9.1 C
Toronto
সোমবার, মে ৬, ২০২৪

যে হাটে ছেঁড়া টাকায় মেলে নতুন টাকা

যে হাটে ছেঁড়া টাকায় মেলে নতুন টাকা

গ্রামীণ অঞ্চলে বেড়ে উঠেছেন কিন্তু ‘হাট’ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নন, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। গ্রাম-গঞ্জের হাট বলতেই বাতাসা, গুড়ের জিলাপি, মুখরোচক খাবার কিংবা হরেক রকম পণ্যের হুলুস্থুল কারবার। সপ্তাহের নির্দিষ্ট একটি দিনে এসব হাটে চলে নানা পণ্যের বিকিকিনি। সেই তুলনায় শহুরে সভ্যতায় এমন সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। যা হয়েছে, সেটিও আধুনিকতায় মোড়ানো।

- Advertisement -

রাজধানী ঢাকাতে অবশ্য একটি হাট গড়ে উঠেছে। তবে সেটি কোনো পণ্যের নয়, নতুন টাকার হাট। যেখানে বান্ডেল বান্ডেল চকচকে নতুন নোটের পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন বিক্রেতারা। এই হাটের ক্রেতারা নানা শ্রেণি-পেশা ও বিভিন্ন বয়সী মানুষ।

চমকপ্রদ তথ্য হলো- এই হাট থেকে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে সোনা ও রুপার মতো মূল্যবান কোনোকিছুর প্রয়োজন না। শুধু লাগবে সচল-অচল পুরোনো, ছেড়া নোট কিংবা বিদেশি মুদ্রা।

ঢাকার গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স, হল মার্কেট এবং মতিঝিল এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের উত্তর দিকের সড়কের পাশে নতুন টাকা কেনা-বেচার বাজার বসে। রাস্তায় কিংবা ফুটপাতে ছোট ছোট টেবিল বসিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এসব দোকান।

সোমবার রাজধানীর গুলিস্তান এবং মতিঝিল এলাকা সরেজমিনে ঘুরে এসব চিত্র তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত টাকা কেনা-বেচার দোকানগুলো খোলা থাকে। অনেকেই এ দোকানগুলোতে আসেন টাকা ভাংতি কিংবা বদল করতে। বিনিময়ে কমিশন হিসেবে কিছু টাকা দিতে হয়।

ব্যবসায়ীরা জানান, ১০০ টাকার একটি বান্ডেল নিতে ১০০ টাকা। ২০ টাকার ১০০টি নতুন নোট নিতে ৮০-১০০ টাকা, ৫০ টাকার ১০০টি নতুন নোট নিতে ১০০ টাকা ও ১০০ টাকার ১০০টি নতুন নোট কিনতে ৭০-৮০ টাকা খরচ করতে হয়। আবার কেউ কেউ ২ ও ৫ টাকার নোটের বান্ডেল নিয়ে বসেন। কমিশন নিয়ে বড় নোটের ভাংতি করে দেন।

এর পাশাপাশি ডলার, রিয়াল ও রুপিসহ বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবসাও করছেন তারা। যদিও এ ব্যবসার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। পুরোপুরি অনানুষ্ঠানিকভাবেই চলছে তাদের কার্যক্রম।

দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এই ব্যবসা করছেন জুরাইনের মো. আসলাম (৫০)। তিনি বলেন, দীর্ঘ ব্যবসায়িক জীবনে অনেক চড়াই-উতরাই পার করেছি। সত্যি বলতে, আগের মতো ব্যবসা নেই। কোনো ধর্মীয় উৎসব হলে ব্যবসার গতি কিছুটা বেড়ে যায়। এছাড়া অন্য সময়ে দিন দুইশ থেকে কখনো কখনো হাজার টাকাও মুনাফা হয়। আবার এমনও হয়, কখনো কখনো শূন্য পকেটে ঘরে ফিরতে হয়।

রাজধানীর গুলিস্তানের পাতাল মার্কেটের সামনে টাকার ব্যবসা করেন মোবারক হোসেন (৫৪)। তিনি জানালেন, আমাদের প্রধান ব্যবসা ছেঁড়া টাকার। নতুন নোটগুলো সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য সাজিয়ে রাখি।

নতুন টাকারও চাহিদা আছে। রোজা এবং ঈদে সবাই নতুন নোটগুলো সংগ্রহ করেন। এজন্য হাজার প্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকি। তবে ঈদের সময় ব্যাংক থেকে টাকা বেশি ছাড়লে তখন দাম কিছুটা কম পাওয়া যায় -যোগ করেন মোবারক।

এসব হাটগুলোতে দেশি টাকার পাশাপাশি বিদেশি মুদ্রাও কেনা-বেচা চলছে সমানতালে। গুলিস্তানের হল মার্কেটের সামনে এক দোকানির কাছে চীনের মুদ্রা নিয়ে হাজির হয়েছেন মোজাম্মেল (৩৫)।

তিনি ডেইলি বাংলাদেশ’কে জানালেন, আমি এক হাজার ইয়ান (চীনা মুদ্রা) বিক্রি করলাম, যা থেকে দেড় হাজার টাকা পেয়েছি।

এই মুদ্রাটি কোনো ব্যাংক থেকেও এক্সচেঞ্জ করতে পারতেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল বললেন, হ্যাঁ, সেটা পারতাম। কিন্তু এখানে এসে সহজেই মুদ্রা বিনিময় করেছি।

সূত্র : ডেইলি বাংলাদেশ

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles