10.4 C
Toronto
মঙ্গলবার, মে ৭, ২০২৪

মেডিকেল ভর্তির প্রশ্ন ফাঁস: ইউপি চেয়ারম্যান ও ৫ চিকিৎসকসহ গ্রেপ্তার ৯

মেডিকেল ভর্তির প্রশ্ন ফাঁস: ইউপি চেয়ারম্যান ও ৫ চিকিৎসকসহ গ্রেপ্তার ৯

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং পাঁচ চিকিৎসকসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

- Advertisement -

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩ নং সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন, ডা. ফয়সাল আহমেদ রাসেল, মো. রায়হানুল ইসলাম সোহান, বকুল রায় শ্রাবণ, নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বিটস কোচিংয়ের পরিচালক মো. আবদুল হাফিজ ওরফে হাপ্পু, ডা. মো. সোহানুর রহমান সোহান, ডা. তৌফকিুল হাসান রকি, ডা. ফয়সাল আলম বাদশা এবং ডা. ইবরার আলম।

তাদের কাছ থেকে ৯টি মোবাইল ফোন, ২টি ল্যাপটপ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক ও চেকবই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, চক্রের অন্য সদস্য ও অসাধু উপায়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া অসংখ্যা শিক্ষার্থীর নাম পেয়েছে উল্লেখ করে সিআইডি বলছে, ইতোমধ্যে গ্রেপ্তারকৃতরা মেডিকেল প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সিআইডি জানায়, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূইয়া মুন্নুর কাছে থেকে উদ্ধার হওয়া গোপন ডায়েরি থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা চক্রের সদস্যদের সন্ধান পায় সিআইডি। সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁস চক্রের অন্যতম মূল হোতা সাজ্জাদ হোসেনসহ আরও ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) আজাদ রহমান বলেন, গ্রেপ্তার সাজ্জাদ হোসেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩ নং সিংড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। ২০১০ সাল থেকে তিনি প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত। চক্রটির মাস্টার মাইন্ড জসীমের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। সাজ্জাদ ২০১৭ সালের মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁসের অন্য আরেকটি মামলারও এজাহারনামীয় আসামি। সাজ্জাদ উত্তরবঙ্গের অসংখ্য শিক্ষার্থীকে অনৈতিক উপায়ে মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে কোটি টাকার উপরে আয় করেছেন। আগে গ্রেপ্তার হওয়া একাধিক আসামি ১৬৪ এ সাজ্জাদের নাম বলেছেন এবং জসীমের গোপন ডায়রিতেও তার নাম ও ফোন নাম্বার পাওয়া গেছে।

গ্রেপ্তার আবদুল হাফিজ নীলফামারির সৈয়দপুর উপজেলার বিটস নামক একটি কোচিং সেন্টারের পরিচালক। এছাড়াও তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালের মালিক। গ্রেপ্তার জিল্লুর হাসান রনির মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে তিনি তার কোচিংয়ের শিক্ষার্থীদের অনৈতিক উপায়ে মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন। ইতোমধ্যে তাদের বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে সনাক্ত করেছে সিআইডি।

গ্রেপ্তার সোহানুর রহমান সোহান বিটস কোচিং সেন্টারের পরিচালক আবদুল হাফিজের কাছ থেকে ২০১৩ সালে প্রশ্ন পেয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল ভর্তি হন। পরে বিসিএস স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে পার্বতীপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন।

গ্রেপ্তার ফয়সাল আহমেদ রাসেল চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেনের মাধ্যমে ২০১০ সালে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পেয়ে জাতীয় মেধায় ১১তম স্থান লাভ করেন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এরপর যক্ষা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে দিনাজপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সার্ভেইলান্স মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ফয়সাল পরে প্রশ্নফাঁস ব্যবসার সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন।

গ্রেপ্তার তৌফিকুল ইসলাম রকি আগে গ্রেপ্তার হওয়া জিল্লুর হাসান রনির গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ছিলেন। তারা দুজনই রংপুর মেডিকেল থেকে পাশ করেছেন। সেই সুবাদে প্রশ্নফাঁসের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। রকি বিটস কোচিংয়েও ক্লাস নিতেন। রকি, হাপ্পু এবং রনি মিলে অনৈতিক উপায়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে দেশের বিভিন্ন মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন। রনি তার জবানবন্দীতে রকির কথা বলেছেন।

রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করা গ্রেপ্তার ইবরার আলমও জিল্লুর হাসান রনির সহযোগী ছিলেন। তার কথাও রনি জবানবন্দীতে বলেছেন। ইবরার ২০১৩ এবং ২০১৫ সালের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে রনির মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে অর্থের বিনিময়ে তা সরবরাহ করেছিলেন। এদের অনেকেই বিভিন্ন মেডিকেলে চান্স পেয়েছে।

গ্রেপ্তার রায়হানুল ইসলাম সোহান এবং বকুল রায় শ্রাবণ দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার বাসিন্দা। দুজনই একই স্কুলে পড়ার সুবাদে ঘনিষ্ট ছিলেন। রায়হানুল ২০১৫ সালে তার এক মামার মাধ্যমে মেডিকেলের ফাঁসকৃত প্রশ্ন পান এবং বকুলকে তা সরবরাহ করেন। বকুল তার ৪ ভর্তিচ্ছু ছোট ভাইয়ের কাছে সেই প্রশ্ন বিক্রি করেন। ৪ জনই দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে।

গ্রেপ্তার সাইফুল আলম বাদশা ২০১০ সালে সাজ্জাদ হোসেনের মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এরপর প্রশ্ন ফাঁস ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে তিনি একাধিক শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে মেডিকেল ভর্তি করিয়েছেন।

আজাদ রহমান বলেন, ঘটনার তদন্তসহ চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে সিআইডির অভিযান চলছে।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles