13.5 C
Toronto
সোমবার, মে ৬, ২০২৪

আইডিয়ালের মালার অপকর্মও মেলা

আইডিয়ালের মালার অপকর্মও মেলা
<br >মাকসুদা আক্তার মালা

মাকসুদা আক্তার মালা। একজন বেসরকারি হাইস্কুল শিক্ষক। সামান্য বেতনের চাকরি করে মাত্র ১৩ বছরে এখন তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক। যেন তিনি আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের ছোঁয়া পেয়েছেন। রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সিনিয়র এ শিক্ষকের উত্থান তাঁর সহকর্মীদের কাছেও বিস্ময়ের। চাকরির বাইরে কোচিং সেন্টার ব্যবসার মাধ্যমে বাড়তি আয় শুরু করেন। আরও বেশি অর্থ কামিয়ে নিতে নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সদস্য হন মালা। টানা তিন মেয়াদে থেকে বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হন। সেই সম্পদকে আরও ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলতে যোগ দেন পাবলিক পরীক্ষা ও মেডিকেল ভর্তির প্রশ্নপত্র ফাঁসের চক্রে। এই চক্রের সঙ্গে থেকে নিজের দুই সন্তানকে ভর্তি করিয়েছেন মেডিকেল কলেজে। একই সঙ্গে দুই হাতে অর্থ কামিয়েছেন। অবশ্য শেষ রক্ষা হয়নি। পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) জালে আটকা পড়ে এখন তিনি জেলে।
অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েও তিনি একাধিকবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এসব ঘটনায় তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছিল। তবে প্রভাবশালী হওয়ার কারণে প্রভাব খাটিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন নিজের পক্ষে নিতে সক্ষম হন এ শিক্ষক।

একাধিক সিনিয়র শিক্ষক জানান, মাকসুদা আক্তার মালা ২০১১ সালে সামাজিক বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক হিসেবে স্কুলে যোগ দেন। চাকরির শুরু থেকেই তিনি মতিঝিল, শাজাহানপুর ও সিদ্ধেশ্বরী এলাকার সরকারদলীয় স্থানীয় নেতাকর্মীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। পরে সিদ্ধেশ্বরীতে তিনি কোচিং সেন্টার গড়ে তোলেন। সেই কোচিং সেন্টার ভবনের বাড়িওয়ালার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তিনি সেই বাড়িও দখলের চেষ্টা চালান। এর পর বাড়িওয়ালি আইডিয়াল স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতির কাছে তাঁর স্বামীর সঙ্গে মাকসুদা মালার অনৈতিক সম্পর্কসহ নানা বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। পরিচালনা কমিটির প্রভাবশালী সদস্যদের প্রভাবে মালা তদন্তে বেঁচে যান।

- Advertisement -

সর্বশেষ প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে গত শনিবার রাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। সিআইডির সদস্যরা তাঁকে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে আটক করেন। একই সঙ্গে তাঁর মেয়েকেও আটক করা হয়েছিল, যদিও পরে তাঁকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন ওই শিক্ষককে কারাগারে পাঠান আদালত। মিরপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক আলমগীর হোসেন জানান, পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আইডিয়ালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় মালাকে স্কুল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বিপুল বিত্ত-বৈভব

একাধিক সূত্র জানায়, মালা রাজধানীতে কমপক্ষে ২০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। কুমিল্লার গ্রামের বাড়িতেও ধানি জমি কিনেছেন বিঘার পর বিঘা। সহকর্মীরা জানান, আইডিয়াল স্কুলের প্রাক্তন অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগমের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন তিনি। রাজধানীর আফতাব নগরে তাঁর একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। শাহান আরাও আফতার নগরে ফ্ল্যাট ও ১০ তলা ভবন গড়ে সেখানে সম্প্রতি স্কুল খুলেছেন।

মাকসুদা আক্তার মালার সিদ্ধেশ্বরী এলাকার খন্দকার গলিতে সাততলা বাড়ি এবং আইডিয়ালের সাবেক অধ্যক্ষের হাউজিং প্রতিষ্ঠান ভিশন-৭১-এ একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। রয়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি। মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস করে মেয়ে ইকরাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছিলেন– এমন অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। যদিও পরে মেয়েকে হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। আর ছেলে বর্তমানে একটি বেসরকারি মেডিকেলে পড়ছেন। তাঁর স্বামী আইনজীবী।

নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড

প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষার আয় থেকে মতিঝিল আইডিয়ালের শিক্ষকদের ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বিশেষ ভাতা দেওয়া হতো। এ বছর মালার নেতৃত্বে ও মধ্যস্থতায় গভর্নিং বডির সদস্যরা পুরো টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। শিক্ষকদের কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া এক ছাত্রের বাবার সঙ্গে এই শিক্ষিকার অনৈতিক সম্পর্কের অডিও রেকর্ডও সম্প্রতি ভাইরাল হয়। সূত্র: সমকাল

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles