11.1 C
Toronto
শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪

মায়ের কোলে চড়ে কলেজে আসেন সনিয়া

মায়ের কোলে চড়ে কলেজে আসেন সনিয়া
<br >সনিয়া বলেন মায়ের বয়স হয়েছে আমাকে কোলে নিতে তার অনেক কষ্ট হয়

মায়ের কোলে চড়ে প্রতিদিন কলেজে আসেন মোসা. সনিয়া আক্তার। ছবি: দেশ রূপান্তর।
মায়ের কোলে চড়ে প্রতিদিন কলেজে আসেন মোসা. সনিয়া আক্তার। ছবি: দেশ রূপান্তর।
দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় হারিয়েছেন দুই পা। তখন বয়স মাত্র সাত থেকে আট বছর। পায়ের রক্তনালী ব্লক হয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় তীব্র ব্যথা, ফুলে যায় পা। অনেক হাসপাতাল ঘুরে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় অবশেষে চিকিৎসকের পরামর্শে কেটে ফেলে দিতে হয় দুই পা। তখন থেকেই শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন।

তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আটকে রাখতে পারেনি তাকে। তিনি হাঁটছেন জীবন জয়ের পথে। শত বাধা পেরিয়ে তিনি এগিয়েই চলেছেন বিজয়ীর বেশে। কথাগুলো বলা হচ্ছিল ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মোসা. সনিয়া আক্তারের (১৮)। অদম্য সনিয়ার সংগ্রামী জীবনের গল্প এটি।

- Advertisement -

সনিয়ার বাড়ি উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের উজান-চরনওপাড়া গ্রামে। কৃষক বাবা রইছ উদ্দিনের অভাব-অনটনের ঘরে জন্ম তার। অভাব, প্রতিকূলতা আর শত বঞ্চনার মাঝেই তার বেড়ে ওঠা। তবুও হাল ছাড়েননি তিনি।

হামাগুড়ি ও মায়ের কোলে চড়েই এগিয়ে চলেছে তার শিক্ষা জীবন। কৈশোরে মাইলের পর মাইল হেঁটে দূরের গ্রাম থেকে নিয়মিত স্কুলে আসতেন তিনি। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে এখন তিনি স্নাতকে অধ্যয়নরত।

উচাখিলা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও আলীনগর কারিগরি বাণিজ্যিক কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন সনিয়া। দুই ভাই আর চার বোনের মধ্যে সনিয়া তৃতীয়।

মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) মায়ের কোলে চড়ে আসেন ঈশ্বরগঞ্জ সরকার কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের মডেল টেস্ট পরীক্ষা দিতে। সেখানেই কথা হয় তার সঙ্গে।

সনিয়া বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই আমার মা-বাবা কষ্ট করে আমাকে বড় করেছেন। আমি যখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি তখন পায়ের রক্তনালীতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে ইনফেকশন হয়। আমার দুটি পা কেটে ফেলা হয়। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি, পড়াশোনা শেষ করে একটি চাকরি নিয়ে বাবা-মায়ের দুঃখ লাগব করে তাদের মুখ উজ্জ্বল করতে চাই। কিন্তু মায়েরও এখন বয়স হয়েছে, আমিও বড় হয়েছি। তাই আমাকে কোলে নিতে মায়ের এখন অনেক কষ্ট হয়। সরকারি বা কোন বিত্তশীল মানবিক মানুষ যদি আমার দু’টি কৃত্রিম পা লাগিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে আমি আমার স্বপ্ন আরও সহজে পূরণ করতে পারতাম।’

সনিয়ার মা শিউলি বেগম বলেন, মাইয়ারে লইয়া আমি অনেক কষ্ট করছি জীবনে। ওর বাপটাও এখন অসুস্থ। ছোটবেলায় মেয়েটার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা পয়সা খরচ হয়েছে। তখন কত যে না খাইয়া দিন কাডাইছি আমরা- বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

তিনি আরও বলেন, উচ্চ-মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় বাড়ি থেকে দূরে হওয়ায় যেতে হচ্ছে রিকশা বা ইজিবাইক দিয়ে। আর্থিক সমস্যার কারণে সবসময় যাতায়াত ভাড়া না থাকায় আমি কোলে করে ক্লাসে নিয়ে আসি। মেয়ের ইচ্ছা সরকারি চাকরি করার, তাই সরকারের প্রতি তার আকুল আবেদন যেন আমার মেয়েকে একটি সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দেন।

সনিয়ার কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, যে জায়গায় নারীর অধিকার নিয়ে আমাদের আন্দোলন করতে হয়, সে জায়গায় প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল থেকে ওঠে আসা সনিয়া এখন অন্য শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা। মেয়েটার কতো আগ্রহ, দুটি পা না থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত কলেজে আসে। সে হতে পারে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের পরবর্তী দৃষ্টান্ত।

ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন, সনিয়ার অদম্য আগ্রহ দেখে আমরা অভিভূত। আমাদের কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে অনার্স কোর্সটি সম্পন্ন করতে কলেজের পক্ষ থেকে সনিয়াকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে। পড়াশোনা শেষে তার একটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সরকার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সুবিধা দিয়েছেন। কলেজের অধ্যক্ষের সাথে কথা বলে মেয়েটির কোন সুযোগ সুবিধার প্রয়োজন হলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles