20.2 C
Toronto
শনিবার, মে ১৮, ২০২৪

নন্দিতা ও টরন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল

নন্দিতা ও টরন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল

ক’দিন হলো স্বনামধন্য অভিনেত্রী ও পরিচালক নন্দিতা দাসের ৫৪তম জন্মদিন গেলো। সম্ভবত নভেম্বরের সাত। অনেক বছর হয় ২০০৬ কিংবা২০০৭ দিক টরন্টো হার্বারফ্রন্টে লেকের পাশে অভিষেক মাথুর ও তার স্ত্রী ভীষণ জমজমাট সাউথ এশিয়ান কাল্চারাল দুইদিনের মেলা ‘ মাশালা মেহদী মাস্তী’বছরে একবার আয়োজন করতেন। এক সময় অবশ্য এক্সজিবিশান প্লেসের বিরাট গ্রাউন্ডে সিফ্ট হয়ে ছিলো মেলাটি।পরে এই দম্পতীর কর্মসূত্রে ডুবাই চলে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় মাসালা মেহদী মাস্তী। বর্তমনের ‘মোজাইক’নামে মিসিসাগায় হচ্ছে পাকিস্তানী কাডাডিয়ান শিল্পী আসমা মাহমুদের কানাডায় সবচেয়ে বড় সাউথ এশিয়ান কালচারাল দুই দিনের মেলা। সাথে ফিল্ম ফেস্টিভ্যল ও চলে। বলিউড আর্ট ফিল্মের স্টার অভিনেতা বা অভিনেত্রীগণ নিজের অভিনিত সিনেমা নিয়ে আসতেন টরন্টো তখনকার ‘মাশালা মেহদী মাস্তিতে’ এখন আসেন‘মোজাইকে’। তখন আমার শিল্পীবন্ধু মোজাইকের কর্ণধার আসমা মহমুদ ‘মাশালা মেহদী মাস্তি’র সহযোগী ডিরেক্টর পদে ছিলেন। সেবার নন্দিতা দাস এসেছেন তার চারটি অভিনীত সিনেমা নিয়ে। প্রথম দিন ঠিকছিলো পরের দিন হলের টেকনিক্যাল কিছু কারণে সম্ভব হচ্ছিলোনা নন্দিতার ফিল্ম প্রদর্শন।

- Advertisement -

আসমা মাহমুদ ডেকে আমাকে আলাপ করিয়ে দিলো নন্দিতার সঙ্গে। বল্লো- তুমি ফ্রী থকলে নন্দিতাকে নিয়ে ঘুরে ফিরে হার্বারফ্রন্ট,এজিও আশে পাশের আরো কিছু দেখাতে পারবে! আমিতো খুশি প্রিয় অভিনেত্রী তিনি তখনো পরিচালক হননি। তার চেয়ে বড় ব্যাপার তার বাবা ভারত বিখ্যাত আঁকিয়ে যতীন দাসের ছবিও ভীষণ পছন্দ করি আমি,ঢাকার বেঙ্গল গ্যালারীতে আলাপও হয়েছিলো একবার। হার্বারফ্রন্ট ঘুরিয়ে টরন্টো শত বছরের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট বিল্ডিং এর বাইরের খোলামেলা দীগন্তে অন্টারিও লেকের সমুদ্র সেজে লম্ফঝম্ফ নন্দিতার খুব ভালো লাগলো। এর পরেই এজিও আর্ট গ্যালারী অফ অন্টারিওতে নিয়ে গেলাম। অনেক্ষণ ঘুরেঘুরে ছবি দেখা যতটুকু সম্ভব শেষ করে পাশের ছোট মলে কফি খেতে ঢুকলাম। বিশাল গ্যালারীতে অনেক হেঁটে ছবি দেখায় ক্লান্ত। তাই বসে কফিপান প্রায় শেষ হতে বল্লেন- জানো,আজ আমার জন্মদিন।

আমি সাপ্রইস দিতে উঠে কাউন্টার গিয়ে একটি মোমবাতি সহ বেশ বড় কেক কিনলাম,ছোট ছিলোন! সত্যি নন্দিতা সাপ্রাইস- এতবড় কেক কেন?কে খাবে? বল্লাম – কেক কাটেন মোমে ফু দেন। খাওয়া নিয়ে চিন্তার কিছু নেই বাইরে লোক আছে তাকে দেবো বিলিয়ে খাবে। বেরিয়ে ম্যাকনিকাল স্ট্রিটে ডানে দুই কদম বাড়ালেই OCAD ওন্টারিও কলেজ অফ আর্ট এন্ড ডিজাইন ইউনিভার্সিটির গাড়ি পার্কিং এর কোণে ফুটপাথে লম্বা দাড়ি চুলের হোমলেস জন দিনরাত বসে থাকেন তাকে কেক দিলে নেবেন আশেপাশের ওনার মত বন্ধুদের ডেকে খাবেন আর আপনার জন্মদিন সেলিব্রেট করবেন। নন্দিতা খুশি হয়ে বলেন-থ্যঙ্ককিউ।

আমিতো ভাবতাম এরকম লোক শুধু নিউ ইয়র্কে পথে থাকেন! কানাডায় আশা করিনি। আমি বল্লাম –জাগতিক কিংবা অর্থনৈতিক অভাবের চেয়ে মানসিক নিঃসঙ্গতাই এদের বাড়িঘর প্রিয়জন সবাইকে ছাড়তে বাধ্য করেছে,গোটা নর্থ আমরিকায় এনারা আছেন। মনে হয় নন্দিতা একটু উদাস হলেন। বল্লেন আর আজ মেলায় যাবোনা আমার হোটেলেই ড্রপ করে দেন। লবিতে নামতে গিয়ে নন্দিতা আবার ধন্যবাদ জানালেন সব কিছুর জন্যে। দু’পা এগিয়ে আবার ফিরে এসে গাড়ির জানালায় ঝুকে বল্লেন- একটা কথা বলি কিছু মনে করবেন না আশা করি। আজ যতক্ষণ আমার সঙ্গে ছিলেন বেশিরভাগ সময় আমার বাবার কথা,তার আঁকা ছবির কথা বকবক করলেন। আমার ভালো লাগেনি! আমার সঙ্গে ছিলেন যখন আমার কথা বলবেন আমার কাজের কথা বলবেন,তাইনা! বাবার কথা শুনে কি করবো তিনিতো বাবা জানি সব!

এরপর নন্দিতা দাস ঘুরে হোটেলে চলে গেলেন।ঘুরে ও তাকালেন না। আমি গাড়ি স্টার্ট দিতে গিয়েও থেমে গেলাম ভাবলাম আমার মেয়েও এক সময় অভিনেত্রী হিসেবে সুনাম করে ছিলো তাকেকেউ বাবার কথা বল্লে কি এমনটাই রেগে যাবে! হয়তো যাবে কিংবা না! মেয়েরা শিল্পী বাবার ওপর কেন রাগে তাও জানতে হবে। যাক,নন্দিতা দাস প্রিয় অভিনেত্রী এখন প্রিয় পরিচালকও। তার কথা বলে শেষ করি। বলিউড ও দক্ষিণ মিলিয়ে প্রায় ৪০টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। কানাডার পরিচালক দীপা মেহতার বহুল আলোচিত ‘ফায়ার’(১৯৯৬)এ শাবানা আজমীর মত মানুষের সাথে পাল্লা দিয়ে দারুণ অভিনয় করে প্রথম সুনাম করেন।

এরপর একই পরিচালকের ‘আর্থ’ (১৯৯৮) ব্রিটিশ অভিনেতা Linus William Roache ও রাহুল বোসের সঙ্গে ইংরেজী ফিল্ম ‘বিফোর দ্য রেইন’ অভিনয় করে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পান। নন্দিতা দাস পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘ফিরিক। প্রথম প্রদর্শিত হয়েছিলো ২০০৮ টরন্টো আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। তখনও ছবিটি দেখেছি তার প্রেস কনফারেন্সেও ছিলাম।’ পরে আরো ২০টি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ছবিটি দেখানো হয়েছে। জিতেছে ছোট বড় অনেক পুরষ্কার। নন্দিতা দাসকে ২০০৫ এবং ২০১৩ কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল জুরীর সন্মান দিয়েছে। ফরাসী সরকারের গুরত্বপূর্ণ এ্যাওয়ার্ড Chevalier of the Ordre des trts etdes Lettres by the Government of France পেয়েছেন। নন্দিতা দাস ভারতীয় প্রথম নারী যিনি সন্মানিত হয়েছেন ইন্টার্ন্যাশনাল ওমেন ফোরাম এর হল অব ফেইমে।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles