

কলেজছাত্রীর কিছু হলে ফেঁসে যেতে পারেন এ ভয়ে ওই ব্যক্তি গাজীপুর জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিরাজুল ইসলাম বুধবার রাতে রিসোর্টে গিয়ে কলেজছাত্রীকে উদ্ধার করে এসপি অফিসে নিয়ে আসেন। পরে জয়দেবপুর থানার ওসিকে এসপি অফিসে ডেকে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে ওসির প্রথম স্ত্রী এবং ওই কলেজছাত্রীর মা ও ফুফা জয়দেবপুর ছুটে আসেন। পরদিন বৃহস্পতিবার দিনভর উভয় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কলেজছাত্রী ওসির সঙ্গে বিয়ের জন্য অটল থাকেন। একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে কলেজছাত্রীকে তার মায়ের জিম্মায় পাঠিয়ে গাজীপুর জেলা শহরের একটি কাজি অফিসে ১০ লাখ টাকার দেনমোহরে ওসির সঙ্গে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। বিয়ের কাবিননামায় নগদ এক লাখ টাকা পরিশোধ দেখানো হয়। বিয়েতে মেয়েপক্ষের উকিল নিযুক্ত করা হয় মেয়ের ফুফা মো. কছিম উদ্দিনকে। বিয়েতে উভয় পক্ষের আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত ছিলেন।

কাজি অফিসের সহকারী কাজি মোস্তফা কামাল তাদের বিয়ে পড়ান। কাজি মোস্তফা কামাল এই বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আরও জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে বিয়ের পর গতকাল শুক্রবার সকালে বিয়ের কাবিননামার নকল নেওয়ার জন্য কলেজছাত্রী জয়দেবপুর শহরে কাজি অফিসে আসেন। কাবিনের নকল নিয়ে তার মা ও ফুফাসহ মানিকগঞ্জে যাওয়ার সময় চান্দনা চৌরাস্তায় ওসি তাদের গতিরোধ করে বাস থেকে নামিয়ে জয়দেবপুর থানায় নিয়ে যান।

কলেজছাত্রীকে জয়দেবপুর নিয়ে আসা ওসি মিজানুর ইসলামের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি জানায়, ওসি তার নতুন স্ত্রীকে থানার অদূরে মনিপুর বাজার এলাকায় একটি ফ্ল্যাট বাড়িতে নিয়ে রাখেন। সেখানে কলেজছাত্রীর সঙ্গে তার মা ও ফুফাকেও রাখা হয়। সেখানে তাদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ওসি কলেজছাত্রীকে তার বিয়ের কাবিনের ১০ লাখ টাকা দিয়ে স্ট্যাম্পে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য স্বাক্ষর নিয়ে বিদায় করে দিতে চাচ্ছেন।

গতকাল বিকেলে জয়দেবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শরিফুল ইসলাম জানান, মিজানুর ইসলামকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। তবে কোনো লিখিত কাগজ হাতে পাননি। অবশ্য গত বৃহস্পতিবার থেকে তিনি ওসির দায়িত্ব পালন করছেন বলেও জানান।

পুরো বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে সৈয়দ মিজানুর ইসলাম বলেন, ‘আমি দুই মাস আগে তাকে (কলেজছাত্রী) বিয়ে করেছি। বাসা ভাড়া না পাওয়ায় তাকে ওই রিসোর্টে রাখা হয়েছিল। বিষয়টি আমাদের পারিবারিক। একটা ঝামেলা হয়েছিল। সব ঠিক হয়ে যাবে।’

এ প্রসঙ্গে গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী সফিকুল আলম বলেন, ‘একটা ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে সত্য প্রমাণিত হলে তার (মিজানুর ইসলাম) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles